ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে নিহত দুঃসাহসী কাশ্মীরি নেতা বুরহান ওয়ানির পথ ধরে আবার জোরদার স্বাধীনতা আন্দোলনের ডাক শোনা যাচ্ছে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ভূখ-ে। এই ডাক প্রশাসনের মুখোমুখি লড়াইয়ের ডাক। প্রয়োজনে সশস্ত্র সংগ্রাম করতে হবে। কাশ্মীরি যুবকদের বিক্ষোভে শামিল করতে এমন আহ্বান জানানো হচ্ছে ভিডিওবার্তায়। এই বার্তায় এমন হুঁশিয়ারিও রয়েছে, ভুল করেও যেন কোনো কাশ্মীরি সেনা বা পুলিশে যোগ না দেয়। দিলেই বিপদ। ভূস্বর্গ বলে খ্যাত ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে ভাইরাল এই ভিডিওবার্তার প্রেরক হিজবুল মুজাহিদিন-এর নতুন নেতা সবজার অহমেদ বাট। হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির বন্ধু এই সবজারই এখন হিজবুলের নতুন পোস্টার বয়। এক বুরহান ওয়ানির মৃত্যুতে ৭০ দিন ধরে জ্বলছে কাশ্মীর। তারই মধ্যে ভারতীয় প্রশাসনের চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে সবজার আহমেদের ক্ষমতায়ন। বুরহানের মতো দক্ষিণ কাশ্মীরের বাসিন্দা সবজার বয়সে তরুণ। যাকে আপাতত বুরহানের স্থলাভিষিক্ত করেছে হিজবুল নেতৃত্ব। দায়িত্ব পেয়েই সংগঠন মজবুত করতে নেমে পড়েছেন তিনি। একটি ভিডিওবার্তায় তরুণদের জিহাদে নামার আহ্বান জানিয়েছেন সবজার, যা এখন কাশ্মীরের কিশোর-তরুণদের মোবাইলে ঘুরছে। সবজার ছাড়াও সক্রিয় রয়েছেন বুরহানের ঘনিষ্ঠ আরেক নেতা জাকির রশিদ বাট। উচ্চ শিক্ষিত ওই নেতার আরেকটি ভিডিওবার্তাও এখন কাশ্মীর উপত্যকায় ঘুরছে।
সম্প্রতি কাশ্মীরে স্পেশাল পুলিশ অফিসার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল রাজ্য প্রশাসন। ভিডিওতে রাজ্য পুলিশে যোগ দিতে যুবকদের নিষেধ করা হয়েছে। স্বাধীনতাকামী নেতারা জানিয়েছে, পুলিশে নিয়োগের আসল লক্ষ্য ইখওয়ানি (আত্মসমর্পণ করা, ধরা পড়া, সংগঠন ছেড়ে আসা প্রাক্তন যোদ্ধাদের নিয়ে তৈরি দল। যারা স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে) তৈরি করা, যাতে কাশ্মীরি যুবকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। ভিডিওতে স্পষ্ট হুমকি রয়েছে, যারা পুলিশে যোগ দেবে তারা নিজেদের মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে, কাশ্মীরি নেতাদের এই হুমকিতে বেশ ভালমতোই কাজ হয়েছে। কেননা, পুলিশে নিয়োগে যে পরিমাণ আবেদন আশা করা হয়েছিল কাজের ক্ষেত্রে ততোটা জমা পড়েনি।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সবজার আহমেদ ও জাকির রশিদ গত দুই মাসে দক্ষিণ কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় কিশোর-তরুণদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য এই নেতারা প্রকাশ্যেই এমন তৎপরতা চালাচ্ছেন। ভরতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগ মনে করে, কাশ্মীরের এই নেতাদের প্রভাবেই স্বাধীনতাকামীদের দলে যোগ দিতে ঘর ছেড়েছে দেড় শতাধিক কাশ্মীরি যুবক। তারা পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলে তাদের দাবি।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, সবজার ও জাকির দুই হিজবুল নেতাই সীমান্ত পার হয়ে পাকিস্তানে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তবে সবজারকেই এক নম্বরে জায়গা দিয়েছে নয়াদিল্লি। দক্ষিণ কাশ্মীরের রুথসুনা এলাকার এই যুবক বছর পাঁচেক আগে স্বাধীনতাকামীদের দলে যোগ দেন। বাড়ি কাছাকাছি হওয়ায় বুরহানই সবজারকে দলে টেনে আনেন। অন্য দিকে, জাকির রশিদ বাটের বাড়ি কাশ্মীরের নুরপুরা এলাকায়। স্বাধীনতাকামীদের দলে যোগ দেয়ার আগে তার নাম ছিল মেহমুদ গজনভি। চ-ীগড়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই ছাত্র ২০১৩ সালে ছুটিতে বাড়ি ফিরে আসেন। তারপর কলেজে ফিরে না গিয়ে স্বাধীনতাকামীদের দলে যোগ দেন। উচ্চশিক্ষিত হিজবুল নেতা এখন ভারতীয় প্রশাসনের কঠিন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ভারতীয় গোয়েন্দাদের মতে, দুই হিজবুল নেতার ভিডিওগুলোর বক্তব্য মোটামুটি একই রকম। কাশ্মীরি যুবকদের স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে এর মাধ্যমে। সূত্র : ওয়েবসাইট, এবিপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন