টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা : বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদকারী, মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার পলাতক আসামি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের প্রার্থনা করলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন। এমপি রানা গতকাল রোববার সকালে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত প্রথম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের প্রার্থনা করলে আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া উভয় পক্ষের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আসামি পক্ষে জামিন শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল বাকি মিয়া, অ্যাডভোকেট ফায়জুর রহমান, অ্যাডভোকেট খন্দকার ফায়েকুজ্জামান নাজিব, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম রিপন, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলসহ অনান্য আইনজীবী।
রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মুনিরুল ইসলাম খান। তাকে সহায়তা করেন বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহেরসহ অনান্য আইনজীবী। এসময় আদালতে মামলার বাদী নাহার আহমেদ আবেগজড়িত কণ্ঠে আসামির জামিন না মঞ্জুরের জন্য আদালতে প্রার্থনা করেন। এদিকে কোর্ট চত্বরে নিহত ফারুক আহম্মেদের স্ত্রী নাহার আহমেদের নেতৃত্বে হত্যাকা-ে জড়িতদের বিচারের দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
চাঞ্চল্যকর ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও তার তিনভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জেলার সাবেক ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাসহ অপর আসামিরা হলোÑকবির হোসেন, সাবেক কমিশনার মাসুদ মিয়া, চাঁনে, নুরু, সানোয়ার হোসেন ও দাত ভাঙ্গা বাবু। এরা বর্তমানে পলাতক রয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩০২/৩৪/১২০ বি ধারায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী, ফরিদ মিয়া, সমির টাঙ্গাইল জেলহাজতে রয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশ ১৪জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, বিগত ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে শহরের কলেজপাড়া এলাকার নিজ বাসার কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
বিগত ২০১৪ সালের ১১ আগষ্ট শহরের বেবীষ্ট্যান্ড এলাকা থেকে ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয় আনিসুল ইসলাম রাজাকে। একই অভিযোগে মোহাম্মদ আলী নামে আরো একজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গত ২৪ আগষ্ট গ্রেফতার করে। তারা দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যাকান্ডে টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ভাই সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান কাকন, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা জড়িত রয়েছে। পুলিশ সূত্রে আরো জানা যায়, আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে আসামি রাজা জানিয়েছে, ঘটনার দিন (২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি) সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা রাজাকে দায়িত্ব দেন ফারুক আহমদকে আওয়ামী লীগ অফিস থেকে কলেজ পাড়ায় তার একটি প্রতিষ্ঠানে ডেকে আনার জন্য। আওয়ামী লীগ অফিসে যাওয়ার সময় পথেই রাজার সঙ্গে ফারুক আহমদের দেখা হয়। রাজা তখন নিজের রিক্সা ছেড়ে ফারুক আহমদের রিক্সায় উঠেন এবং তাকে এমপি রানার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। পরবর্তী সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়া নিয়ে ফারুক আহমদের কথা হয়। একপর্যায়ে ফারুক আহমেদকে উক্ত পদে প্রার্থী না হওয়ার অনুরোধ করেন। ফারুক আহমদ এতে রাজি হননি। এ বিষয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে ফারুক আহমেদ সেখান থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে তাকে গুলি করা হয়। এতে অন্যরা তার মুখ চেপে ধরেন। তার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর প্রভাবশালী নেতার নির্দেশে সেখানকার রক্ত মুছে ফেলা হয়। পরে একটি অটো রিক্সায় ফারুক আহমদের লাশ নিয়ে আসামি রাজাসহ দু’জন দু’পাশে বসেন এবং ফারুক আহমদের বাসার কাছে ফেলে রেখে আসেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন