বিশেষ সংবাদদাতা, যশোর : যশোরের চৌগাছার আ.লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম হত্যা রহস্য মাত্র ১৫ দিনে উদঘাটন করেছে পুলিশ। একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আ.লীগ নেতা শাহীনুর রহমানের নেতৃত্বে তাকে খুন করা হয়।
যশোরের পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, হত্যাকাÐের রহস্য উদঘাটন হয়েছে। কারা কিভাবে হত্যা করেছে সব তথ্য আমাদের হাতে। এখন খুনীদের আটকের পালা। আদালতে এক আসামীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে যে, চাঞ্চল্যকর হত্যাকাÐে শ্যামলি নামে কলেজপড়ুয়া এক সুন্দরী তরুণীকে ব্যবহার করা হয়। ওই তরুণীর দখল নিয়ে দুই চেয়ারম্যানের লড়াইয়ে জীবন যায় আবুল কাশেমের। নিহত আবুল কাশেম চৌগাছার পাশাপোল ইউপি’র সর্বশেষ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আ.লীগ নেতা শাহীনুর রহমান খুনের নেতৃত্ব দেন।
জানা যায়, দরিদ্র পরিবারের তরুণী শ্যামলী সাবেক চেয়ারম্যান শাহীনের দ্বিতীয় স্ত্রী। তবে বিষয়টি গোপন ছিল। একই সঙ্গে শ্যামলী চেয়ারম্যান কাশেমের নিকট প্রতিবেশী এবং দূর সম্পর্কের আত্মীয়া। সেই সূত্রে দুইজনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল বলে ধারণা প্রতিবেশীদের। গত ৩১ আগস্ট খুন হন চৌগাছার পাশাপোল ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম। তাকে হত্যা করা হয় যশোর শহরের মুজিব সড়কে অবস্থিত মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কোয়ার্টারে। কাশেম হত্যায় যুক্ত সন্দেহে পুলিশের হাতে আটক দুই নারী-পুরুষকে গত রবিবার যশোরের আদালতে হাজির করে পুলিশ। সেখানে তারা কাশেম হত্যায় নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে খুনের বর্ণনা দেন। পুলিশ জানায়, আটক কলেজছাত্রী শ্যামলী ও মোশারফ হোসেন নামে দুইজনকে গত রবিবার বিকেলে যশোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মৃত্যুঞ্জয় মিস্ত্রির আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে তারা দÐবিধির ১৬৪ ধারামতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
শ্যামলী চৌগাছার রঘুনাথপুর গ্রামের ফজলুর রহমানের মেয়ে। মোশারফ হোসেন মণিরামপুরের শ্যামকুড় ইউনিয়নের আবুল কাশেমের ছেলে। বর্তমানে তিনি যশোরে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের স্টাফ কোয়ার্টারে থাকেন। আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শ্যামলী যশোর সরকারি এমএম কলেজে লেখাপড়া করেন। থাকেন কলেজের আসাদ গেটের পাশে ‘তারা মেস’-এ। ২০১৪ সালে গোপনে তার বিয়ে হয় শাহীনের সঙ্গে। শাহীনের প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করেন। জবানবন্দি দেওয়া মোশারফের স্ত্রী, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চাকরি করেন। তিনি এক সময় চৌগাছায় চাকরি করেছেন। সে সময় মোশারফের সঙ্গে শাহীনের পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে শাহীন দ্বিতীয় স্ত্রী শ্যামলীকে নিয়ে মাঝে মধ্যে যশোরের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কোয়ার্টারে সময় কাটাতেন।
সূত্র মতে, নিহত চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের নিকট-প্রতিবেশী ও দূর সম্পর্কের আত্মীয়া শ্যামলী। কাশেমের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল বলে প্রতিবেশীরা ধারণা করেন। তবে তিনি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে দাবি করেছেন, কাশেম চেয়ারম্যান তাকে মোবাইল ফোনে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতেন। তার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিতেন।
শ্যামলীর জবানবন্দিতে বলা হয়, কাশেম চেয়ারম্যানের কুপ্রস্তাবের কথা শ্যামলী তার গোপন স্বামী শাহীনকে জানান। এতে শাহীন ক্ষিপ্ত হন। এক সময় শ্যামলী মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। কিন্তু তিনি শাহীনের স্ত্রী এই কথা কাউকে বলতে পারেন না। ফলে কাশেম আরো সুযোগ নিতে থাকেন। তিনি যশোরে এসে শ্যামলীকে খুঁজে বের করে তাকে নতুন একটি মোবাইল ফোন কিনে দেন। ওই মোবাইল ফোনে যে সিম কার্ড রয়েছে সেটিও কাশেমের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। শাহীনও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য শ্যামলীকে চাপে রাখেন। গত ৩১ আগস্ট বিকেলে কাশেম চৌগাছা থেকে যশোর শহরে আসেন। শহরের দড়াটানায় পৌঁছানোর পর তিনি ফোন করেন শ্যামলীকে। শ্যামলী সন্ধ্যার দিকে নিজে দড়াটানায় এসে কাশেমকে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কোয়ার্টারে নিয়ে যান। যেখানে শাহীনের সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছেন শ্যামলী। সে সময় কোয়ার্টারে মোশারফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তার স্ত্রীর ছিল নাইট ডিউটি। এ সময় শ্যামলী ঘরে কাশেমকে নিয়ে ঢোকেন। ঘরে ঢোকার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে শাহীন অজ্ঞাত দুই যুবককে সঙ্গে নিয়ে সেখানে হাজির হন। এ সময় শাহীনের সঙ্গে কাশেমের তর্কবিতর্ক ও ধস্তাধস্তি হয়। তখন শ্যামলী সেখান থেকে বের হয়ে যান। এরপর কী হয়েছে তা তিনি জানেন না বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন।
আটক মোশারফ জানিয়েছেন, ওই কোয়ার্টারে কাশেম ও শাহীনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। কিছু সময় পর বিছানাচাদরে জড়িয়ে এক ব্যক্তিকে একটি কালো রঙের থ্রি-হুইলারে করে নিয়ে যাওয়া হয়। আর কিছুই জানেন না তিনি। দুইদিন পর গণমাধ্যমে তিনি জানতে পারেন ওই লাশটি পাশাপোল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানের। যাকে হত্যা করা হয় তারই সরকারি কোয়ার্টারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন