পুলিশের কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ : ২৪ ঘন্টায় গ্রেফতার ৫৪
ইনকিলাব ডেস্ক
ভারতীয় কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে র্ছরা গুলিতে ঝাঁঝরা এক স্কুল ছাত্রের জানাযায় যোগদানকারী হাজার হাজার মানুষের ওপর কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনী। কারফিউ উপেক্ষা করে গতকাল হাজার মানুষ জানাযায় শরিক হয় এবং লাশ নিয়ে মিছিল করে। এর আগে গত শুক্রবার শাফি নামের স্কুল ছাত্রের লাশ শ্রীনগরের হার্ভেন এলাকায় পাবার পর কাশ্মীর জুড়ে কারফিউ জারি করে প্রশাসন। গত ২৪ ঘন্টায় কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদের মধ্যে ৩ জনকে ভারতীয় কঠোর পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট পিএসএ’র অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন, তালোরার বশির আহমেদ সোফি ও তারিক আহমেদ এবং সারিচের আশিক হুসাইন আখুন। গত মাসে এই কঠোর অ্যাক্টের আওতায় ৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
কারফিউ জারির সাথে সাথে কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেটের ব্যবহার সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেয়। তবে কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে, গতরাত থেকে ইন্টারনেট সংযোগ পুনঃস্থাপিত হয়েছে। সংযোগ বন্ধ থাকায় ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে এ খাতে লগ্নিকারীরা লাখ লাখ রুপি ক্ষতির মধ্যে পড়ে যান।
কাশ্মীরের সাংবাদিক খালিদ গুল জানিয়েছেন, দক্ষিণ কাশ্মীরের শোফিয়ান জেলায় গতকাল স্বাধীনতাকামীদের একটি বিক্ষোভ সমাবেশ ভ-ুল করে দিয়েছে সরকারিবাহিনী। এতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও সংবাদদাতারা জানান, জেলার চকোরা ও হারমাইন গ্রামে বিক্ষোভের চেষ্টা করলে র্ছরা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তা ভ-ুল করে দেয় নিরাপত্তাবাহিনী। বিক্ষোভ দমনে সরকার বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললেও নিরাপত্তাবাহিনী এখনও পর্যন্ত স্বাধীনতাকামী বিক্ষোভকারীদের ওপর র্ছরা গুলি ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে।
শ্রীনগর থেকে সংবাদদাতা বলছেন, জুলাই মাসে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পর কারফিউ জারি এবং একই সাথে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া ছিল এ পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর বিধিনিষেধ। স্বাধীনতাকামী এক আন্দোলনকারীকে নিরাপত্তাবাহিনী হত্যা করার পর ভারতীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ৯ জুলাই থেকে রাস্তাঘাটে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, কারফিউ অমান্য করে নিহত কিশোর নাসির শফির জানাযায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। এরপরই পুলিশ শোকার্তদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। মুসলিম প্রধান এই শহর জুড়ে চলাচল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ছাড়া আর সব মোবাইল নেটওয়ার্ক সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা সহিংসতায় ৮০ জনের বেশি লোক মারা গেছে, যাদের অধিকাংশই সরকার-বিরোধী বিক্ষোভকারী। ঈদুল আযহার দিন শ্রীনগরে সামরিকবাহিনী কুচকাওয়াজ করলে শহরে উত্তেজনা তৈরি হয়।
এদিকে নাগরিক আন্দোলনকারী খুররম পারভেজ যিনি জেনেভায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দেওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন তার যাওয়া বন্ধ করে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে দু’দিন আগে এবং তাকে এখন শ্রীনগরের বাইরে একটি কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
প্রেস কাউন্সিলের হস্তক্ষেপ চান সাংবাদিকরা
এদিকে কাশ্মীরে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমেও ওপর আরোপিত অলিখিত বাধা তুলে নেবার প্রেস কাউন্সিলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে কাশ্মীরের সাংবাদিকদের ৪টি সংগঠন। মোবাইল টেলিফোনি ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধের মাধ্যমে গত ১২ জুলাইয়ের পর থেকে সাংবাদিকদের ওপর এ অলিখিত বাধা আরোপ করা হয়েছে। গতকাল কাশ্মীর ভিত্তিক সাংবাদিকরা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, এ ধরনের বাধা তথ্য অধিকার ও বাক স্বাধীনতার মারাত্মক লঙ্ঘন। ইন্টারনেট সেবা বন্ধের মাধ্যমে সাংবাদিকদের একেবারে কর্মহীন করে ফেলা হয়েছে বলে তারা দাবি করেন। সূত্র : বিবিসি ও গ্রেটার কাশ্মীর। (এ সংক্রান্ত আরো খবর পৃষ্ঠা ৬)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন