মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
॥ দুই ॥
ক’দিন পরপরই মৃদু কম্পনে সারাদেশ কম্পিত হয়ে উঠছে। এইতো গত ৪ জানুয়ারি ভোর ৫টা ৫ মিনিটের দিকেও ঢাকাসহ সারাদেশেই এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ৬ দশমিক ৮ এবং উৎপত্তি স্থল ভারতের মনিপুর। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে সারাদেশের মানুষ। ঘুম থেকে ভূকম্পন অনুভূত হবার পর লোকজন দিগ¦বিদিক ছুটাছুটি করতে শুরু করে। রাজধানীবাসীর বেশিরভাগই বাসার ছাদে কিংবা রাস্তায় নেমে যায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে। সিদ্ধার্থ সিধু নামে এক সাংবাদিক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘পুরো ভবনটাই কাঁপছিল, ভয়াবহ এক অনুভূতি’। প্রথমে মনে করেছিলাম আমি নিজেই মনে হয় পা নাড়াচ্ছি। কিন্তু ক্রমশ কম্পন এতো বেশি হতে লাগলো যে, আশপাশে মানুষ চিৎকার করা শুরু করেছে। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলো বড় একটা কম্পন আসার আগে সতর্ককারী কম্পন।
মহান আল্লাহ তার বান্দাদের সতর্ক করেন যাতে করে তারা অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর পথে ফিরে আসে। কেন এত ভূমিকম্প সংগঠিত হয়? এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায়- সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এবং শান্তি বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের, তাঁর পরিবারের উপর, তাঁর সাহাবাদের উপর এবং তাদের উপর যারা তাদের অনুসরণ করেন। মহান আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, তাঁর ইচ্ছা এবং তিনি যা কিছু প্রেরণ করবেন সে সকল বিষয়ে তিনিই সবকিছু জানেন এবং তিনি সর্বাধিক জ্ঞানী এবং সর্বাধিক অবহিত তাঁর আইন-কানুন ও আদেশ সম্পর্কে।
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে সতর্ক করার জন্য বিভিন্ন প্রকারের নিদর্শন সৃষ্টি করেন এবং বান্দার উপর প্রেরণ করেন যাতে করে তারা মহান আল্লাহ কর্তৃক তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন ও ভীত হয়। বান্দারা মহান আল্লাহর সাথে যা শিরক করে (অর্থাৎ, ইবাদত করার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সাথে অংশিদারিত্ব করে) এবং তিনি যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি এই নিদর্শনসমূহ প্রেরণ করেন যাতে করে তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে, তাদের বোধোদয় হয় এবং তাদের রবের দিকেই একনিষ্ঠভাবে ইবাদত করে।
মহান আল্লাহ বলেন : “(আসলে) আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনসমূহ পাঠাই” (সূরা ইসরা : ৫৯) “অচিরেই আমি আমার (কুদরতের) নিদর্শনসমূহ দিগন্ত বলয়ে প্রদর্শন করবো এবং তাদের নিজেদের মধ্যেও (তা আমি দেখিয়ে দিবো), যতোক্ষণ পর্যন্ত তাদের উপর এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এই (কুরআনই মূলত) সত্য; একথা কি যথেষ্ট নয় যে, তোমার মালিক সবকিছু সম্পর্কে অবহিত?” (সূরা হা-মীম আস সিজদা : ৫৩) “বল : আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর, তোমাদের উপর থেকে (আসমান থেকে) অথবা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম, অথবা তিনি তোমাদের দল-উপদলে বিভক্ত করে একদলকে আরেক দলের শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাতেও সম্পূর্ণরূপে সক্ষম।” (সূরা আল আনআম : ৬৫)
আল-বুখারী তার সহীহ বর্ণনায় জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন : যখন “তোমাদের উপর থেকে (আসমান থেকে)” নাযিল হলো তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “আমি তোমার সম্মুখ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”, অথবা যখন, “অথবা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম” নাজিল হলো, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : “আমি তোমার সম্মুখ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”। (সহীহ আল বুখারী, ৫/১৯৩)
আবূল-শায়খ আল-ইস্পাহানি এই আয়াতের তাফসিরে বর্ণনা করেন, “বল : আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর, তোমাদের উপর থেকে (আসমান থেকে)” যার ব্যাখ্যা হলো, তীব্র শব্দ, পাথর অথবা ঝড়ো হাওয়া; “অথবা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম”, যার ব্যাখ্যা হলো, ভূমিকম্প এবং ভূমি ধসের মাধ্যমে পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঢুকে যাওয়া। নিঃসন্দেহে বর্তমানে যে সকল ভূমিকম্পগুলো ঘটছে তা মহান আল্লাহর প্রেরিত সতর্ককারী নিদর্শনগুলোর একটি যা দিয়ে তিনি তাঁর বান্দাহদের ভয় দেখিয়ে থাকেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন