রেজাউল করিম রাজু : পদ্মাচরের টমেটোর স্বাদই আলাদা। দামও অন্য টমেটোর চেয়ে কেজিতে আট দশ টাকা বেশী। সবচেয়ে বেশী চাহিদা বড় আকারের দেশী জাতের। বাজার পর্যবেক্ষণ করে ক্রেতারে ঝোঁকও দেখা যায়। বিক্রেতারা বলছেন একবার নিয়ে এর স্বাদ নিন। এরপর টমেটো কেনার সময় এটার দিকে নজর যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মার বিশাল বালুচরে আবাদ হচ্ছে অন্য ফসলের সাথে টমেটোরও। এক সময়ের প্রমত্ত পদ্মা এখন মরা নদীর নাম। ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে পদ্মা। মরে গেছে এর অসংখ্য শাখা নদী। শুধু বর্ষা মওসুমে নদীগুলো জানান দেয় তাদের ক্ষীণ অস্তিত্ব। মাস দুয়েক পানিতে ভরা থাকে। এরপর বছরের বাকী সময় জেগে থাকে বিশাল বালুচর। এ চরের যেখানে একটু পলি জমে সেখানে মানুষ কাস্তে কোদাল আর লাঙ্গল নিয়ে নেমে পড়ে ফসল আবাদের জন্য। ধান গম সরিষা মাষ কলাই টমেটো বেগুন মরিচ আদা তরমুজ বাঙ্গিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হচ্ছে চরে। সেচের জন্য বালুচরের বুক ফুড়ে বসিয়েছে সেচযন্ত্র। নদী মরে যাবার কারণে নদী কেন্দ্রিক পেশাজীবীরা তাদের পেশা বদল করেছে। নৌকার মাঝিমাল্লা জেলে এখন কৃষক। যে নদীর বুকে পাল তোলা নৌকা নিয়ে ছুটেছে মাছ ধরতে। বড় বড় ঢেউয়ের তালে তালে নেচেছে ডিঙি নৌকায়। সেই নদী এখন পানিশূন্য। স্বপ্নময় পদ্মা এখন স্বপ্নের হাহাকারে বিদীর্ণ। ফারাক্কা তাদের জীবন জীবিকা হরণ করেছে। তারপরও জীবন থেমে থাকে না। নৌকার বৈঠা আর জাল ছেড়ে হাল ধরেছে। মরা নদীর বুকে ঘটিয়েছে সবুজের বিপ্লব।
রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ থেকে নিচে দক্ষিণে পদ্মার বালুচরে গেলে ফসলের সবুজতা দেখে বিস্ময়ে বলতে হবে এ যেন মরুদ্যান। বালুচরের সাথে লড়াই করে যারা সবুজের সমারোহ ঘটিয়ে চলেছেন তাদের সালাম জানাতেই হয়। বালুচরজুড়ে গমের চারাগুলো বেড়ে উঠছে। বোরো ধানের প্রস্তুতি চলছে। বীজ লাগানো হয়েছে। গম ধানের চারায় বাতাসের দোলা মন্দ নয়। সরিষায় পাক ধরেছে। চলছে আহরণ। সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন টমেটোর ক্ষেত। থোকায় থোকায় সবুজ লাল আভার ফলগুলো কারো দৃষ্টি আকর্ষণ না করেই পারে না। টমেটোর আবাদও ভাল হয়েছে। গোদাগাড়ী রাজশাহী বাঘার চরে যেন টমেটো আবাদের বিপ্লব ঘটে গেছে। পবার খলবোন এলাকার সাবান আলীর দিকে এখন দৃষ্টি অনেকের। হরিপুর ইউনিয়নের আলিমগঞ্জ ব্লকে ছয় বিঘা জমিতে মাচায় টমেটোর আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে দু’লাখ টাকার উপরে। আর এখন পর্যন্ত টমেটো বিক্রি করেছেন পাঁচ লাখ টাকার। শেষ পর্যন্ত আরো দু’লাখ টাকার টমেটো বিক্রির আশা করছেন। তারমতে টমেটো মাটিতে ও মাচায় দু’ভাগেই চাষ করা যায়। তবে মাচায় চাষ করলে মাটির চেয়ে আরো মাস দুয়েক কম পাওয়া যায়। এতে করে ফল ও ফুল ভাল থাকে। তাছাড়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোন কীটনাশক ব্যবহার করেননি। বিষমুক্ত হবার কারণে তার টমেটোর চাহিদা বেশী বলে জানান। তার এমন সাফল্যে আগামীতে এই পদ্ধতি টমেটো আবাদ করার কথা ভাবছেন অনেকেই। শুধু রাজশাহীর হরিপুর নয়। বাঘা উপজেলার আবুল কালাম, বাবুল দেওয়ান, হাবিবুর রহমান চরে টমেটো আবাদ করে নিজেদের সচ্ছলতা খানিকটা আনতে পেরেছেন বলে খুশী। কৃষি বিভাগ বলছে সমতলের পাশাপাশি চরে এর আবাদ বাড়ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন