সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কক্সবাজার এখন লাখো পর্যটকে ভরপুর

প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস : ঈদুল আজহার ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত ও দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার এখন ভরপুর লাখো পর্যটকে। ঈদের প্রথম এবং দ্বিতীয় দিন স্থানীয়দের ভিড় থাকলেও গতকাল বিকাল থেকে নানা বয়সী পর্যটকদের ঢল নামে কক্সবাজারের সমুদ্র তীরসহ প্রতিটি পর্যটন স্পটে। এখন নানা বয়সী পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত কক্সবাজার। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় আনন্দের জোয়ারে মেতে উঠেছে কক্সবাজর সৈকতে ভ্রমণ পিয়াসুরা। ঈদের দিন সকাল থেকে সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলী ও শৈবাল পয়েন্টে গা ভাসিয়ে বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতেছেন তারা। একইভাবে শহর থেকে দূরে হিমছড়ি ও ইনানী সৈকতেও বিস্তৃত হয়েছে পর্যটকদের পদচারণা। আর পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে, গত ঈদুল ফিতরের মতো কোরবানির ঈদেও কক্সবাজারের বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের আগমনের ফলে সমুদ্র সৈকত ও বিপনী কেন্দ্রেগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ব্যবসায়ীদের যেন দম ফেরার ফুরসত নেই। হোটেল-মোটেলের প্রায় সবকক্ষ আগাম বুকিং হয়েছে রোববার পর্যন্ত। ঈদের ছুটিতে প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক আসায় জেলার পর্যটন স্পটগুলো প্রতিবারের মতো এবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এছাড়া সমুদ্র শান্ত থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন জলপথে পর্যটকবাহী জাহাজগুলো চলাচল শুরু হয়েছে।
সরেজমিন পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে জানা গেছে, এবারের ঈদুল আজাহার টানা ছুটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে কক্সবাজারে বেড়াতে আসছেন পর্যটকরা। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের পরে বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে পর্যটকদের ঢল। ব্যক্তিগত গাড়ি ও বিভিন্ন সার্ভিস বাসে করে লাখো পর্যটক আসছেন কক্সবাজারে। কোরবানির ছুটির বন্ধের আরাম-আয়েশ বাদ দিয়ে ব্যবসায়ীরাও পার করছেন কর্মব্যন্ত সময়। হোটেল-মোটেল গেস্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, ঈদুল আজহার ছুটিতে লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। শহরের হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসগুলোর ৭০ শতাংশ কক্ষ আগাম ভাড়া হয়ে যায়। আগামী রোববার পর্যন্ত কক্সবাজার শহর ও শহরতলীর হোটেল-মোটেলের কোনো কক্ষ খালি নেই বললেই চলে। একই কথা জানান, তারকা হোটেল সী-গালের নির্বাহী পরিচালক আরেফিন সিদ্দিকী রুমী।
ট্যুর অপারেটরদের মতে, এবার কোরবানি ঈদের ছুটিতে প্রচুর সংখ্যক পর্যটক এসেছেন কক্সবাজারে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও শহর ও পার্শ্ববর্তী পর্যটন স্পট বিশেষ করে সেন্টমার্টিন, হিমছড়ী ঝর্ণা, দরিয়ানগর, ইনানী, টেকনাফ, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে গত ২ দিন ধরে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। আদিনাথ মন্দির, শহরের অ¹ মেধা ক্যাং এবং রামুর বৌদ্ধ মন্দিরসহ ধর্মীয় তীর্থস্থানগুলোতেও পর্যটকরা ভ্রমণ করছেন।
কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী বার্মিজ মার্কেট ও হোটেল-মোটেল জোনের শুটকী মার্কেটগুলোতে লেগেই আছে পর্যটকদের ভিড়। প্রচুর পর্যটকের আগমনে শহরের ইজিবাইকগুলো দেদারছে রোজগার করছে। একইভাবে কক্সবাজার-ঢাকা বাস সার্ভিসগুলো পর্যটকের চাপ সামাল দিতে চালু করেছে অতিরিক্ত বাস।
এদিকে বুধবার সকাল ও দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কয়েকটি পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে ছোট-বড় সব বয়সের প্রচুর পর্যটক বিস্তীর্ণ সৈকতে ছুটে বেড়াচ্ছে। শত শত পর্যটক সাগরের লোনা পানিতে গোসল করে তৃপ্তি অর্জন করছেন। অনেকেই হিমছড়ী ও ইনানীসহ শহরের কয়েকটি পর্যটন স্পট ভ্রমণ শেষে বিকালে সমুদ্র সৈকতে এসেছেন। বর্ষা শেষ তবে সমুদ্র কিছুটা উত্তাল থাকলেও কক্সবাজার ভ্রমণ তাদের কাছে বেশ উপভোগ্য বলেই মনে হচ্ছে।
কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের স্নানকালে নিরাপত্তার কাজ করছে ইয়াছিন লাইফ গার্ডের ৫, রবি লাইফ গার্ডের ১৫, সী-সেইভ লাইফ গার্ডের ২৫ ও জেলা প্রশাসনের ৫ জন লাইফ গার্ড। সংশ্লিষ্টদের সতর্কতার কারণে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেনি।
ইয়াসির লাইফগার্ড স্টেশনের পরিচালক মোস্তফা কামাল জানান, লাবনী পয়েন্ট ছাড়া ১২০ কিলোমিটার সৈকতের অন্য কোথাও গোসলে নামা নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। গোসলে নামার আগে পর্যটকদের জোয়ার-ভাটার সময় দেখে নেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, জোয়ারের সময় সৈকতে সবুজ পতাকা ওড়ানো থাকে। তখন সৈকতে নামা যায়। ভাটার সময় ওড়ানো থাকে লাল নিশানা। তখন সমুদ্রে নামা বিপজ্জনক।
জানা গেছে, পর্যটকদের নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য রেখে সৈকতে পুলিশের টহলও বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া র‌্যাব এবং সাদা পোশাকের পুলিশও দায়িত্ব পালন করছে। আরো জানা গেছে, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ইতোমধ্যে ৭টি পর্যটন স্পটে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এসব পয়েন্টে ১৩৬ জন ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। ঈদের পরদিন টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। পর্যটকেরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, এর জন্য টেকনাফের দমদমিয়ার জেটিঘাটে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানান, কক্সবাজার থেকে ইনানী সৈকত পর্যন্ত সব স্পটেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাতের বেলায় হোটেল ও গেস্টহাউসগুলো পুলিশের নজরদারিতে থাকবে। সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় টুুরিস্ট পুলিশ ও টহল পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কক্সবাজারে এসে পর্যটকরা যাতে বিড়ম্বনার শিকার না হন এবং হোটেল রেস্টুরেন্টগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে সেজন্য ৪ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিশেষ টিমও গঠন করা হয়েছে। তা ছাড়া শহরের হোটেল-মোটেল রেস্তোরাঁ ও যানবাহনসহ রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রোধে মূল্য তালিকা টানিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ruma ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১:৩০ পিএম says : 0
i love cox bazar
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন