বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

ইসলামে বিবাহের গুরুত্ব

প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. আবুল খায়ের স্বপন : সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর নামে যিনি আমাদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করে এ বিশ্ব ধরায় প্রেরণ করেছেন। দুরুদ ও সালাম জানাই বিশ্ব মানবতার মহান দূত যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে অবতীর্ণ ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে এ দুনিয়ায় আগমন করেছেন। মহান আল্লাহপাক আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ:)কে সৃষ্টি করে তাঁর (আদম আ:) জীবনের পরিপূর্ণতা আনয়নের লক্ষ্যে আদি মাতা হযরত হাওয়া (আ:)কে তাঁর জীবনসাথী হিসেবে সৃষ্টি করে বিবাহর মাধ্যমেই একে অন্যের পরিপূরক জীবন সঙ্গী হিসেবে আবদ্ধ করে দেন। বন্ধুত্ব, প্রেম প্রীতি, পবিত্রতা সতিত্ব, আত্মদানই হচ্ছে নারীর ভূষণ- বৈশিষ্ট্য। অনন্তকাল পর্যন্ত নারীর এ ভূষণ স্থায়ী থাকবে। নারী মৃত মনে নব জীবনের স্পন্দন জাগায় সতত সর্বত্র। নারী দুঃখ ভারাক্রান্ত মানসে জাগায় আশার আলো। বিপদের প্রচ- ঝঞ্ঝা ব্যত্যয় বৃক্ষের কচি শাখার মতই সে থাকে অটুট, স্থায়ী। সামান্য আনন্দেই তার বদনে খেলে হাসির উদ্বিল লহরী। নারীরা পুরুষের মনোরাজ্যে স্থাপন করে স্বীয় সিংহাসন। বিস্তার করে তার আপন রাজত্ব। নারী হল জীবনের আবাহন, পুলকের সঙ্গিত, পবিত্র ¯েœহ, মমতার প্রতীক-প্রতিমূর্তি। বিশ্ব নিখিলের প্রাণ সম্পদ। বিশ্ব নিখিলের ছবিতে যা কিছু চাকচিক্য তা সবই কেবলমাত্র নারী কল্যাণেই। গোটা বিশ্ব মানবতাই নারীর কাছে ঋণী। সৃষ্টি জগতে যা কিছু সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। হযরত আদম (আ:)কে সৃষ্টি করার পর তা একাকিত্বের অবসান করার শুভ প্রয়াসে হযরত হাওয়া (আ:)কে বিবাহর মাধ্যমে তার জীবন সঙ্গী হিসেবে সৃষ্টি করেন যা মানব ইতিহাসের প্রথম বিবাহ। কেননা নারীর সাথে পুরুষদের সর্ম্পক স্থাপনের জন্য বিবাহ হচ্ছে একমাত্র বৈধ, বিধিবদ্ধ, সার্বজনীন এবং পবিত্র ব্যবস্থা। 

মানবতার ধর্ম ইসলাম নারী পুরুষদের মধ্যে সুন্দর ও পুতঃপবিত্র জীবন-যাপনের জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বল্গাহীন, স্বেচ্ছাচারী জীবনের উচ্ছৃঙ্খলতা ও নোংরামির অভিশাপ থেকে সুরক্ষা করতেই ইসলাম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জোর তাগিদ প্রদান করেছে। কেননা নারী পুরুষের পবিত্রতা ও সতিত্ব রক্ষার মোক্ষম ও বাস্তব সম্মত হাতিয়ার হল এ বিবাহ ব্যবস্থা। বিয়ে হল পুরুষ ও নারীর মাঝে সামাজিক পরিবেশে এবং ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক অনুষ্ঠিত এমন এক সর্ম্পক স্থাপন যার ফলে নারী-পুরুষ দু’জনে একত্রে বসবাস এবং পরস্পরের যৌন সর্ম্পক স্থাপন সম্পূর্ণ বৈধ হয়ে যায়। বিবাহ একটি শুভ ও ধমীয় অনুষ্ঠান যা পালনের মধ্য দিয়ে নারী পুরুষের ভবিষ্যৎ জীবনের সূচনা হয়। বিবাহ অনুষ্ঠানে লৌকিকতা এবং নিছক আনন্দ উল্লাসের নামে বেহায়পনার অশ্লীল অনুষ্ঠানের আয়োজনের পরিবর্তে ধর্মীয় রীতিনীতি বজায় রাখা অবশ্যই কর্তব্য। ইসলামে বৈরাগ্য নীতির কোন স্থান নেই। ইসলামে সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিবাহ না করা ইসলাম নিষিদ্ধ একটি ভর্ৎসনামূলক অপরাধ। কেননা বিবাহ কেবল ভোগ বিলাসের জন্য নয় বরং বিয়ে হল প্রত্যেক নর নারীর জীবনকে পুতঃপবিত্র, সুন্দর এবং সার্থক করে তুলতে পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে থাকে। পবিত্র কোরআন পাকে বিয়ে এবং স্ত্রী গ্রহণের ব্যবস্থাকে নবী রাসূলের প্রতি আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ দান বলে উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সূরা রায়াদ এ উল্লেখ করেন “হে নবী তোমার পূর্বেও আমি অনেক নবী রাসূল পাঠিয়েছি এবং তাদের জন্য স্ত্রী ও সন্তানের ব্যবস্থা করেছি”। আয়াতের মর্মবাণী থেকে বুঝা যায় বিবাহ আল্লাহপাক প্রদত্ত একটি ঐশী বিধান।
একই প্রসঙ্গে আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের সুরা নূরে এরশাদ করেন “এবং বিয়ে দাও তোমাদের এমন সব ছেলে-মেয়েদের স্বামী-স্ত্রী বা স্ত্রী নেই; বিয়ে দাও তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা বিয়ের যোগ্য হয়েছে”। বিয়ের মাধমে স্বামী-স্ত্রীর উপর গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়। দায়িত্ব কর্তব্য এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পরস্পরকে সুবিবেচনার অধিকারী হয়ে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর, সুখকর ও পবিত্র করে রাখা হয়।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৮৭নং আয়াতে এরশাদ করেন “ স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্য পোশাক স্বরূপ আর তোমরা তাদের জন্য পোশাক স্বরূপ। অর্থাৎ পোশাক যেমন করে মানব দেহকে সকল প্রকার নগ্নতা, অশ্লীলতা, কুশ্রীতা ইত্যাদি থেকে বাঁচিয়ে রাখে ঠিক তেমনি বিবাহর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরকে সেভাবে বাঁচিয়ে রাখে। একই প্রসঙ্গে মিসকাত শরীফে এরশাদ আছে “যে ব্যক্তি বিয়ে করল তার অর্ধেক দিন-ঈমান পূর্ণ হয়ে গেল, সে যেন বাকি অর্ধেকের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করে”। হাদিসে আরও উল্লেখ আছে “স্বামী-স্ত্রী যখন একান্তে বসে আলাপ করে, হাসি-খুশী করে তার সওয়াব নফল এবাদতের মতো”। তাছাড়া স্ত্রীরা জগতের অস্থায়ী সম্পদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে হাদিসে এরশাদ রয়েছে। বিয়ের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা প্রত্যেক নর-নারীর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ২৫নং আয়াতে এরশাদ করেন “তোমরা তাদের অভিভাবকদের অনুমতিক্রমে তাদের বিয়ে কর; যথাযথভাবে তাদের মোহর প্রদান কর; যেন তারা বিয়ের দূর্গে সুরক্ষিত হয়ে থাকতে পারে এবং অবাধে যৌনচর্চা ও গোপন বন্ধুত্বে লিপ্ত না হয়ে পড়ে”। আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহপাক বিয়ে করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং বিয়ে না করে অবাধ যৌনসম্পর্ক স্থাপন করার প্রতি নিরুৎসাহিত করেছেন। বিয়ের করার যোগ্যতা (শারীরিক এবং অর্থনেতিক) ভাবে অর্জন করার পর অবিবাহিত এবং অকৃতদার হয়ে জীবনযাপন করা ইসলামে কখনই কাম্য নহে বরং তার থেকে পরিত্রাণ প্রদান করাই ইসলামের লক্ষ্য। কেননা অকৃতদার জীবন কখনই পবিত্র এবং পরিতৃপ্ত জীবন হতে পারে না।
পবিত্র কোরআনের পাশাপাশি বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) সামর্থ্যবান লোকদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রতি বিশেষভাবে অনুপ্রাণীত করার সাথে সাথে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হওয়াকে নিরুৎসাহিত করেন। সমাজের সামর্থ্যবান যুবক যুবতীদেরকে উদ্দেশ্য করে পবিত্র হাদিসে এরশাদ করেন যা প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন নবীজি (সা.) এরশাদ করেন “হে যুব সমাজ তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে তাদের বিবাহ করা কর্তব্য কেননা বিয়ে দৃষ্টির নিয়ন্ত্রণকারী, যৌন অঙ্গের পবিত্রতাকারী আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন রোজা রাখে, কেননা রোজা তার ঢাল স্বরূপ”।
একই প্রসঙ্গে সাহাবী হযরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন“ কুমারিত্ব এবং অবিবাহিত নিঃসঙ্গ জীবন-যাপনের কোন নিয়ম ইসলামে নেই”। কেননা বিয়ে হল স্বভাবের দাবী মানব প্রকৃতিতে নিহিত প্রবণতার স্বাভাবিক প্রকাশ। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বে¡ও বিবাহ না করার পরিণতি সর্ম্পকে হাদিসে উল্লেখ আছে নবীজী (সা.) এরশাদ করেন “যে লোক বিবাহ করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিয়ে করেনা সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নহে”। তাছাড়া মুসনাদে আহমাদে আরো বর্ণিত আছে “নবীজী (সা.) আমাদেরকে বিবাহ করতে আদেশ দিতেন আর অবিবাহিত নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করা থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করতেন”। তাছাড়া সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিবাহ না করার ভয়াবহ পরিণতি কথা উল্লেখ করে বিশ্ব নবী (সা.) দ্ব্যার্থকণ্ঠে এরশাদ করেন যা হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন নবীজী (সা.)” এরশাদ করেন “বিয়ে করা আমার আদর্শ এবং স্থায়ী নীতি যে লোক আমার এ সুন্নাহ অনুসারে আমল করবে না সে আমার দলভুক্ত না”। ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে একটি দেওয়ানী চূক্তির ফল। অভিবাবকের মাধ্যমে নারী নিজেকে বিয়ের জন্য উপস্থাপিত করে আর পুরুষ তা গ্রহণ করে অর্থাৎ ইজাব এবং কবুলের মধ্য দিয়ে একটি বিয়ে সু সম্পূর্ণ হয়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
১১ জানুয়ারি, ২০১৭, ৭:০৭ পিএম says : 0
আলহামদু লিললাহ আপনি ভাল লিখেছেন।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন