চট্টগ্রাম ব্যুরো : ‘স্বামীর খুনি’ সাজাতে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাসমিন খাদিজা সোনিয়া নামে এক শিক্ষানবিশ আইনজীবী। গতকাল (সোমবার) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেড় মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে এ অভিযোগ করেন তিনি।
সোনিয়ার স্বামী মো. ওবায়দুল হক (৩৬) গত বছরের ২৬ জুন ঢাকার কলাবাগান থানার নর্থ সার্কুলার রোডে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার খাজা রোডের মোহাম্মদ হাসানের ছেলে ওবায়দুল চাকরি সূত্রে স্ত্রীসহ ঢাকায় থাকতেন। ওবায়দুল বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ভাতিজা।
চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকা-ের তদন্ত নিয়ে ইতোমধ্যে পুলিশ নানা নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্ত্রী সোনিয়া। ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের শেষবর্ষের ছাত্রী সোনিয়া জানান, স্বামী যখন খুন হন তখন তিনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। হত্যাকা-ের পর সোনিয়া নগরীর আলকরণে তার বাবার বাসায় চলে যান। সেখানে গিয়ে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের দারোগা দিপক কুমার বসু হত্যাকা-ের বিষয়ে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কয়েকদিন পর তাকে গ্রেফতার করে তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
সোনিয়া বলেন, রিমান্ডে পুলিশ আমাকে বারবার শারীরিক ও মানসিক চাপ প্রয়োগ করে। আমাকে বলেছিল, আমি যেন স্বীকার করি রুবেল নামে আমার এক সহপাঠীর সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক আছে। এই হত্যাকা-ে আমি জড়িত সেটা যেন আমি বলি, সেজন্য আমাকে চাপ দেয়া হয়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় দুই মাস হাজতবাসের পর হাইকোর্ট আমাকে জামিন দেন। ডেফোডিল ইউনিভার্সিটিতে এলএলএম ক্লাস করার সময় রুবেল নামে এক ছেলের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। মাঝে মাঝে লেখাপড়ার বিভিন্ন বিষয় আমি তার কাছ থেকে জেনে নিতাম। এর বাইরে আমাদের মধ্যে আর কোন সম্পর্ক ছিল না।
সোনিয়া অভিযোগ করেন, ওবায়দুলের মৃত্যুর পর তার বড় ভাই শেখ আহম্মদ এবং ফুফাতো ভাই নেছার আহমেদ সোনিয়াদের বাসায় গিয়ে গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ফেলার জন্য চাপ দেন। তিনি জানান, ওবায়দুল ছিল তাদের চার ভাইয়ের মধ্যে সম্পূর্ণ আলাদা। তার তিন ভাই তাদের পৈতৃক বাড়ি দখল করে রেখেছিল। এজন্য সামাজিকভাবে বিয়ের পরও ওবায়দুল স্ত্রীকে পৈতৃক বাড়িতে না তুলে নগরীর নাসিরাবাদে ভাড়া বাসায় তুলেছিল। ওবায়দুলের টাকা-পয়সা ছিল, নিজের সম্পদও ছিল। সেজন্য তার উত্তরাধিকারকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করেন সোনিয়া। তবে এই হত্যাকা-ের সঙ্গে কার জড়িত, কেন এই হত্যাকা- ঘটেছে সে বিষয়ে কিছুই ধারণা করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন সোনিয়া।
তিনি বলেন, গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে না পেরে আমার ভাসুর শেখ আহম্মদ ডিবি পুলিশ দিয়ে আমাকে গ্রেফতার করিয়েছেন। তিনি আমার কাবিননামা লুকিয়ে ফেলেছেন। আমার স্বর্ণালংকার, টাকা-পয়সা, ব্যাংকের বই সবকিছু তিনি নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, পুলিশ যে রুবেল হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত বলছে তাকেও গ্রেফতার করেনি। এখনও মূল খুনিদের না ধরে তড়িঘড়ি করে আমাকে জড়িয়ে অভিযোগপত্র দেয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে সোনিয়ার বাবা-মাসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন