দৈনিক একটি পত্রিকার প্রতিবেদন ‘২৫০ টাকার সুই ২৫ হাজার’ তোলপাড় তুলেছে জনমানসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। প্রতিবেদনটিতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের একমাসের কেনাকাটার অস্বাভাবিক দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ২৫০ টাকার সুই কেনা হয়েছে ১০০ গুণ বেশি দামে মানে ২৫ হাজার টাকায়। ৩/৪ শ টাকা দামের টিস্যু ফরসেপস কেনা হয়েছে ২০ হাজার টাকায়, ৬০ টাকা দামের ইউরিনারি ব্যাগ ১৩০০ টাকায়।
প্রতিবেদনটি মতে, শুধু সুচই নয়, এমন অস্বাভাবিক দামে ঠিকাদারদের কাছ থেকে আরও বেশ কিছু এমএসআর (মেডিকেল সার্জিক্যাল রিকুজিটি) পণ্য কিনেছে সরকারের এই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি। এমন দামে যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হয়েছে, যা পৃথিবীর কোথাও এ দামে বিক্রি হয় না। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মাত্র এক মাসে এই কেনাকাটা করেছে নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের একটি প্রতিষ্ঠানের এমন অস্বাভাবিক দুর্নীতির চিত্রে তোলপাড় চলছে ফেসবুকে। এভাবে সরকারি অর্থ হরিলুটের ঘটনায় ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ। তারা দুর্নীতির সাথে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে কঠোর দাবি তুলেছেন। সেই সাথে ইতিপূর্বে দুর্নীতির এমন বহু ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তি না পাওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকেই।
ফেসবুকে ক্ষোভ জানিয়ে জুমসাদ আলম লিখেছেন, ‘‘বিগত দুই বছর ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই মন্ত্রণালয়ের কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অযোগ্য অপদার্থ মন্ত্রী বিগত দুই বছর যাবত দুর্নীতি করে আসছে অথবা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছে। এত বড় বড় দুর্নীতি করার পরেও কিভাবে এই লোক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব থাকে। উনাকে দায়িত্ব থেকে সরানো হচ্ছে না মানে উপর লেভেল থেকে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। অথবা উপরের লেভেলে এই দুর্নীতির সাথে জড়িত।’’
অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে মাসুদ সাঈদী লিখেছেন, ‘‘এমন রিপোর্ট তো গত ১২ বছরে বহুবার দেখলাম। কিন্তু এ রকম রিপোর্ট প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এমন রিপোর্ট তো কখনো দেখলাম না। এদ্বারা এটা প্রমাণিত হচ্ছে যে, সরকারের আশ্রয়ে প্রশ্রয়েই দুর্নীতি হচ্ছে। আর দুর্নীতিবাজরা তাদেরই নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকছে। দেশবিরোধী, মানবতাবিরোধী এসব দুর্নীতিবাজদের প্রকাশ্যে ফাঁসি চাই।’’
খন্দকার মোমিন লিখেছেন, ‘‘স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কাছেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার প্রত্যাশা না হয় নাই করলাম। কেননা কাক তো কাকের মাংস খাবেনা। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে এই যে এত এত রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে এগুলো কি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে না? বুঝলাম প্রথম আলো একপেশে নিউজ করে এবং শুধু সমালোচনা ই করে তাই প্রথম আলো পড়ি না। কিন্তু এখন তো দেশ রূপান্তর সহ অন্যান্য জাতীয় দৈনিকে ও প্রকাশিত হচ্ছে। এখনো কি নজরে আসে না!’’
খাজা নিজাম উদ্দিনের মন্তব্য, ‘‘দুর্নীতিবাজরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর বঙ্গবন্ধুকে বিক্রি করে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। বাংলার মাটিতে দুর্নীতিবাজদের বিচার হবেই ইন শা আল্লাহ। সব পেশার সব দুর্নীতিবাজদের বিচার করতেই হবে। লুটের মালিকদের মালিকানা থেকে সংবাদ মাধ্যম মুক্ত হোক।’’
অজয় বিশ্বাস লিখেছেন, ‘‘মূল দুর্নীতি হয় মন্ত্রনালয় থেকেই। যারা স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে আছেন তারা এখান থেকে যেতেই চান না! কেনাকাটা, বদলী বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য করে হাজার কোটি কামানো কি অন্য কোথাও সম্ভব?না! তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অধীন সব অধিদপ্তরেরই এক শ্রেণির দুর্নীতি বাজদের কারণে জনগণের টাকা লোপাট হচ্ছে, আর স্বাস্থ্যখাত আজ ধুকধুকিয়ে চলছে!’’
উল্লেখ্য, প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকার এমএসআর পণ্য অস্বাভাবিক দরে কেনাকাটার তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ২০১৯ সালে তদন্ত কমিটি করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, তবে কেউ শাস্তি পায়নি আজও।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন