সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। এসময় দেশের সকল কারাবন্দীদেরও তারা মুক্তির দাবি জানান। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ন্যাশনাল সলিডারিটি ফর ফ্রি প্যালেস্টাইন’ এর উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। আলোচনা সভায় বিশিষ্ট নাগরিক, রাজনৈতিক ব্যক্তি, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, সাবেক সচিব, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর নাগরিকরা অংশ নেন।
ফিলিস্তিনের নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় সংহতি জানিয়ে চিঠি দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, এটাই প্রকৃত কথা নয়, এজন্য আপনাকে ফিলিস্তিনে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থায়ন করতে হবে। ফিলিস্তিনদেরকে সামরিক অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের ভুল ভ্রান্তি সব ভুলে যেতে হবে। পাকিস্তানকে সাথে নিয়ে তুরস্ক, আফগানিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ সকলকে নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। বাংলাদেশে ১০ হাজার লোককে সামরিক ট্রেনিং দিয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে যুদ্ধে পাঠাতে হবে। তিনি বলেন, একই ভাবে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে কাশ্মীরের জন্য এবং ভারতে মাওবাদীরা আন্দোলন করছে তাদেরকে সমর্থনের জন্য। আমরা যদি এটা না করি তাহলে বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা হবে। বঙ্গবন্ধুর সংবিধানে বলা হয়েছে। পরিষ্কার ভাবে লেখা রয়েছে, যেকোনো জায়গায় অধিকারের জন্য সংগ্রাম চলবে তাদেরকে সাহায্য করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমি প্যালেস্টাইনের জনগণের লড়াইয়ের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি। আমাদের লড়াইয়ের বাতি জ্বালাতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন ধর্মীয় কথা বলেও সাম্রাজ্যবাদের পা চাটে। এর মধ্যে অনেকেই আছেন সাহস করে কথা বলেন না বা বলতে চান না। আমাদের আরো সাহসী হতে হবে। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক বলেন, ফিলিস্তিনে মানুষ যারা প্রতিদিন ইসরাইলের হাতে নির্যাতন নিপীড়নের শিকার তাদের পক্ষে সংহতি জানানোর জন্যই আজকের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। আমরা বাংলাদেশের মানুষ প্যালেস্টাইনের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের পক্ষে আছি। আমরা এই সভার আয়োজন করেছি নির্দলীয় ভিত্তিতে, জাতীয় আবেদনে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিজেকে একক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেই গাজায় এই নির্লজ্জ হত্যাকান্ড চালাচ্ছে। ইসরাইল কোন রাষ্ট্র নয়। এটা একটা যুদ্ধ মেশিন। একে যুদ্ধের মাধ্যমেই শেষ করতে হবে।
গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, অনেক বছর যাবৎ এই অন্যায় চলছে। সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ নেই। কিন্তু এবার কিছুটা আশার আলো দেখছি। কারণ সারা বিশ্বে সাধারণ বিবেকবান মানুষ প্যালেস্টাইনের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এমনকি কিছু ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস ম্যানও ইসরাইলের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান লে. জেনারেল (অব.) নুরুদ্দিন খান বলেন, ইসরাইল যে একতরফাভাবে আক্রমণ করেছে তা অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। এই মানবতা বিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আধুনিক বিশ্বে এই জঘন্য অপরাধ চলতে পারে না।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্যালেস্টাইনে যা ঘটছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও জঘন্য অপরাধ। জায়নবাদ যেভাবে প্যালেস্টাইনবাসীর সকল অধিকার হরণ করেছে তার প্রতিবাদে আমাদের সোচ্চার ভ‚মিকা রাখতে হবে।
সাবেক ছাত্রনেতা মজিবুর রহমান মন্জুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- শিক্ষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী, একুশে পদক প্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু ড. সুকোমল বড়ুয়া, সামরিক বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, কমরেড খালেকুজ্জামান আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, সঙ্গীত শিল্পী হায়দার হোসেন, ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা সাইয়েদ কামাল উদ্দিন জাফরী, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসির, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, কবি ও শিল্পী মুহিব খান প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন