শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস : পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিশেষ নজর দিয়েছে সরকার। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি নিজেই নজরদারি করছেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে সংসদীয় কমিটিতে ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ বিল চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। খুব শিগগিরই সংসদে উত্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।
কক্সবাজারকে একটি পরিকল্পিত নগরী করতে সরকার ইতোমধ্যেই শুরু করেছে ২৫টির মতো মেগা প্রকল্পের। এদিকে ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ বিল সংসদীয় কমিটিতে অনুমোদন হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে কক্সবাজারে চলছে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা। পাশাপাশি আলোচনায় আসছে Ñ কে হচ্ছেন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বা প্রশাসক। বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, কক্সবাজারকে ঘিরে সরকারের মহাপরিকল্পনা ত্বরান্বিত করার জন্য কক্সবাজার থেকে একজন টেকনোক্রেট মন্ত্রীও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এনিয়ে ইতোমধ্যেই দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে সরকার দলের নেতাদের মাঝে। এই দৌড়ের মধ্যে রয়েছেন, কক্সবাজার সদর-রামুর এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়ার এমপি আশেকুল্লাহ রফিক, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও সিআইপি সালাহ উদ্দিন আহমদ এবং সাবেক কক্সবাজার পৌর চেয়ারম্যান নুরুল আবছার। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর হাতে বলেই জানা গেছে।
পরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে কক্সবাজারকে আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এ-সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল-২০১৬’-এর প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে দশম জাতীয় সংসদের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১১তম বৈঠকে এটি চূড়ান্ত করা হয়।
এর আগে গত বছরের শেষ অধিবেশনে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল।
বিলে বলা হয়েছে, আইনটি কার্যকর হওয়ার পর কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। এই কর্তৃপক্ষের সদস্য হবেন ১৫ জন। এদের চারজন হবেন পূর্ণকালীন, আর ১১ জন খ-কালীন। একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পূর্ণকালীন সদস্যদের মধ্যে একজন প্রশাসন ও অর্থ, একজন প্রকৌশল এবং একজন পরিকল্পনা বিভাগ দেখবেন। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে থাকবেন ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, স্থাপত্য অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তর, কক্সবাজার শিল্প ও বণিক সমিতির প্রতিনিধিরা।
সদস্য হিসেবে আরো থাকবেন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র। এ ছাড়া তিনজন বিশিষ্ট নাগরিকও কর্তৃপক্ষের খ-কালীন সদস্য হিসেবে থাকবেন, যার মধ্যে একজন হবেন নারী। একটি পরিকল্পিত পর্যটন নগরী গড়ে তোলার জন্য এই কর্তৃপক্ষ দেখেশুনে অনুমতি দেবে, অনুমতি দেওয়ার পর তারা অনুমতি বাতিলও করতে পারবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যম-িত পর্যটননগরী কক্সবাজার এরই মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে বহুল পরিচিতি লাভ করেছে। একটি আধুনিক ও উন্নতমানের পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কক্সবাজারের আবাসন, হোটেল, মোটেল, রাস্তাসহ অন্যান্য সব নাগরিক ও পর্যটন সুবিধা পরিকল্পিতভাবে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
এ ছাড়া কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষণ ও কক্সবাজারকে পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা প্রয়োজন।
কমিটির সভাপতি মো. দবিরুল ইসলাম বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার, এ কে এম ফজলুল হক ও মো. আবু জাহির এতে অংশ নেন। এ ছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবছার প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কক্সবাজার উন্নয়নের জন্য এটি যথাযথ। তবে কাজ বিভাজনের উপর এর সফলতা অনেকটা নির্ভর করবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, বহু আকাক্সিক্ষত এ বিল মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন পাওয়ায় কক্সবাজারবাসী আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন