যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে গতকাল রোববার দিবাগত রাতে সারা দেশে পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর পালিত হয়েছে। হাজার মাস ইবাদত অপেক্ষা উত্তম করে আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরকে সম্মানিত করেছেন। গত রাতেই খতমে তারাবি শেষ হয়েছে। এ উপলক্ষে খতমে কোরআনকে কেন্দ্র করে মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। বিগত দিনের সকল প্রকার গুনাহখাতা মাফ করোনা মহামারি থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় মসজিদে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিল ও মোনাজাতে মুসল্লিদের মাঝে কান্নাররোল পড়ে যায়। মুসলমানদের কাছে শবে কদর অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি রাত। মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে সওয়াব হাসিল ও গুনাহ মাফের রাত হিসেবে শবে কদরের ফজিলত অতুলনীয়।
লাইলাতুল কদরের পুণ্যময় রজনীতে মসজিদে মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। উদ্দেশ্য একটাই ইবাদতের মাধ্যমে এই রাতকে জাগিয়ে রাখা। মসজিদের পাশাপাশি বাসা-বাড়িতেও প্রস্তুতি ছিল কদরের রাতকে সফল করার। এ উপলক্ষে গতকাল রাতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পেশ ইমাম মাওলানা মুহিব উল্লাহিল বাকি ও মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন। তারা করোনা মহামারি থেকে মুক্তি এবং দেশ জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করেন।
রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্সে কদর রজনীতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ, করোনা মহামারি থেকে মুক্তি এবং দেশ জাতি মুসলিম উম্মাহর শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, বেশি বেশি নফল নামাজ, জিকির-তাসবিহ এবং চোখের পানি ঝরিয়ে ইবাদতের মাধ্যমে কাটিয়েছেন রাতটি। অনেকে কবরস্থানে গিয়ে আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করে দোয়ায় অংশ নেন। মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিবরা লাইলাতুল কদরের ফজিলত সর্ম্পকেও গুরুত্বপূর্ণ বয়ান রাখেন। মুসলিম জনগোষ্ঠী ফজরের নামাজের পর সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভ এবং করোনা মহামারি থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বিশেষ প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করে দেশ জাতি এবং মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন।
পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল হয় এই রাতে এবং ‘আল-কদর’ নামে একটি সুরা অবতীর্ণ করা হয় এই রাতে। তাই শবেকদরের রাতটিতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহপাকের ক্ষমা প্রার্থনা ও পুণ্য লাভের আশায় অতিবাহিত করেন।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের আগে ও পরে সংক্ষিপ্ত ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন ছিল। শবে কদর উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানান। ঢাকার ডেমরার ঐতিহ্যবাহী দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা মো.মনিরুল ইসলাম গতকাল তারাবির আগে পবিত্র লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। খতিব তারাবি শেষে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া পরিচালনা করেন। মোনাজাতে তিন করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি , দেশ জাতির কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করেন।
এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করে। রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরকে তালাশের কথা বলেছেন। সে মতে ২৯ রমজানের রাতও শবে কদর তালাশের রাত। পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে আজ সোমবার সরকারি ছুটি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন