মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
॥ শেষ কিস্তি ॥
জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের দোয়া : আল্লাহতায়ালা কোরআন মজিদে ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আকাশম-লী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে জ্ঞানী লোকদের জন্য। জ্ঞানী তারাই যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় এক কাথায় সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশম-লী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে এবং যারা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেÑ ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি এই সব বস্তু অনর্থক সৃষ্টি করেছেন। আপনি এই সব বস্তু অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র। আপনি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি কাউকেও অগ্নিতে নিক্ষেপ করলে তাকে তো নিশ্চয় লাঞ্ছিত করলেন এবং জালিমদের রব, আমরা এক আহ্বানকারীকে ঈমানের দিকে এ আহ্বান করতে শুনেছি যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আন। সুতরাং আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব, আপনি আমাদের পাপ ক্ষমা করুন, আমাদের মন্দ কার্যগুলো দূরীভূত করুন এবং আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের সহগামী করে মৃত্যু দান করুন। ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা’ হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার রাসূলদের মাধ্যমে আমাদেরকে যে সওয়াব ও জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা আমাদেরকে দিন এবং কিয়ামতে দিন আমাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন না। নিশ্চয় আপনি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।’ Ñআলে ইমরান ১৯১-১৯৪। আল্লাহপাক এসব জ্ঞানী লোকের প্রার্থনার সাড়া দেন। তিনি তখন বলেন, আমি তোমাদের মধ্যে কর্মে বিনষ্ট কোনো নর অথবা নারীর কর্ম বিফল করি না। মোনাজাতের এ আয়াত দুটি পাঠ করার অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষরাতে এই আয়াতগুলো পাঠ করতেন। যেমন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের তৃতীয় প্রহরে শয্যা ত্যাগ করে আকাশের দিকে দৃষ্টি উত্তোলন করে এ আয়াতগুলো পাঠ করেন। অতঃপর ভালোভাবে অজু করে তাহাজ্জুদ আদায় করেন। Ñসহিহ বুখারি
পিতামাতার জন্য দোয়া : আল্লাহতায়ালা হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লামের সব উম্মতকে পিতামাতার জন্য দোয়া করতে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে হুকুম দিয়েছেন, সবাই যেন পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে। আল্লাহতায়ালা আরও বলেছেন, পিতামাতার উভয়ে বা কোনো একজন বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তি, উপেক্ষা, অবজ্ঞা, ক্রোধ ও ঘৃণাসূচক কোনো কথা বলা যাবে না এবং তাদেরকে ধমক দেওয়া যাবে না। তাদের সঙ্গে সর্বদা সম্মানসূচক নম্র কথা বলতে হবে। আল্লাহতায়ালা মমতাবেশে নম্রতার পক্ষপুট অবনমতি করবে এবং সর্বদা তাদের জন্য আল্লাহপাকের নিকট এই প্রার্থনা করবে। ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমার পিতামাতার প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন। Ñবনী ইসরাইল ২৪, এরূপ গুরুত্বসহকারে মাতাপিতার খেদমত ও তাদের জন্য দোয়া করার নির্দেশ থাকার কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়কে বা কোনো একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পাওয়ার পর তাদের খেদমত করে জান্নাত লাভ করতে পারল না, সে অভিশয় হতভাগা।- মুসনাদে আহমদ
হিজরতের দোয়া : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত প্রাপ্তির পর তের বছর মক্কায় অবস্থান করেন। তিনি আল্লাহপাকের হুকুমে আউয়াল মাসের শুরুর দিকে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। হিজরতের পূর্ব মুহূর্তে আল্লাহপাক তাকে এ প্রার্থনা করতে বলেনÑ ‘হে আমার পালনকর্তা, আমাকে দাখিল করুন কল্যাণের সঙ্গে এবং আমাকে নিষ্ক্রান্ত করবেন কল্যাণের সঙ্গে এবং আপনার নিকট থেকে আমাকে দান করুন সাহায্যকারী শক্তি।’ Ñসূরা বনী ইসরাইল ৮০
আল্লাহ মাহাত্ম্য বর্ণনা : আল্লাহতায়ালা সূরা বনী ইসরাঈলের সর্বশেষ আয়াতে সব মুুমিনকে আরও একটি দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছেÑ ‘বল সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই, যিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেন না, তাঁর রাজত্বে কোনো অংশীদার নেই এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তার অভিভাবক প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং সসম্ভ্রমে তার মাহাত্ম্য ঘোষণা কর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন