টানা ছুটির জেরে পণ্য ডেলিভারি হ্রাস
শফিউল আলম : চট্টগ্রাম বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে পণ্য বোঝাই কন্টেইনারের জট। ঈদ উল আযহার টানা ছুটির রেশ এখনও বজায় থাকার কারণে বন্দরে সার্বিকভাবে পণ্যসামগ্রী ডেলিভারি অনেক কমে গেছে। এতে করে কন্টেইনার জটের সাথে জাহাজের জটেরও আলামত দেখা দিয়েছে। গত ঈদুল ফিতরের মতো এবার ঈদুল আযহার ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্দরে জটের জের না কাটতেই গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় ঈদুল আযহার টানা এক সপ্তাহের ছুটি। তখন থেকেই বন্দরে আমদানি ও রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রী জাহাজীকরণ, খালাস, ডেলিভারি পরিবহনের স্বাভাবিক কর্মকা- অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে।
বন্দর চালু থাকলেও বন্দর-শিপিংয়ের ওপর নির্ভরশীল বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখনও খোলেনি। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে। ঈদের আগে ও পরে মহাসড়কসমূহে ট্রাক-লরি ও কাভার্ডভ্যানের মতো ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবং ঈদের ছুটি সপ্তাহ দীর্ঘ হওয়ার ফলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যসামগ্রী খালাস করে নেননি অধিকাংশ ব্যবসায়ী, কনসাইনি ও আমদানি-রফতানিকারক। এতে করে বন্দরে বেড়েছে কন্টেইনারের জট। বন্দর ছাড়াও বেসরকারি আইসিডিগুলোতে (অফডক) পণ্য তথা কন্টেইনারের জট সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সরকারি-বেসরকারি শিপিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঈদের আমেজ চলতে থাকায় কাজের গতি থমকে গেছে।
এদিকে দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দরের কন্টেইনার ইয়ার্ড ও টার্মিনালগুলোতে ইতোমধ্যেই অতিক্রম করে গেছে কন্টেইনারের ধারণক্ষমতা। চট্টগ্রাম বন্দরে স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ৩৬ হাজার ৩৫৭ টিইইউএস (২০ ফুট একক ইউনিট হিসাবে) কন্টেইনারের। সেখানে গতকাল (শুক্রবার) পর্যন্ত কন্টেইনারের মজুদ জমে উঠেছে ৩৭ হাজার ৯৮৪ টিইইউএস। স্বাভাবিক গতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে দৈনিক গড়ে সাড়ে ৪ হাজার টিইইউএস পণ্য বোঝাই কন্টেইনার খালাস হওয়ার কথা। কিন্তু গত ৩ দিনে খালাস করা সম্ভব হয়েছে দৈনিক গড়ে সাড়ে ৩শ’ টিইইউএস কন্টেইনার।
এ অবস্থায় বন্দরের বহির্নোঙরে সৃষ্টি হচ্ছে জাহাজের জট। বহির্নোঙরে বিভিন্ন ধরনের আমদানিকৃত পণ্য, শিল্প কাঁচামাল নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছে ৩৭টি জাহাজের সুদীর্ঘ বহর। এর মধ্যে রয়েছে সার বোঝাই ৫টি জাহাজ, সিমেন্ট ক্লিংকার বোঝাই ১২টি, চিনি বোঝাই ৩টি জাহাজ, লবণ বোঝাই ২টি জাহাজ, সাধারণ পণ্য বোঝাই জাহাজ ৯টি, খাদ্যপণ্য বোঝাই ৬টি জাহাজ ছিল পণ্য খালাসের অপেক্ষায়। ঈদের দিন নামাজের জন্য মাত্র ৮ ঘণ্টা বন্দর কার্যক্রম বন্ধ থাকে। কিন্তু এবার ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকেই কন্টেইনার জটের জের চলে আসছিল। যা এখন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিগত দুই মাস ধরে প্রতিকূল আবহাওয়া, ঘন ঘন সাগর উত্তাল, প্রবল সামুদ্রিক জোয়ার, দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ায় সতর্ক সংকেত, অতিবর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে ও বহির্নোঙরে পণ্যসামগ্রী খালাস, ডেলিভারি পরিবহন ব্যাহত হয়। বৈরী আবহাওয়ার রেশ না থাকতেই ঈদের টানা এক সপ্তাহের ছুটির ফাঁদে পড়ে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর। এ সময় বেসরকারি অফডকে কন্টেইনারের জট সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ঈদের টানা ছুটির সময় বন্দরে স্বাভাবিক কাজ বজায় থাকলে কন্টেইনার ও কার্গোজট কিংবা জাহাজজট সমস্যার আশংকা নেই। প্রতিদিন বন্দরে গড়ে এক হাজারের বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ও ডেলিভারি বজায় থাকবে। বন্দর কার্যক্রম পুরোদমে চালুর ঘোষণা থাকলেও বন্দর, বন্দর-নির্ভর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ঈদের আমেজে এখনও ফাঁকা রয়েছে। সাধারণ বন্দর ডক ও মার্চেন্ট শ্রমিক-কর্মচারীরা ঈদ করতে গিয়ে অনেকেই নিজেদের গ্রামের বাড়িঘরে অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় টানা ছুটির ফাঁদে ব্যাপক কার্গোজটের মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। আমদানিকৃত ও রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রী ভর্তি ও খালি কন্টেইনারসহ সাধারণ খোলা (ব্রেক বাল্ক) পণ্য এবং কন্টেইনারের জট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পণ্যজটের নেতিবাচক প্রভাবে জাহাজ জটেরও আলামত দেখা দিয়েছে।
কন্টেইনার খালাসে সহসা জোরদার পদক্ষেপ নেয়া না হলে বন্দর কার্যক্রম আরও স্থবির হয়ে পড়তে পারে বলে বন্দর ব্যবহারকারীরা আশংকা ব্যক্ত করেছেন। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বন্দরে জট আর বাড়বে না বলে মনে করে কর্তৃপক্ষ সূত্র।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন