১৩. মিথ্যা কথা ও খারাপ কাজ পরিহার করা : সিয়াম সাধনার অন্যতম দাবী হলো যাবতীয় মিথ্যা কথা, খারাপ কাজ ও আচরন পরিহার করে চলা। যেমন- রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখলো; কিন্তু অশ্লীল কথা ও কাজ পরিহার করলো না, তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই” (সহীহুল বুখারী)।
১৪. ই‘তিকাফ করা : ই‘তিকাফ অর্থ অবস্থান করা। ইসলামের পরিভাষায়- স্বাভাবিক জীবন থেকে পৃথক হয়ে সিয়াম, সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, দু’আ, ইসতিগফার, জিকর ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্য লাভের জন্য রমাদানের শেষ দশকে ই‘তিকাফের নিয়্যাতে মসজিদে অবস্থান করা।উম্মুল মু’মিনিন হযরত আয়শা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূল (সা.) তাঁর ইস্তিকাল পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন”।
১৫. লাইলাতুল কদর তালাশ করা : রমাদান মাসে এমন একটি মহিমান্বিত রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তা’আলার ভাষায়:‘‘কদরের রজনী হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ’’ (সূরা কদর)। এ রাত পাওয়াটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়।রাসূল (সা.) বলেন: ‘‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর পালন করবে তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ (সহীহুল বুখারী)। এ জন্য নবী (সা.) ইরশাদ করেন: “তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ কর” (মুত্তাফাকুন আলাইহ)। অন্য হাদীসে রাসূল (সা.) লাইলাতুল কদর পাওয়াকে আরো সহজ করে বলেন: “তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ কর” (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)। লাইলাতুল কদরের দু’আর বিষয়ে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা -রাদিয়াল্লাহু আনহা- নবী (সা.) কে জিজ্ঞেস করলে জবাবে তিনি বলেন:‘‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করুন” (সুনানুত তিরমিযী)।
১৬. রমাদানের শেষ দশককে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া : রমাদানের শেষ দশকের বিশেষ ফজীলত রয়েছে। তাই রাসূল (সা.) শেষ দশকের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: ‘‘যখন রমাদানের শেষ দশক উপনীত হতো তখন তিনি (রাসূল সা.) ইবাদতের মাত্রা আরো বৃদ্ধি করে দিতেন, রাত্রি জাগরন করতেন এবং পরিবারের সদস্যদের জাগিয়ে দিতেন” (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)। অন্য হাদীসে হযরত আয়েশা -রাদিয়াল্লাহু আনহা- বলেন: ‘‘রাসূল (সা.) অন্য সময়ের তুলনায় রমদানের শেষ দশকে ইবাদতে অধিক পরিশ্রম করতেন’’ (সহীহ মুসলিম)।
১৭. তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা : নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার জন্য তাওবার কোন বিকল্প নেই।তাওবাহ করলে আল্লাহ খুশী হন। কুরআনুল কারীমের ভাষায়: ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর, খালেস তাওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত’’ (সূরা আত-তাহরীম:৮)। ইহার গুরুত্ব প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেন: ‘‘হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো এবং ক্ষমা প্রার্থনা করো।কেননা আমি আল্লাহর নিকট দৈনিক একশতবার তাওবা করি এবং ক্ষমা প্রার্থনা করি” (সহীহ মুসলিম ও মুসনাদ আহমাদ)। প্রিয় নবী (সা.) মাসুম হওয়া সত্বেও তাঁর উম্মাতের প্রশিক্ষণের জন্য করণীয় বুঝিয়ে দিয়েছেন।
১৮.আল্লাহর জিকর করা : মহান রাব্বুল আলামীন চান বান্দা তাঁকে বেশি বেশি ডাকুক, তাঁকে ডাকলে তিনি খুশী হন এবং সাড়া দেন। আল্লাহ তা’আলার ভাষায়: “তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব, আর তোমরা আমার নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা পোষণ করো, অকৃতজ্ঞ হয়োনা” (সূরা আল-বাক্বারা:১৫২)। এ মাসে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করা ও তাসবীহ পাঠ করা উচিত। বুখারী শরীফের সর্বশেষ হাদীসে এভাবে এসেছে: হযরত আবু হুরাইরা (রা.) রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:‘দু’টি বাক্য উচ্চারণে সহজ, সওয়াবের দিক দিয়ে খুব ভারী এবং দয়াময়ের নিকট অত্যন্ত প্রিয় তাহলো: সুবহানাল্লাহি ওয়া বেহামদিহি ও সুবহানাল্লাহিল আজিম’।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন