বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

থামছে না মহাসড়কে লাশের মিছিল

প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই, আছে মনিটরিংয়ের অভাব : অপরাধীদের শাস্তি হয় না, আদায় করা হয় না মোটা অঙ্কের জরিমানা
স্টাফ রিপোর্টার : মহাসড়কে লাশের মিছিল থামছে না। একটি দুর্ঘটনা একটি পরিবারের সারা জীবনের শুধু কান্না নয়, কোনো কোনো সময় সারা জীবনের জন্য ওই পরিবারের ওপর চেপে বসে পাহাড়সম কষ্টের পাথর। পরিবারে একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তিটি যখন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অকালে মারা যান, তখন ওই পরিবারটির বেঁচে থাকাই কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাদের সোনালি ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ে অনিশ্চিত। তার পরেও সড়ক দুর্ঘটনারোধে নেই কোনো পদক্ষেপ। শুধু গত ৬ দিনে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৮৩ জন। এখন নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ঈদের আনন্দ হয়েছে বুকের পাথরচাপা কষ্ট। কেউ জানেন না এ কান্নার আর কষ্টের শেষ কোথায়। এভাবে প্রতি বছর হাজার হাজার পরিবারে ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ছে অনিশ্চিত। অকালে নিহত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। শুধু এবারই নয় প্রতি বছরই ঈদের আগে ও পরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় শত শত মানুষকে প্রাণ দিতে হচ্ছে। এ নিয়ে যেন কোন মাথাব্যথা নেই সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট মহলের। এমনটি বলছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ সচেতন মানুষ।
গবেষকেরা বলছেন, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় না, নেই মোটা অঙ্কের জরিমানা আদায়ের নজির। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে নেই সমন্বয়, আছে মনিটরিং অভাব, সংশ্লিষ্ট হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিসি এবং ট্রফিক পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার কারণে থামানো যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর লক্ষাধিক লোক চালক হিসাবে যুক্ত হলেও তাদের প্রশিক্ষণের নেই কোনো ধরনের প্রয়োজনীয় সরকারি উদ্যোগ। অদক্ষ চালক ও ফিটনেসবহীন গাড়ি চলছে বছররে পর বছর ধরে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ঘুষ গ্রহণের কারণে অদক্ষ চালকও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধ হচ্ছে না। এ অভিযোগ দেশের গবেষকদের। তারা বলছেন, প্রতি বছর ঈদ এলেই আমাদের মন্ত্রী মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করার নামে নানা পরিকল্পনার কথা মিডিয়াতে প্রচার করেন। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই। ফলে অকালে ঝরে পড়ছে শিশু, তরুণ-তরুণীসহ শত শত প্রাণ।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বার্ষিক পর্যবেক্ষণে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, চালকদের ওভারটেকিং ও গাড়ি চালানোর প্রতিযোগিতা। এছাড়া আরো যে সব কারণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে চালকের অদক্ষতা, ড্রাইভিং করা অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলা, খেয়ালিপনা, ফাঁকা রাস্তা পেয়ে প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চালনা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন না মানা এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধীর শাস্তি না হওয়া। এছাড়া ফুটপাত দখল, ওভারটেকিং, রাস্তার নির্মাণ ত্রুটি এবং গাড়ির ত্রুটি তো আছেই। পাশাপাশি যাত্রীদের অসতর্কতা, গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জেব্রা ক্রসিং না থাকা ও না মানা, নির্ধারিত গতিসীমা অমান্য করে গাড়ি চালানো, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ঈদের সময়ে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা ও রাস্তায় ওভারটেক করার তীব্র মানসিকতাকেও দায়ী করা হয়েছে। এসব কারণেই ঈদের মতো প্রধান উৎসবগুলোতে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ গ্রামের পথে আসা-যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন বলে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের দাবি করেছে। তাদের গবেষণায় বলা হয়েছে, চালকের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনাই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। শুধু এই কারণেই শতকরা ৯১ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়া মহাসড়কে দুর্ঘটনার আরও ছয়টি বড় কারণ চিহ্নিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিভিন্ন সূত্রমতে, ঈদের দিন থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ৬ দিনের সড়ক দুর্ঘটনায় মোট নিহত হয়েছেন ৮৩ জন, আর আহত হয়েছেন ৩৬০ জন। কোরবানি ঈদের আগের দিন ১৩ সেপ্টেম্বর নিহত হন ৪ জন ও আহত হন ১৭ জন। ঈদের দিন নিহত হন ১১ জন, আহত হন ৫৪ জন। ঈদের পরের দিন ১৫ সেপ্টেম্বর নিহত হয়েছেন ২২ জন, আর আহত হন ৮ জন। ১৬ সেপ্টেম্বর নিহত হন ১৮ জন, আর আহত হন ১৪৮ জন। গত শনিবারে নিহত হয়েছেন ১৪ জন এবং আহত হয়েছেন ৬৮ জন। গতকাল কুমিল্লাতে শিশুসহ ৫ জন নিয়ে সারা দেশে ২৪ জন নিহত এবং ৬৫ জন আহত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনারোধে গাড়ি চালকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, দ্রুতগতিতে গাড়ি চালালে তাদের মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানার ব্যবস্থা করা এবং এ সংক্রান্ত মামলাগুলো ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে মামলা হলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও হয় না, মোটা অঙ্কের জরিমানাও হয় না। বছরে পর বছর মামলা চলে, কিন্তু খুব কম সংখ্যক আসামি গ্রেফতার হয়। এছাড়া গাড়ির মালিক, চালক সমিতির নেতা ও রাজনৈতিক বলয়ের প্রভাবশালী চক্রের তদবিরের কারণে পুলিশি তদন্ত রিপোর্টও পাল্টে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রতি বছর সারাদেশে এক লাখ নতুন গাড়িচালক যুক্ত হচ্ছে। এই এক লাখ চালকের প্রশিক্ষণের জন্য দেশে ১০০টি প্রশিক্ষণ স্কুল প্রয়োজন। কিন্তু চালকদের প্রশিক্ষণের ওই ব্যবস্থা নেই সরকারের। এছাড়া ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা রয়েছে। ফলে দুর্ঘটনায় কারও শাস্তি হয় না, বেশির ভাগ দুর্ঘটনার পর মামলা হয় না। আর মামলা হলেও তার কোনো বিচার হয় না, হয় না সুরাহা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিচারহীনতার কোনো সংস্কৃতি যদি এদেশে পাকাপোক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে, তবে তা পরিবহন খাতে। এ কারণে মহামারির মতো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে সড়ক দুর্ঘটনা।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘ঈদের সময়ে মহাসড়কের কোথাও কোথাও জ্যামের সৃষ্টি হয় অতিরিক্ত গাড়ির চাহিদার কারণে। আর এই জ্যামের জায়গাটুকু পার হয়ে খালি রাস্তা পেয়ে তারা হাই স্পিডে গাড়ি চালান জ্যামে পার হওয়া সময়টুকু পুষিয়ে নেওয়ার জন্য। তারা ওভার স্পিডে ওভারটেক করতে যান সামনের গাড়িগুলোকে। এভাবেই ঈদের সময়ের ফাঁকা রাস্তাায় দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে।
বুয়েটের ওই গবেষক ড. মোয়াজ্জেম আরো বলেন, ‘অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালালে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সেখানে তা রেকর্ড হয়ে থাকে। সেখানে যদি মোটা অঙ্কের জরিমানা করার বিধান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, তাহলে চালকরা সচেতন হবে।’ এভাবে গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা গেলে দুর্ঘটনা যথেষ্ট কমানো সম্ভব। তিনি বলেন, ‘যে লোক একবার ৫ হাজার টাকা জরিমানা দেবেন, তিনি পরের বার এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবেই চিন্তা করবেন। তাই সরকারের উচিত গতি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মহাসড়কগুলোতে ইমপ্লিমেন্ট করা। এ কাজে যদি ৫০০ কোটি কিংবা হাজার কোটি টাকাও লাগে তাহলেও তাতে পিছু হটলে চলবে না।’
ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘আরেকটি বিষয় হলো, এ সময়ে তারা (গাড়িচালক) যত বেশি ট্রিপ দিতে পারবে, তত বেশি টাকা আয় করতে পারবে। আর এ কারণে অর্থাৎ বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে চালকরা বেপরোয়া গাড়ি চালায়। ফলে অহরহ ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। সাধারণভাবে যদি দিনে তারা ৮ ঘণ্টা গাড়ি চালায় তো ঈদের সময়ে ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টাও গাড়ি চালানোর রেকর্ড রয়েছে। আর অতিরিক্ত এ ট্রিপ দেওয়াতেও তাদের ভুল করার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে। এ সময় ঘুম বা কোনো ধরনের বিশ্রাম তারা নেয় না।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, চালকদের প্রশিক্ষণ, বেপরোয়াভাবে বা আইন অমান্য করে গাড়ি চালালে মোটা অঙ্কের জরিমানা আদায়ের নিশ্চিত ব্যবস্থা থাকতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। ড. মোহাম্মদ মাহবুব আলম বলেন, ‘ডিস্ট্রিক্ট রোড সেফটি কাউন্সিল এবং ন্যাশনাল রোড সেফটি কাউন্সিলের সড়ক দুর্ঘটনারোধে বড় ভূমিকা রাখার কথা। অথচ বছরের পর বছর ধরে আমরা কথা বলে যাচ্ছি, কিন্তু তাদের কোনো মিটিং নেই, জবাবদিহিতা নেই। সরকারের বড় লোকেরা কেবল কথাই বলে যাচ্ছে। বাস্তবে তার কোনো প্রয়োগ নেই। চালকরা কেউ নিয়ম মানেন না, মানানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগও নেই কোথাও। যার কারণে প্রতিবছর ঈদের সময়টাতে আমরা কত-শত মৃত্যু দেখতে বাধ্য হই।’
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল এলাকার বিজয়নগরে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৫ জনসহ ৮ জন নিহত হয়েছেন গত শুক্রবার সকালে। মহাসড়কের ইসলামপুর নামক স্থানে এনা পরিবহনের একটি কোচের সাথে বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা সকলেই মাইক্রোবাসের যাত্রী। তাদের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রূপসপুর গ্রামে। কনে তুলে আনতে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন কমলগঞ্জের রূপসপুর গ্রামের মাওলানা আবু সুফিয়ানসহ নিকট আত্মীয় ৮ জন। বর আবু সুফিয়ানসহ নিকট আত্মীয়দের মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রতিটি পরিবারে চলছে শোকের মাতম। সড়ক দুর্ঘটনায় ভেঙে গেছে বর আবু সুফিয়ানসহ ৫ পরিবারের স্বপ্ন। কনে ঘরে তুলার পর অসুস্থ মা জরিনা বেগমকে চিকিৎসা করানোর কথা ছিল আবু সুফিয়ানের। কিন্তু মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সে-সহ তার বাবা, চাচা, মামা, চাচাতো ও মামাতো ভাইসহ ৮ জনের মৃত্যুতে প্রতিটি পরিবার এখন শোকে কাতর। কথা বলতে পারছিল না বাড়িতে থাকা মহিলা সদস্যরা। স্বামী-সন্তান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে আহাজারি করছিলেন বর আবু সুফিয়ানের মা জরিনা বেগম। পাশের ঘরে আহাজারি করছিলেন বরের চাচি অজুফা বেগম। পাশের মামা বাড়িতে মাতম চলছিল একই অবস্থায়। তাদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠছিল। শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে পুরো গ্রাম। তা দেখে উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না। রূপসপুর গ্রামের হাদিউর রহমান সরফরের বড় ছেলে মাওলানা আবু সুফিয়ান হলেন ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক। ২০-২৫ দিন আগে বিয়ে করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। কনের পরিবার থাকতেন ঢাকার মহাখালীতে। শুক্রবার কনে তুলে আনার জন্য বাড়ি থেকে মাইক্রো কার নিয়ে সকাল ৭টার দিকে বের হন বর আবু সুফিয়ান, তার বাবা হাদিউর রহমান সফর, চাচা, মতিউর রহমান মুর্শেদ, চাচাতো ভাই, সাইফুর রহমান, চাচা হাজী আবদুল হান্নান, মামা দুরূদ মিয়াসহ নিকট আত্মীয়রা।
পাকুন্দিয়ায় শিশুযাত্রী বাস থেকে চাকার নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। জানা যায়, বাবা-মায়ের সাথে নানাবাড়িতে যাচ্ছিল মণিকা (৮)। বৃহস্পতিবার পাকুন্দিয়া উপজেলার মজিতপুর গ্রামের বাড়ির সামনে থেকে মণিকা তার বাবা-মায়ের সাথে কিশোরগঞ্জগামী অনন্যা ক্লাসিক (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৩৭১৩) যাত্রীবাসে ওঠে। বাসটি বাহাদিয়া নামক স্থানে পৌঁছলে বিপরীত দিকে থেকে আসা মোটরসাইকেলের মুখোমুখি হয়। বাস চালক হার্ড ব্রেক করলে শিশুযাত্রী মণিকা দরজা দিয়ে ছিটকে ওই বাসেরই চাকায় নিচে পড়ে। এতে ঘটনারস্থলেই মারা যায় মণিকা। এ অবস্থায় বাসটি ফেলে চালক হেলপার পালিয়ে যায়। ঘাতক বাসটি পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরাকান মহাসড়কের পটিয়া আমজুর হাট এলাকায় সৌদিয়া পরিবহন ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসের চালক মো. আবদুল মোনাফ (২৬) ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছে। নিহত চালক আবদুল মোনাফ কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার চা বাগান এলাকার আমির হামজার পুত্র। গত শনিবার দুপুর ১টায় এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহতদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা যায়। এ ঘটনায় উভয় যানবাহনের ৩০ জন যাত্রী আহত হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর আহত ৫ জন যাত্রীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। গুরুতর আহতরা হলেন সানজিদা (৫), আরিফ (২৬), ফরহাদ (২৬), মিনহাজ (১৮), মো. জোসেফ (৪৮), মুজিবুর রহমান (৫০), নিজাম উদ্দীন (২৫), মো. মামুন (২৬), মু. মোস্তাক উল্লাহ (১৭), মো. হারুনুর রশিদ (৬০), মো. তৌসিফ (৫), মো. জাফর (৪০), মো. হারুন (২৪)।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরাকান মহাসড়কের পটিয়া উপজেলার আমজুর হাট এলাকায় কক্সবাজারমুখী সৌদিয়া বাস (চট্টমেট্রো-ব-১১-০৪৬২) ওভারটেক করতে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা চট্টগ্রামুখী মাইক্রোবাসের (হাইচ ঢাকা-মেট্রো-চ-১১-৩৩৮৯) মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে মাইক্রোবাসের চালক মো. আবদুল মোনাফ (২৬) প্রাণ হারিয়েছে। এ ঘটনায় উভয় যানবাহনের ৩০ জন যাত্রী আহত হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর আহত ৫ জন যাত্রীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। গুরুতর আহতদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা যায়।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ জিল্লুর রহমান জানান, পটিয়া উপজেলার আমজুরহাট এলাকায় বাস-মাইক্রোবাস মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসের চালক ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়। বাস ও মাইক্রোবাস দু’টিকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, মহাসড়কে পুলিশ থাকেন অবৈধ অর্থ আয়ের ধান্ধায়। বেপরোয়া গাড়ি চালালেও কিংবা দক্ষক চালকের জায়গায় হেলপার গাড়ি চালালেও তা দেখেও না দেখার ভান করেন। এ অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে পুলিশের চাঁদাবাজি প্রতি বছরেই বেড়ে যায়। এছাড়া ফিটনেসবিহীন গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে বাড়তি ও অবৈধ টাকা দায়ের ফলে বিআরটিসি ও পুলিশ এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আবদুল মালেক বলেন, হাইওয়ে পুলিশের কেউ চাঁদাবাজি করেছে বা অবৈধভাবে কারো কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে এ ধরনের অভিযোগ নেই। কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে ওই অভিযোগের ভিত্তিতে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, হাইওয়ে পুলিশ বিশেষ করে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। ঈদের সময় মহাসড়কে হাজার হাজার গাড়ি আটক করে ফিটনেসের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার সময় কোথায়?
উল্লেখ্য, হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি মল্লিক ফখরুল ইসলাম পবিত্র হজ পালন করতে মক্কা শরীফ রয়েছেন। ফলে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন