শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে আমলের গুরুত্ব

প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

॥ শেষ কিস্তি ॥
রোজাদার যেমন সারা দিন উপবাস থাকার পর অনুভব করতে পারে অভুক্তের জ্বালাতন ঠিক একইভাবে যৌনকার্যের ক্ষেত্রে পড়হঃৎড়ষষরহম ঢ়ড়বিৎ আসে দীর্ঘ একমাস সময়কালে যাতে একটা ধারাবাহিকতা এসে যায়। এবার আসুন হজ বিষয়ে :একজন হাজী যখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এবং বড় অঙ্কের টাকা খরচ করে আল্লাহর ঘর জেয়ারত করতে যায়। তখন তাদের মধ্যে এক সচেতনতা জাগ্রত হয় যে, আমি যে রকম মানুষ আমার মত আজকে যারা আরাফাতের এ বিশাল ময়দানে উপস্থিত তারাও একই মানুষ, এতে কোন প্রভেদ নেই এবং কোন পার্থক্য নেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষের মধ্যে। যার মধ্যে চেতনা জাগ্রত হয় সে কি কখনো মানুষের খারাপ চিন্তা করতে পারে? তবে এই চেতনা অন্য কোনভাবে জাগ্রত হতে পারে না যা হজের মাধ্যমে সম্ভব।
ইসলামের সর্বশেষ স্তম্ভ হচ্ছে যাকাত। এটা এত গুরুত্বপূর্ণ যে, ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) ঘোষণা করেন,” খোদার কসম, যারা রাসূল (সা.) এর সময় যাকাত প্রদান করতো তারা যদি আজ উটের একটি রশি দিতেও অস্বীকার করে তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা। মানে যাকাতের প্রতি যেন সামান্যতমও অবহেলা করা না হয়। যদি আমরা যথাযথ হিসেবে যাকাত প্রদান করতাম তাহলে দরিদ্রতা থাকত না। আর যে ব্যক্তির মাঝে যাকাত প্রদান করার মতো মনোবৃত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তার মধ্যে মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শনের মত গুণাবলী বিদ্যমান থাকবে। আর যারা সত্যিকারভাবে যাকাত প্রদান করবে তারা কখনো অবৈধ উপায়ে টাকা উপার্জন করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে পারে না। সবাই যখন অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন হতে হাত গুটাবে তখন দেশ স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে।
ইসলামের বিধি-বিধানের সামান্যতমও যদি বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রের পুরো কাঠামোই বদলে যাবে। যা মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না। কল্পনা করার কথাও নয় কেননা যে সমাজে বর্তমানে মানুষ এক মুহূর্তের জন্য স্বস্তি ও নিরাপত্তা বোধ করতে পারে না সে সমাজ কিনা আবার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে তা কল্পনা করতেও প্রচুর কল্পনা শক্তির প্রয়োজন। যে মাতা-পিতা নিজের সন্তানকে মানুষ করলো সে সন্তান যদি তাদের মারতে যায় অথবা যে শিক্ষক-শিক্ষিকা তার ছাত্রদের মানুষ হিসেবে গড়লো সে ছাত্রই যদি রাইফেল উঁচিয়ে শিক্ষককে শায়েস্তা করার হুমকি প্রদান করে এমনকি আক্রমণ করে তাহলে স্বর্গরাজ্য যে সত্যিই কল্পনা মনে হবে। তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছুই নেই।
বর্তমান সমাজ কাঠামোর যে দিকে আমরা তাকাই হতাশা আমাদের গ্রাস করবেই। মন্ত্রণালয় হতে একবারে নি¤œ মানের প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত যে দিকেই প্রত্যক্ষ করবেন, দেখবেন সর্বত্রই যেন দুর্নীতির জাল বিস্তৃত। আপনি যেখানেই যান স্বস্তি পাবেন না। মনে হয় মায়ের পেট হতে ভূমিষ্ট হওয়ার সময়ই চলে গেছে আমাদের স্বস্তি ও নিরাপত্তা। হতাশা কাটিয়ে উঠার জন্য কত মনীষী কত আশার বাণী শুনাচ্ছেন কিন্তু তাদের আশার কোমল বাণী যেন উষ্ণ হতাশায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সমাজ বিজ্ঞানীরা ভাবছেন বর্তমান সমাজের অবক্ষয় হতে কি করে মুক্ত হওয়া যায়। কিন্তু তাদের গবেষণালব্দ হাজার হাজার পৃষ্ঠার গবেষণা কে মিথ্যা প্রমাণিত করে দিন দিন যে অবক্ষয় বাড়তেই থাকছে। মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের সমন্বিত প্রয়াসের রেজাল্ট অবশেষে শূন্য প্রমাণিত হচ্ছে। মনে হচ্ছে তাদের গবেষণায় কোথায় যেন এক বিরাট ফাঁক রয়ে গেছে।
এ দুনিয়া মানুষের জন্যই-মানুষই এতে থাকবে, বাস করবে কিন্তু সারা দুনিয়ায় বর্তমানে চলছে মারণাস্ত্রের মহড়া। কার চেয়ে কে বেশি মারণাস্ত্র তৈরি করতে পারে এ প্রতিযোগিতা। মারণাস্ত্র দিয়ে তো আর পশু-পাখি কিংবা সাগর-মহাসাগর হাঙ্গর কুমীর ধ্বংস করা হবে না। তা দিয়ে নিশ্চয় মানুষকেই ধ্বংস করা হবে। আর যে মানুষকে ধ্বংস করার জন্য এত বিচিত্র আয়োজন তার আবার স্বস্তি নিরাপত্তা কিসের? পরাশক্তিগুলোর কাছে বর্তমানে এমন অস্ত্র মওজুদ রয়েছে যা দিয়ে পৃথিবী নামক এ গ্রহটিকে কয়েকবার ধ্বংস করা যাবে। উপরে যা আলোচনা করা হয়েছে তা যদি ভালভাবে কার্যকর করা যায় তবে সারা বিশ্বে যে নতুন জীবনি শক্তি লাভ করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর যদি কুরআন ও সুন্নাহর পুরো আইন কোথাও বাস্তবায়ন করা যায় তবে সমাজ কাঠামোর অবস্থা কেমন হবে তা কল্পনারও অতীত।
লেখক : সংগঠক ও গবেষক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন