ফলকে রোগবালাই ও রাসায়নিক মুক্ত রেখে স্বাদ ও ফলের আসল রং বজায় রাখতে নাটোরের লালপুরে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি আম চাষে বিপ্লব ঘটাতে পারে। ইতোমধ্যে এই উপজেলায় ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহারের সুফল পাওয়া গেছে। গত কয়েক বছর ধরে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ হচ্ছে এই উপজেলায়। কীটনাশকের বিরুদ্ধে মানবদেহ ও পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় এই প্রযুক্তিতে ফলচাষ দিন দিন চাষির মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি করছে।
লালপুরে এক সময় কীটনাশক ছাড়া গ্রীষ্মকালীন ফল উৎপাদনের চিন্তা করতে পারতেন না মৌসুমী ফল চাষিরা। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রথাগত পরিবর্তন এসেছে ফল উৎপাদনে। উৎপাদিত ফল রফতানির চিন্তা মাথায় রেখে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিষমুক্ত ও নিরাপদ ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে এখানকার চাষিরা বেছে নিচ্ছে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি।
গতকাল শনিবার উপজেলা বিজয়পুর এলাকার কমরুজ্জামান লাভলুর আমবাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে বাবুই পাখির বাসার মতো প্রতিটা আমের গাছে হলুদ ও সাদা রঙের ব্যাগ ঝুলছে কাছে গিয়ে দেখা যায় ব্যাগের মধ্যে আম রয়েছে । তিনি বলেন, বিষমুক্ত আম উৎপাদনের একমাত্র উপায় ফ্রুট ব্যাগিং। গত বছর ১০ বিঘা জমিতে প্রায় ৪ হাজার বিভিন্ন জাতের আমে ফ্রুট ব্যাগিং করে লাভবান হওয়ায় এবার প্রায় ১৬ হাজার বিভিন্ন জাতের আমে (বিশেষ ধরনের ব্যাগ দিয়ে আম ঢেকে রাখা) এ পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন তিনি। বিশেষ ধরনের ব্যাগ দ্বারা গাছে থাকা অবস্থায় ফলকে আবৃত করে রাখাটাই ফ্রুট ব্যাগিং। ফলের একটা নির্দিষ্ট আকারের সময় এই ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। ফল সংগ্রহ পর্যন্ত গাছেই লাগানো থাকে।
এই ব্যাগটি বিভিন্ন ফলের জন্য বিভিন্ন রং ও আকারের হয়ে থাকে। তার মতে, কীটনাশক, পোকামাকড় ও বিরূপ আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমকে রক্ষা করতে এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর। এতে আম থাকে বিষমুক্ত। তবে এই পদ্ধতি একটু ব্যয়বহুল হলেও আম বিক্রির লাভ থেকে তা পুষিয়ে নেয়া যায়। কারণ এই পদ্ধতির আমের চাহিদা বেশি। ক্রেতারা একটু বেশি দামে হলেও বিষমুক্ত আম কিনতে চান। অনেক আম চাষিই এই পদ্ধতির দিকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর এই উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ করা হয়েছে। বিষমুক্ত ফল উৎপাদনের এটি একটি আধুনিক ও পরিবেশসম্মত পদ্ধতি। এই আমের চাহিদা বেশি হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। কারণ এই আম কীটনাশকমুক্ত, পোকামাকড়, বিরূপ আবহাওয়া ও বাইরের ক্ষতিকর কোনও প্রভাবই এই ব্যাগের মধ্যে ঢুকতে পারে না। এ বিষয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করাতে সভা-সেমিনার করা হচ্ছে। তবে এই পদ্ধতির উপকরণের মূল্য কম ও সহজলভ্য হলে আগামীতে এই পদ্ধতিতে আমের চাষ আরো বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন