শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নেপথ্যে কি ভয়ঙ্কর

ঢাবি শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক মৃত্যু মাদক এলএসডি এলএসডি ও গাঁজার কেক বিক্রি করছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা : গ্রেফতার ৩ শিক্ষার্থী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাজধানীর একটি বাসা থেকে লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড বা এলএসডি ভয়ঙ্কর মাদক জব্দ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগ। ঢাকার বেশ কয়েকজন তরুণ গাঁজা পাতার নির্যাস দিয়ে কেকও তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করছে। তাদের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। তারা ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে মারাত্মক মাদক এলএসডি এবং গাঁজার তৈরি কেক বিক্রি করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের মৃত্যু মামলার তদন্তে নেমে এলএসডির যোগসূত্র পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। রাজধানীর একটি বাসা থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদমান সাকিব রুপল ও তুর্জ এবং ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিব। গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত বুধবার দেশে প্রথম আমরা এলএসডি উদ্ধার করেছি। ‘বেটার ব্রাওরি অ্যান্ড বেয়ন্ড’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে সেখানে গাঁজা পাতার নির্যাস দিয়ে কেক বানিয়ে মাদক হিসেবে বিক্রি করতো। এই গ্রুপে প্রায় এক হাজার সদস্য রয়েছে। ডিবির অভিযানে গ্রেফতার তিনজনের কাছ থেকে নতুন মাদক এলএসডির ২০০টি ব্লট উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি ব্লটের মূল্য ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।

ডিবি জানায়, সাদমান সাকিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর বহিষ্কৃত ছাত্র। বর্তমানে তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ (শেষবর্ষ) পড়াশোনা করছেন। তিনিই মূলত বছরখানেক আগে টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডস থেকে এই মাদক অর্ডার করেন। মাদকের জন্য তারা পে-পালে টাকা পরিশোধ করলে পার্সেলের মাধ্যমে এই মাদক আসে। প্রতিটি ব্লট তারা ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় কিনেছিলেন।
সাদমান ডিবির কাছে দাবি করেন, তাকে ঢাবি থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়ায় তিনি ঢাবি ছেড়ে দিয়েছিলেন। ‘আপনার আব্বা’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে সাদমানসহ তাদের তিন বন্ধু সেখান থেকে এলএসডি বিক্রি করতো।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, উদ্ধার করা এলএসডিগুলো দেখতে স্ট্যাম্পের মতো। এগুলো যে মাদক তা দেখে বোঝার উপায় নেই। এলএসডি সেবকরা ঠোঁটের নিচে এলএসডি রেখে দিত। এলএসডি নতুন, ব্যয়বহুল এবং অতিরিক্ত ক্ষতিকারক মাদক (ব্যাড ড্রাগ)।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও এলএসডির ইতিহাস ঘেঁটে ডিবি জানতে পারে, এটি ব্যবহার করলে যে কারও মাথা ভার হয়ে যাবে। হেলোজেনিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। কেউ যদি গান শোনেন, তার সামনে গানের মিউজিকগুলো বিভিন্ন রঙের মতো ঘুরতে থাকে। সেবনকারী অত্যন্ত হিংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক আচরণ করে। একটি এলএসডি ব্লট সেবন করলে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত এর প্রতিক্রিয়া থাকে। অতিরিক্ত সেবনে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া হয়।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এটি সেবন করে সেবনকারী নিজেকে অনেক শক্তিশালী ভাবেন। সেবনকারী চিন্তা করেন তিনি উড়তেও পারবেন। তার অতীত স্মৃতি চলে আসে। অনেকে বলেছে, এটি সেবনের পর তারা মনে করে যে তারা ট্রেনেও ধাক্কা দিতে পারবে। যারা নেদারল্যান্ডস থেকে এই মাদকটি বাংলাদেশে পাঠিয়েছে তাদের শনাক্তের জন্য পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি বিভাগে চিঠি দিয়ে খোঁজ নিতে বলা হবে।
ঢাবি শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনে এলএসডি সম্পৃক্ত কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি হাফিজুর রহমান নামে ঢাবি শিক্ষার্থী ‘মৃত্যু’র ঘটনায় ডিবি তদন্ত শুরু করে। হাফিজের বন্ধুরা বলছে, সে একটি নতুন ও অদ্ভুত মাদকে আসক্ত ছিল। এরপরই এলএসডির বিষয়ে তথ্য পেয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আমরা হাফিজুরের লাশের ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর বলতে পারবো, তিনি এলএসডিতে আসক্ত ছিল কি-না?’
এলএসডি কী?

এলএসডি ড্রাগ মস্তিষ্কে এমন এক প্রভাব সৃষ্টি করে, যা হ্যালুসিনেশনে (সম্মোহন) সাহায্য করে। ফলে যারা এই ড্রাগ ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন রকম রঙ এবং আকৃতির জিনিস দেখে, যার অস্তিত্ব পৃথিবীতে নেই। এছাড়া এই ড্রাগ মানব মস্তিষ্কের এমন সব স্নায়ুর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, যা অনেক সময় অতীত স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
এমনকি এই ড্রাগ মানুষকে তার জন্মকালীন স্মৃতিও মনে করাতে সক্ষম। এলএসডি’র হ্যালুসিনেশন তৈরি করার প্রবণতা থেকে অনেক মানুষই এই ড্রাগটি ব্যবহার শুরু করে। এমনকি ষাটের দশকে এই ড্রাগ থেকে নতুন একটি সাইকেডেলিক কালচার তৈরি হয়।

জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ও ব্যান্ড মেম্বাররা এই ড্রাগ ব্যবহার শুরু করে। ১৯৬৮ সালে বিশ্বব্যাপী এলএসডি নিষিদ্ধ করা হয়। নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট ব্রিটেনের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ এই ড্রাগ ব্যবহার করেছিল। বর্তমানেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রিক্রিয়েশনাল ড্রাগ হিসেবে এলএসডির ব্যবহার হয়। এই ড্রাগ ভারতে এখনো গোপনে ব্যবহার হয়।

ডিবি সূত্র বলছে, গত ১৫ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র হাফিজুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় তার তিন বন্ধু এলএসডি সেবন করান। এর প্রতিক্রিয়া শুরু হলে তিনি শুধু একটি শার্ট পরে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এক ডাব বিক্রেতার ভ্যানে রাখা দা নিয়ে তিনি নিজের গলায় আঘাত করেন। সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টা ৪০মিনিটে অজ্ঞাতনামা হিসেবে তার মৃত্যু হয়। এর আট দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে হাফিজুরের ভাই তার লাশ শনাক্ত করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
শেখ মো. কামাল উদিন ২৮ মে, ২০২১, ১:৫৬ এএম says : 0
অত্যন্ত মর্মাহত।
Total Reply(0)
A K Khan ২৮ মে, ২০২১, ৩:৫৪ এএম says : 0
প্রতিবেদন পড়ে যা বুঝলাম এটা একটা ভয়ংকর জিনিস যা মানুষের হিতাহিতজ্ঞান শুণ্য করে দেয়, এমতাবস্থায় সে নিজের ক্ষতি বা তার আশেপাশের যেকারো ক্ষতি করে দিতে পাড়ে নিজের অজান্তেই। সরকারের উচিৎ এটার ব্যাপারে কঠোর হওয়া।
Total Reply(0)
ইয়াসিন আরাফাত ২৮ মে, ২০২১, ৩:৫৫ এএম says : 0
লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড, এছাড়াও অ্যাসিড পরিচিত, এক ধরনের সাইকেডেলিক ওষুধ যা মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবের জন্য পরিচিত। যার মধ্য পারিপাশ্বিক পরিবর্তিত সম্পর্কে সচেতনতা, উপলব্ধি, ও সেইসাথে সংবেদন অনুভূত হওয়া, এবং অবাস্তব চিত্রসমূহ বাস্তব মনে হওয়া- পভৃতি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
Total Reply(0)
Mohammad Bhuiyan ২৮ মে, ২০২১, ৩:৫৬ এএম says : 0
এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড) ! আজ থেকে দুই দশক আগেই মাস্টার্স এ পড়া এক বড় ভাই আত্নীয়কে, সহপাঠী প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর এ মাদক নিতে সচক্ষে দেখেছিলাম। ওভার ডোজ নিয়েছিল IV ইনজেকশনে। ফলে প্রতিক্রিয়া শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর সে অবস্থা! পাগলামি শুরু করে দেয়, আত্নহত্যার প্রবল চেষ্টা! হাই ডোজ ঘুমের মেডিসিনেও থামানো যায়'নি! হাসপাতালের টানা ২৪ ঘন্টা হাত পা মাথা সবকিছু বেঁধে রাখতে হয়েছে! এরপরও কয়েকজন মিলে ধরে রাখতেও হয়েছে !এ অবস্থায় কয়েকশত থাপ্পড় খাওয়ার ২৪ ঘন্টা পর মানসিক স্থিতিশীলতা আসে! এ যাত্রায় সে অবশেষে বেঁচে যায়! এ মাদক কিন্তু নতুন কিছু নয়!
Total Reply(0)
Irin Siddika ২৮ মে, ২০২১, ৩:৫৬ এএম says : 0
যুব সমাজ এবার কৌতুহল বশত এলএসডির পেছনে দৌড়াবে। যুব সমাজ ধ্বংসের জন্য এই মাদকই যথেষ্ট।
Total Reply(0)
আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ২৮ মে, ২০২১, ৩:৫৮ এএম says : 0
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজ ভাই এর মৃত্যু রহস্যের তদন্তে চাঞ্চল্যকর এলএসডির তথ্য সামনে আসায় আমরা অনেক জানতে পারছি, তবে বিশ্ব বিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশের গাফিলতির ব্যাপারটা কিন্তু দৃশ্যপট থেকে উবে যাচ্ছে৷ গলাকাটা লোককে মেডিকেলে সামনে থেকে উদ্ধার করে মেডিকেলের ভেতর চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাবার বদলে কেন একা ওই অবস্থায় সেই ব্যক্তিকে ছেড়ে দিলো, কার ভরসায় ছেড়ে দিলো এ প্রশ্নটা কিন্তু তেমন জোরালো ভাবে হচ্ছে না৷ যদি তখনই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হতো তাহলে লাশও উপহার পেতে হতো না আমাদের, সেই সাথে হাফিজ ভাইয়ের মুখ থেকেই বহু অজানা সত্য জানতে পারতাম৷ আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিভাবে এত বড় ঘটনার দায় এড়িয়ে যেতে পারে তার ব্যাখ্যা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দিতে হবে৷ সেজন্য আমাদের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ চাপ প্রয়োগ করা দরকার তার সিকিভাগও আমরা করতে পারছি না৷ কার্জনের অন্ধকার চিপায় কিংবা মেট্রোরেলের নির্মাণাধীন এলাকায় অথবা সুফিয়া বা হাইকোর্টের আশে যদি অবাধে নিষিদ্ধ মাদক সেবন করা যায় কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে, তাহলে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে বহু খুন খারাবিও সম্ভব৷
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন