ইনকিলাব ডেস্ক : রাজধানীমুখী মানুষের ভোগান্তি কমছেই না। ফেরি ঘাটগুলোয় এই ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি পোহাতে হচ্ছে লাখো যাত্রীকে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ফেরি চালু না থাকায় দীর্ঘ যানজট লেগে থাকছে সারা দিন। অন্যদিকে এই সুযোগে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দৌলতদিয়ায় চার কিলোমিটার জুড়ে যানজট
গোয়ালন্দ উপজেলা সংবাদদাতা : দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার চারটি ঘাটের মধ্যে তিনটি সচল ছিল, কিন্তু রোববার সকাল ৭টার দিকে আবার ভেঙে যায় সচল থাকা চার নম্বর ঘাটটি।
বর্তমানে দুটি ঘাট দিয়ে চলছে পারাপার, রোববার সকালের দিকে ঘাটে যানবাহনের চাপ না থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে গাড়ির চাপ, সন্ধ্যা পর্যন্ত দৌলতদিয়ার জিরো পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশ হ্যাচারিচ পর্যন্ত চার কিলোমিটায় এলাকায় যানবাহনের সারি তৈরি হয়। এত আটকা পরে ঢাকামুখী কয়েকশ’ ছোট-বড় যানবাহন।
ঘাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্ধ থাকা চার নম্বর ঘাটের মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। অতি তাড়াতাড়ি ঘাটটি সচল হতে পারে।
আর রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে বিগত কয়েকদিনের তুলনায় ঘাটে আজকে জানজটের পরিমাণ কিছুটা কম, তবে নিরাপত্তায় এবং মানুষ যাতে নিবিঘেœ কর্মস্থলে যেতে পারে সেই ব্যাপারে ঘাট এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে আজকে ১৪টি ফেরি ও ২৮টি লঞ্চের মাধ্যমে চলছে পারাপার।
পদ্মার ভাঙনে ভোগান্তিতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া
রাজবাড়ী জেলা সংবাদদাতা : একের পর এক ভাঙছে, ঘাট বন্ধ থাকছে, মাঝেমধ্যেই হচ্ছে সচল, আবার ¯্রােতের কারণে ভেঙে যাচ্ছে ঘাট। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচলকারী দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। দীর্ঘ দুই মাস ভাঙা-গড়ার পর বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা জানালেন, এই এলাকায় আর ঘাট রাখা সম্ভব নয়। চলছে ঘাট সরানোর এবং জমি বন্দোবস্ত ও সংযোগ সড়ক মেরামতের চিন্তা-ভাবনা। খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে বলেও আশা করে কর্তৃপক্ষ।
পদ্মার প্রবল ¯্রােতের কারণে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় থাকা চারটি ফেরি ঘাটের প্রত্যেকটিই ভেঙেছে একাধিকবার। তবে সবচেয়ে বেশি ভেঙেছে ৩ নম্বর ঘাটটি। আর দুই নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে দেড় মাস যাবৎ। সচল রয়েছে ১,৩ ও ৪ নম্বর ফেরিঘাট তাও আংশিক আকারে রয়েছে ফেরি সংঙ্কট ও প্রবল ¯্রােত যে কারণে ফেরি ঘাটে আসতে সময় লাগছে বেশি। আর ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলমুখী মানুষের চাপের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।
যানজটে আটকে থাকা যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের দেশের মন্ত্রী-এমপিরা টেলিভিশনে টকশোতে বলেন, ফেরি ঘাটের জন্য এই করছি সেই করছি কিন্তু কাজের বেলার তার কিছুই না। যানজটে আটকে থেকে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ক্ষতি তো হচ্ছেই, অনেকে আবার সময়মতো অফিসে যেতে পারছে না।
চালকরা জানান, ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে ঘাটে। ঘাট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যাবস্থাই গ্রহণ করছে না। তাছাড়া ঘাটে খাবার-দাবার প্র¯্রাব-পায়খানাসহ বিভিন্ন প্রকার সমস্যা তো রয়েছেই।
বিআইডব্লিউটিএর দৌলতদিয়ার সহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম জানান, পদ্মার ভাঙন অব্যাহত থাকার কারণে এই স্থানে আর ঘাট রাখা সম্ভব নয়। এরই মধ্যে নতুন দুটি ঘাট নির্মানের স্থান পছন্দ করা হয়েছে সেখানে জমি বন্দোবস্তের ব্যাপারে জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ সংযোগ সড়ক নির্মান করবেন বিআইডব্লিউটিএ পল্টুন নির্মান করবে খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ১৪টি ফেরি ও ২৮ লঞ্চের মাধ্যমে চলছে দক্ষিনাঞ্চলের ২১ জেলার যানবাহন ও যাত্রী পারাপার। খুব তাড়াতাড়ি ঘাট নির্মাণ হবে, কমবে ভোগান্তিÑএমটিই আশা করেন এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা।
আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় অব্যাহত
আরিচা সংবাদদাতা : রোববারেও আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলমুখী হাজারও মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। এ সুযোগে বাস মালিক-শ্রমিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় অব্যহত রেখেছে। আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট থেকে ঢাকার গাবতলী পর্যন্ত বাসের সিটে বসিয়ে যাত্রী প্রতি ২০০ টাকা, নবীনগর ও সাভারে ১৫০ টাকা, ছাদে এবং ভিতরে দাঁড় করিয়ে ১০০ টাকা করে আদায় করছে। নিয়ম অমান্য করে বাসের ছাদে বহন করা হচ্ছে যাত্রী। বিআরটিসি বাস আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট থেকে গুলিস্থান পর্যন্ত ২শ’ টাকা করে ভাড়া আদায় করছে। অনেক যাত্রী বাস না পেয়ে ১০০/১৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে খোলা ট্রাকে করে গন্তব্যে যাচ্ছে।
বেশিরভাগ নি¤œআয়ের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে ও বাসের ছাদে কর্মস্থলে ফিরছে।
রোববার দুপুরে আরিচা ঘাটে পাবনা থেকে আসা ঈদের ছুটি শেষে ঢাকাগামী যাত্রী হালিম মিয়া জানান, পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ শেষে এখন আবার ঢাকায় যাচ্ছি। যে টাকা নিয়ে বাড়ি গেছি তা প্রায় শেষ হওয়ার পথে। তাই জীবনের ঝুঁকি হলেও বাধ্য হয়ে ট্রাকে করে কর্মস্থলে ফিরছি।
গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার গামেন্টস কর্মী সিকিম আলী জানান, পাটুরিয়া থেকে গাজীপুরে গাড়ির ভেতরে ছিটে বসে যেতে গেলে ৩০০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। ঈদে বাড়ি গিয়ে সব টাকা খরচ হয়ে গেছে। তাই হাতে এখন কর্মস্থলে যাওয়ার টাকাও নেই। তাই বাধ্য হয়ে ১৫০ টাকা দিয়ে বাসের ছাদে উঠছি।
এ ব্যাপারে বরঙ্গাইল হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়ামিন-উদ-দৌলা জানান, বাসের ছাদে যাত্রী বহন করা নিষেধ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে চেকপোস্ট রয়েছে। বাসের ছাদে যাত্রী পেলে তারা নামিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া ছাদে যাত্রী বহন করায় বেশ কয়েকটি বাসের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
কাওড়াকান্দি ঘাটে দীর্ঘ যানজট
স্পিডবোটে বাড়তি ভাড়া আদায়
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা : রোববার ভোর থেকেই ঈদ শেষে কাওড়াকান্দি ঘাট হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মস্থলমুখো যাত্রীদের ঢল নামে। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে বাড়তি ভাড়া গুনে কাওড়াকান্দি ঘাটে এসেও যাত্রীরা আবার বাড়তি ভাড়ার বিপাকে পড়েন। স্পিডবোটগুলো যাত্রী প্রতি ৫০ টাকা করে বাড়তি ভাড়া অর্থাৎ দেড়শ টাকার ভাড়া ২শ’ টাকা করে আদায় করে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করলেও অতিরিক্ত বোঝাইয়ের অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এদিকে দৌলতদিয়া ঘাটে অচলাবস্থা থাকায় এরুটে অতিরিক্ত চাপে কাওড়াকান্দি ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়। বিআইডব্লিউটিএসহ একাধিক সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল থেকেই কাওড়াকান্দি হয়ে কর্মস্থলমুখো যাত্রীদের ঢল নামে। ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোটে ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। দক্ষিণাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি যানবাহনেই ছিল যাত্রীদের ভিড়। দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি জেলা থেকে বাড়তি ভাড়া দিয়ে কাওড়াকান্দি ঘাটে এসেও গুনতে হয় বাড়তি ভাড়া। স্পিডবোটে ৫০ টাকা করে ভাড়া বেশি নেওয়া হয় বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন। লঞ্চে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে ধারণক্ষমতার পরিবর্তে লোডমার্ক মানা হচ্ছে। এদিকে দৌলতদিয়া ঘাটের অচলাবস্থার কারণে এরুটে যানবাহন ছিল রেকর্ড পরিমান। তবে নাব্যতা সংকটের কারণে এ রুটের নৌপথের অনেকাংশ ওয়ানওয়ে হয়ে পড়ায় ফেরিসহ নৌযান পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগছে। ফলে কাওড়াকান্দি ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়। পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের মোড় পর্যন্ত চলে আসে যানবাহনের লাইন। ফলে পাচ্চরেই নেমে যেতে বাধ্য হয় হাজার হাজার যাত্রীদের। ৩ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ঘাটে পৌঁছতে হয় যাত্রীদের। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাওড়াকান্দি ঘাটে অর্ধ শতাধিক নৈশ কোচসহ ৬ শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। নৈশ কোচের যাত্রী রাজিয়া সুলতানা বলেন, খুলনা থেকে শনিবার রাত নয়টার সময় কাওড়াকান্দিঘাটে এসেছি। এখনো ফেরিতে উঠতে পারিনি। সামনে গাড়ির যে সিরিয়াল দেখছি তাতে কখন ফেরিতে উঠবো তার ঠিক নেই। আরেক যাত্রী হায়দার আলী বলেন, শুনেছি নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি চলাচল সমস্যা হচ্ছে। তাই সিরিয়ালে বসে আছি শনিবার রাত থেকে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ বলেন, যাত্রীদের নিরাপদে কর্মস্থলে পৌছে দিতে ঘাট এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ, র্যাব, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়ার কোন অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনসারউদ্দিন বলেন, অপর প্রান্ত থেকে যাত্রী শূন্য আসার অজুহাতে এপার থেকে স্পিডবোটে ভাড়া বাড়িয়েছে ওরা। বাড়তি চাপ থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন