শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

দাবির ২০ ঘণ্টার মধ্যেই পেলেন বৃদ্ধা

বয়স্ক ভাতা কার্ড

জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা, বরগুনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২১, ১২:০৩ এএম

জবেদা বেগম নামে সত্তরোর্ধ এক অসহায় বিধবা নারী একহাতে ঝুলি অন্য হাতে লাঠি ভর দিয়ে ইউএনওর কক্ষে ঢুকলেন। ঝুলি থেকে ১৬ টাকা বের করে রাখলেন তার টবিলের উপর। টাকা কেন? ইউএনও জানতে চাইলে আগন্তুক নারী বললেন, আমি একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড চাই। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা টাহা চায়। দেতে পারি নাই। গত ১১ বছর বিভিন্ন জনের হাতে পায়ে ধরেও পাই নাই। কার্ড পাইতে যহন টাহা লাগবে তহন মোর ধারে যা আলহে সবই লইয়াইছি। মোরে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড দেন স্যার’।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কায়সার হোসেন খোঁজ নিয়ে দেখলেন, বৃদ্ধা নিতান্ত গরীব, বিধবা। এক ছেলে কর্ম অক্ষম, অন্য ছেলে বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। বয়স ৭৩, প্রায়ই নিরন্ন থাকেন। চরম অসহায় জীবনযাপন তার। না খেয়ে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য উপজেলা পরিষদে আসা।
পুরো বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে ইউএনওকে। বৃদ্ধাকে সামনে রেখেই উপজেলা সমাজসেবা অফিসার শফিকুল ইসলামকে জবেদা বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্মতারিখ ফোনে দেন ইউএনও। ২ মিনিটের মধ্যেই জবেদা বেগমের নাম বয়স্ক ভাতার জন্য এন্ট্রি হয়ে যায়। এ ঘটনার ১২ ঘণ্টা অতিক্রম করতে না করতেই ইউএনও অফিসে ডাক পড়ল বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের সোবাহান পাড়া গ্রামের মৃত আলতাফ মল্লিকের স্ত্রী জবেদা বেগমের।

যথাসময়ে ইউএনওর দরবারে হাজির জবেদা বেগম। দীর্ঘ প্রতিক্ষিত স্বপ্নের বয়স্ক ভাতার কার্ড দাবির ২০ ঘণ্টার মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে অসহায় বিধবা জবেদা বেগমের হাতে তুলে দেন তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কায়সার হোসেন।
কার্ড হাতে পেয়ে আবেগাপ্লুত জবেদা বেগম বলেন, ‘একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান হগলের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছি। কোনো লাভ অয়নাই। উল্ডা মেম্বার চেয়ারম্যান কার্ডের লইজ্ঞা ৫-১০ হাজার টাহা চাইছে। এত টাহা দেতে না পারায় ১১ বছরেও একটা কার্ড জোডে নাই’। জবেদা বেগম বলেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি ইউএনও যেন অনেক বড় হয়। তার জন্য আমি বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়েছি। আমি অনেক খুশি’।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কায়সার হোসেন বলেন, দুঃখী অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেয়ে আনন্দ আর কিছুতেই নেই। জবেদা বেগমকে বয়স্ক ভাতার কার্ডটির ব্যবস্থা করে দিতে পারে আমি অনেক আনন্দিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন