শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মাদারীপুরের ২৪ যুবক লিবিয়ায় বন্দি

ভিডিও পাঠিয়ে টাকা দাবি

স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২১, ১২:০৪ এএম

গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে চিহ্নিত করে দালালচক্র বিভিন্ন দেশে মোটা বেতনে চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রতারণা করে আসছে দিনের পর দিন। অনেককে জীবন দিতে হচ্ছে অথই সমুদ্রে কিংবা মাফিয়াদের হাতে, কেউ কেউ কাটাচ্ছেন বন্দী জীবন, নির্যাতনের শিকারও হচ্ছেন অনেকে। দালালের খপ্পরে পড়া মাদারীপুরের এ রকম ২৪ জন যুবক লিবিয়ায় মাফিয়াদের কাছে বন্দী জীবন কাটাচ্ছে। মাফিয়ারা তাদের নির্যাতন করে সে সব ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে লাখ লাখ টাকা দাবি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। গত বুধবার এমনই এক ভিডিও সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওতে যাকে দেখা যাচ্ছে তার নাম জনি মিয়া। তার সাথে রয়েছে হিফজু হাওলাদার, এই দুজনের বাড়ি চাষার গ্রামে। এছাড়া তাদের সাথে আরো রয়েছেন মো. আশাদুল খান, মো. জাহিদুল ইসলাম তাদের বাড়ি ধুরাইল ইউনিয়ন সরদার কান্দী গ্রামে। বাকি ১৯ জনের বাড়ি মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। মাফিয়ারা পিটিয়ে তাদের পরিবারের কাছে বলতে বাধ্য করছে, টাকা না দিলে তাদের মেরে ফেলা হবে। এতে পরিবারের লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার চাষার গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ খান ইউছুফ এলাকার পরিচিত দালাল। ৪ থেকে ৫ বছর ধরে তিনি মানবপাচারের সঙ্গে যুক্ত। তার মাধ্যমে প্রায় ৩০০ যুবক লিবিয়ার পথে পাড়ি জমিয়েছেন।

যার বেশিরভাগ সাগর পথ পাড়ি দিয়ে ইতালি গিয়েছে। এসব লোকজন পাঠাতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করে। জাহিদ খানের কাজ হলো মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের সংগ্রহ করা।
তারা অভিযোগ করেন, জাহিদ খানের সঙ্গে প্রত্যেকের সাথে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার চুক্তি হয়। রুট হিসেবে তারা ব্যবহার করেছেন ঢাকা টু লিবিয়া তারপর সেখান থেকে গেম করে ইতালি। জাহিদ খানের মাধ্যমে মাদারীপুরের যে লোকজন লিবিয়া গেছেন তাদের অনেকে এখনো ইতালি যেতে পারেনি। তারা লিবিয়ার বিভিন্ন শহরে অবস্থান করছেন। সর্বশেষ তার মাধ্যমে যাওয়া ২৪ জন যুবক লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে আটক রয়েছে। এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তাকে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে পারছে না। মাফিয়ার কাছে আটক হিফজু হাওলাদারের বাবা হাবু হাওলাদার জানান, গত সোমবার তারা ভিডিওটি পেলেও ছেলের ক্ষতি হবে এই ভয়ে কাউকে জানায়নি। তিনি আরো জানান, আমি আমার ছেলেকে জাহিদ খান ইউছুফের মাধ্যমে দুই মাস আগে ইতালির উদ্দেশে লিবিয়া পাঠাই। তার সাথে আমার ৮ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। ২ লাখ টাকা আমি ইতোমধ্যে তার কাছে দিয়েছি। বাকি টাকা লিবিয়া যাওয়ার পর দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত সোমবার জানতে পারি আমার ছেলেসহ মোট ২৪ জন লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে আটকা রয়েছে। আমি আমার ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় দেখতে চাই। এ ব্যাপারে জাহিদ খান আমাকে বলেছে, আমি আপনার ছেলেকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করব। মানবপাচারকারী জাহিদ খান ইউসুফ মোবাইলে অভিযোগের বিষয়ে বলেন, আমি কোনো লোক পাঠায়নি। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মজিবর রহমান মৃধা জানান, আমি জাহিদকে চিনি। তবে, সে মানবপাচারের সাথে জড়িত তা জানা ছিল না। আমার ইউনিয়নের কিছু লোকসহ মাদারীপুরের ২৪ জন লিবিয়ায় মাফিয়ার কাছে বন্দী থাকার বিষয়েও আমি অবগত না। মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমরা এই সংবাদটি শুনেছি। আমি তদন্ত অফিসারকে চাষার গ্রামে পাঠিয়েছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন