স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকায় প্রাইভেটকার চাপায় এক দম্পতি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন স্থানীয় এক চা দোকানিও। মাতাল চালকের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। ঘটনার পর দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া প্রাইভেটকার ফেলেই পালিয়ে গেছে চালক ও এর অন্য আরোহীরা। প্রাইভেটকারটি থেকে মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতরা হলেন, আতাউর রহমান (৭০) ও রওশন আরা (৬০)। পুলিশ জানায়, নিহত আতাউর রহমান কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা। তিনি সপরিবারে পূর্ব শেওড়াপাড়ায় ৯২১ হোল্ডিংস্থ নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। কোরবানির গোশত দিতে গত বুধবার ভোরে তিনি স্ত্রীকে সাথে নিয়ে শেওড়াপাড়া থেকে মোহাম্মদপুরে মেয়ের বাসায় যাচ্ছিলেন। শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হাজী আশরাফ আলী মার্কেটের সামনের ফুটপাতে তারা রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় বেপরোয়া গতির প্রাইভেট কার (নং-ঢাকা মেট্রো-গ ২১৮৫৭১) ওই দম্পতিকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে আবেদ আলী (৬০) নামের এক পান দোকানদার আহত হন।
জানা গেছে, প্রাইভেটকারটির মালিক আশিকুর রহমান খান নামের এক ব্যক্তি। তবে ঘটনার সময় গাড়িতে ছিলেন তার ছেলে নাসিফ খান ওরফে অনি। এ সময় ওই প্রাইভেটকারে আরো ছিলেন নাসিফের কয়েকজন বন্ধু। গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ার পর নাসিফ তার শাহীনবাগের বাসায় ফেরেন। ঘণ্টা দুয়েক পর মা-বাবার সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাড়ি ছাড়েন তিনি।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করছে না পুলিশ। স্থানীয়দের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পর ওই প্রাইভেটকার থেকে তিন যুবককে আটক করেও পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। তবে পুলিশ বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তদন্তে অগ্রগতির খবরও জানেন না আতাউর রহমানের ছেলে রায়হান। কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম শিকদার বলেন, আমরা সবকিছুরই সন্ধান পেয়েছি। এখন অভিযুক্তদের গ্রেফতারের অপেক্ষায়। তদন্তের স্বার্থে এর চেয়ে কিছু বলা যাবে না।
বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, যে প্রাইভেট কারের চাপায় দু’জন মারা গেছেন, এটি ২০০৮ সালে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। এরপর লিখিতভাবে দু’বার মালিকানা পরিবর্তন হয় গাড়িটির। সবশেষ মালিক ছিলেন হাসান হায়দার। রেজিস্ট্রেশন-প্রক্রিয়া শেষ না হলেও তার কাছ থেকে গাড়িটি নাঈম নামের এক ব্যক্তি কেনেন। যিনি পুরোনো গাড়ি কেনাবেচার ব্যবসা করেন। হাসান হায়দার বলেন, নাইমের কাছ থেকে গাড়িটি কেনেন আশিকুর রহমান খান। যিনি পেশায় একজন ঠিকাদার। তার পরিচয়পত্রটি প্রাইভেট কারের ভেতর পাওয়া গেছে। গাড়িটির ভেতর থেকে মদের বোতলও উদ্ধার করা হয়। কোরবানির ঈদের দিন রাত দেড়টার দিকে নাসিফ তার এক বন্ধুর সঙ্গে গাড়িটি নিয়ে বের হন। এরপর গাড়ি ছাড়াই বসায় ফিরে আসেন।
নিহত আতাউরের ছোট মেয়ের জামাই মহসিন হোসেন বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে পদ্মা সেতু এলাকায় ঘুরতে যাওয়ার কথা। মেয়ের বাসা থেকে রওনা দেবেন বলে ফজরের নামাজ পড়েই মোহাম্মদপুরের উদ্দেশে দু’জনে রওনা দেন। শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে ফুটপাতের ওপরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ৬০ ফুট চওড়া রাস্তা ছেড়ে সেখানে এসে গাড়িটা ধাক্কা দেয়। পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আতাউর রহমান ও তার স্ত্রী রওশন আরার লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে।
এদিকে একই ঘটনায় আহত আবেদ আলীর মেজ ছেলে আসাদুল ইসলাম বলেন, বাবার একটা হাত ভেঙে গেছে। দাঁত ভাঙছে। মাথার খুলিও ভাঙছে। অনেক রক্ত ঝরছে। আসাদুল জানান, তার বাবা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ভোরে তিনি পরিচ্ছন্নতা কাজ করছিলেন। এ ছাড়া তার বাবার শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে একটি পানের দোকান আছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাজীপাড়ার দিক থেকে প্রাইভেটকারটি আসছিল। ওই গাড়িতে তিন যুবক ছিলেন। তারা মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। গাড়ির ভেতর থেকে মদের একটি অক্ষত বোতল এবং কয়েকটি ভাঙাচোরা বোতল পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কাফরুল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।
দক্ষিণখানে গৃহবধূকে হত্যা
এদিকে গত বুধবার ভোরে দক্ষিণখান থানাধীন দক্ষিণ গাওয়াইল এলাকার নিজ বাসা থেকে নাছিমা আক্তার পলি (২৬) নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ লুৎফর রহমান জানান, নিহতের স্বামীর নাম জাহাঙ্গীর হোসেন। গত বছর দু’জনের বিয়ে হয়। নিহত গৃহবধূ পলিকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর থেকে জাহাঙ্গীর পলাতক রয়েছেন। নিহত পলির লাশ ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
দুই লঞ্চের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত
সদরঘাটে দুই লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুরুতর আহত এক ব্যক্তিকে (৩২) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
সদরঘাট টার্মিনাল নৌপুলিশ জানায়, গতকাল সকাল ৮টার দিকে বরিশাল থেকে আসা লঞ্চ কর্ণফুলী-৯ টার্মিনালে পৌঁছানোর পর আরেক লঞ্চ এমভি শ্রীনগর-৭-কে ধাক্কা দেয়। এ সময় অনেকেই আহত হন। এর মধ্যে ছয়জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর মধ্যে একজন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। বাকিদের হাত-পা, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে।
সায়েদাবাদে যুবকের আত্মহত্যা
রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় সাইফ উদ্দিন (৩০) নামে এক ব্যক্তি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। মুমূর্ষু অবস্থায় বুধবার বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহতের বড় ভাই সিরাজ উদ্দিন বলেন, প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরে সাইফ ফের বিয়ে করেন। চার-পাঁচ মাস আগে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গেও তার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। দ্বিতীয় স্ত্রীকে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে মোটরসাইকেলে ঘুরতে দেখে সাইফ খুব কষ্ট পায়। তাকে বোঝাতে চেষ্টা করি, বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর তিনি যার সঙ্গে ইচ্ছা ঘুরতে পারেন। তারপরও অভিমানে সাইফ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে দড়ি পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। সবগুলো ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন