শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সউদী মোয়াল্লিমের দুর্নীতিতে হাজীদের দুর্ভোগ চরমে

প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পুরনো গাড়িতে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন : তাঁবুতে অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের খাবার সরবরাহ
স্টাফ রিপোর্টার : এবার সউদী মোয়াল্লিমের বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করেছে বাংলাদেশী হজ এজেন্সিগুলো। সউদী মোয়াল্লিমের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে মিনা, আরাফায় ও মুজদালিফায় বাংলাদেশী হাজীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বাংলাদেশী হাজীদের মিনা ও আরাফায় পরিবহনে আসনের দ্বিগুণ হাজী পরিবহন, পুরনো এসিবিহীন বাসে যাত্রী পরিবহন, মিনা ও আরাফার তাঁবুতে অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, হাজীদের সাথে মোয়াল্লিমের লোকদের দুর্ব্যবহার এমনকি হাজীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার মতো ঘটনারও অভিযোগ করেছে এজেন্সিগুলো।
বৃহস্পতিবার মক্কাস্থ একটি হোটেলে হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) উদ্যোগে হজ পরবর্তী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন এজেন্সির স্বত্বাধিকারীরা এসব অভিযোগ উত্থাপন করেন। মক্কা থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। মক্কায় হাবের অনুষ্ঠানে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও ধর্মসচিব মো: আব্দুল জলিল উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিমান ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের ফিরতি হজ ফ্লাইট আজ থেকে শুরু হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ধর্মসচিব আব্দুল জলিল এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়ার জন্য এজেন্সিগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এসব অভিযোগ সউদী কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। সউদী মোয়াসস্সা অফিসেও মোয়াল্লেমের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুযোগ রয়েছে। তবে এজেন্সিগুলো তাদের ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক দিক চিন্তা করে এভাবে সরাসরি অভিযোগ করতে আগ্রহী নন বলেন অনেকে জানিয়েছেন।
হাবের মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে হজ পরবর্তী পুনর্মিলনীতে এজেন্সিগুলোর অভিযোগ করে সউদী মোয়াল্লিমরা অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ হিসেবে নির্ধারিত টাকার চেয়েও হাজী প্রতি এক থেকে দেড়শ’ সউদী রিয়াল নেয়ার পরও বাংলাদেশী হাজীদের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছে। মিনায় হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে একই বাসে গাদাগাদি করে দ্বিগুণ হাজী উঠিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি অনেক মোয়াল্লেম নন-এসি পুরনো গাড়িতে বাংলাদেশী হাজীদের পরিবহন করেছে। এতে হাজীদের প্রচ- গরমে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এছাড়া এজেন্সিগুলোকে মিনায় যাত্রী পরিবহনের জন্য মোয়াল্লেম অফিসে গিয়ে বাসের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে দেন-দরবার করতে হয়েছে। আরাফার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া আরাফায় বাংলাদেশী হাজীদের জন্য অস্থায়ী তাঁবুও নিম্নমানের দেয়া হয় এবং তাঁবুর মাঝখানে ফাঁকা জায়গা রাখা হয়নি বললেই চলে। এদিকে মিনা ও আরাফার তাঁবুতে একেবারেই নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে মোয়াল্লেম। যার দুইশ’জন হাজী ছিল তার জন্য একশ’ প্যাকেট খাবার দেয়। সরকারি হাজীদের ক্ষেত্রেও পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন ধর্মসচিব আব্দুল জলিল। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দেন।
একটি এজেন্সির মালিক জানান, ৮৮ নং মোয়াল্লেমের তাঁবুতে হাজীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার মতো ঘটনা ঘটেছে। ওই মোয়াল্লেম ও তার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশী হজযাত্রীদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেছেন। যা ইতোপূর্বে কখনো ঘটেনি। এভাবে আরো বেশ কয়েকটি মোয়াল্লেমের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন এজেন্সি মালিকরা।
হাবের মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহ এসব ব্যাপারে ধর্মমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সউদী মোয়াল্লেমদের এই অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার ব্যাপারে অবশ্যই সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সউদী কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। একই তাঁবুতে অবস্থানরত অন্যদেশের হাজীদের তুলনায় বাংলাদেশের হাজীদের সাথে এই ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ মেনে নেয়া যায় না।
এদিকে তিনি হজ এজেন্সিগুলোর হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা ৫০ জন বহাল রাখার দাবি জানিয়ে হাবের মহাসচিব বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের এজেন্সিগুলোর জন্য হজযাত্রীর কোটা ৫০ জন বহাল থাকলেও বাংলাদেশের জন্য এই বছর থেকে সর্বনিম্ন ১৫০ জন কোটা নির্ধারণ করা হয়। ফলে এতে লিড এজেন্সির মাধ্যমে অনেক এজেন্সিকে হজযাত্রীদের আনতে হয়েছে। এতে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। তিনি আগামীতে হজযাত্রী পরিবহনে থার্ড ক্যারিয়ার চালুর দাবি জানান। এছাড়া কোন এজেন্সির বিরুদ্ধে হাজীর অভিযোগ না থাকলে শুধু পরিদর্শনের ভিত্তিতে কোন এজেন্সিকে অভিযুক্ত না করার অনুরোধ জানান হাবের মহাসচিব। মদীনায় বাড়ি পরিদর্শনের নামে হযরানির অভিযোগের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাক প্রত্যাহার করায় ধর্মসচিবকে ধন্যবাদ জানান হাবের মহাসচিব।
ধর্মসচিব বলেন, অন্যান্য দেশের সর্বনিম্ন কোটা ৫০ জন বহাল থাকলে আমরাও আগামীতে সেটা বহাল রাখার জন্য দরকষাকষি করবো। থার্ড ক্যারিয়ার চালুর বিষয়টি হজ চুক্তির সাথে সম্পর্কিত বলে তিনি জানান। এছাড়া ৪৩টি এজেন্সিকে তালিকাভুক্ত করার খবর সম্পর্কে সচিব কিছুই জানেন না বলে জানান। মদীনায় বাড়ি পরিদর্শনে হয়রানির অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অনুষ্ঠানে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সততার সাথে হজযাত্রীদের সেবায় কাজ করার জন্য এজেন্সিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। এ বছরের হজের ব্যবস্থাপনা এ পর্যন্ত ভালোভাবে সম্পন্ন হওয়ায় এজেন্সিগুলোকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
হাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন কামাল ও ইসি সদস্য সোলায়মানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: শহীদুজ্জামান, আমীর হোসেন এমপি, কাউন্সিলর (হজ) মাকসুদুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন হাবের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল কবির খান জামান, হাবের অথর্-সম্পাদক ফজলুল ওহাব মামুন, ইসি সদস্য এনএইচ এম খাদেম দুলাল, তাজুল ইসলাম আশরাফী, আবু সালেহ রাজিব জাভেদ প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন