সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ-ওবায়দুল কাদের

প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় পাখি ও মাছির মতো মানুষ মরেছে বলে স্বীকার করে এজন্য চালকদের বেপরোয়া ও অসংযতভাবে গাড়ি চালনাকেও দায়ী করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিশৃঙ্খল সড়ক ও পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে তিনি বলেন, এটা আমাকে অতিক্রম করতেই হবে।
গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ডিআরইউ আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
সড়কমন্ত্রী বলেন, সড়ক ও পরিবহন সেক্টরে আমরা যত কিছুই করি না কেন, সড়কের বিশৃঙ্খলা ঠেকানো সম্ভব না হলে জনগণ কোনো সুফল পাবে না। তাই অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি সড়ক এবং পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।
সাধারণ মানুষ আইন মানলেও অসাধারণ ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আইন মানানো যায় না বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষকে আইন মানানো যায়। তারা কথা শোনেন; তবে রাজনৈতিক, অসাধারণ, ক্ষমতাবান এবং ভিআইপিদের আইন মানানো যায় না। বাধা দিলে তারা (রাজনৈতিক ব্যক্তি) পুলিশের ওপর আক্রমণ করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নেমে এসেছিল। তবে হঠাৎ ঈদুল আযহায় সড়কে পাখির মতো, মাছির মতো মানুষ মরেছে। সড়ক ও পরিবহন সেক্টরের মন্ত্রী হিসেবে এর দায় আমিও এড়াতে পারি না।
হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বেপরোয়া গাড়ি চালনা। এটা কমাতে পারছি না। বর্তমানে রাস্তা ভালো হওয়ায় গাড়ির গতি বাড়লেও চালকের বেপরোয়া ভাবের কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে।
নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, কে বা কারা এ ব্যবসা করার অনুমতি দিচ্ছে জানি না। তবে ব্যাটারিচালিত যান ইজিবাইক দেশে আসছে লাখে লাখে, যা শহরে তো বটেই, গ্রামের রাস্তাঘাটেও সয়লাব হয়ে গেছে। এতে স্বচ্ছন্দে গণপরিবহণ চলাচলে প্রচ- ব্যাঘাত ঘটছে। তিনি জানান, ঢাকা সিটিতে চলাচলের জন্য মাত্র ৫০ হাজার রিকশার লাইসেন্স আছে। অথচ কমপক্ষে ১৫ লাখ রিকশা ঢাকাতে চলাচল করছে। রাজধানীর যানজট কমাতে এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রিকশা এবং ইজিবাইকের বিকল্প খুঁজে বের করতে হবে।
গণমাধ্যমের প্রতি ওবায়দুল কাদেরের আবেদন
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’-এ প্রশ্নোত্তর পর্বে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজে আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী নন দাবি করে তাকে নিয়ে এ ধরনের কোনো সংবাদ প্রকাশ না করতে গণমাধ্যমের প্রতি আবেদন জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একবার সাধারণ সম্পাদক পদে আমি প্রার্থী হয়েছিলাম। বর্তমানে আমি আওয়ামী লীগের কোনো পদে প্রার্থীই নই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ; নেত্রীর উপর আস্থাশীল। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন যখন হয় আমি মাঝে মাঝে বিব্রত হই, লজ্জাও পাই। মনে অনেক প্রশ্নও জাগে। সম্মেলনকে সামনে রেখে আলাপ-আলোচনা আসে, পত্রিকায় ছবি বের হয়। আমি আপনাদেরকে স্পষ্ট-পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমি আওয়ামী লীগের কোনো পদে প্রার্থী নই।
তিনি বলেন, আমি প্রার্থী হয়েছিলাম যখন জলিল ভাই ছিলেন। নেত্রীর নির্দেশে আমি প্রার্থী হয়েছিলাম। নেত্রী আমাকে প্রার্থী হতে বলেছিলেন, সেজন্য আমি প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলাম প্রকাশ্যে। সম্মেলনের আগে জলিল ভাই হাসপাতালে, তখন নেত্রী আমাকে বললেন, তুমি হাসপাতালে গিয়ে বলো তুমি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছ।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, এরপর আর কখনও আওয়ামী লীগের কোনো পদে আমার প্রার্থিতা ছিলো না। মন্ত্রী হওয়ার জন্য আমার কোনো লবিংও ছিল না। এগুলো আমার ধাতে নেই। আমি বিব্রত বোধ করি, পাশাপাশি ছবির মধ্যে আমার ছবিও থাকে। যখন কেউ আমাকে ফোন করে বলে নিউজ পড়ছি। তখন আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়। ঢাকায় থাকলে প্রতিদিন আমি পার্টি অফিসে যাই। যেদিন নিউজ বের হয়, সেদিন আমি ঢাকায় থাকলেও পার্টি অফিসে যাই না। একেক জন একেক কথা বলবে। আপনাদের অনুরোধ করব আমাকে প্রার্থী হিসেবে লিখবেন না।
তিনি বলেন, আমাদের কর্মীরা-নেতারাÑনেত্রী যা চাইবেন তারা সেটাই চাইবেন। নেত্রী ভালো জানেন কাকে কখন কোথায় দিবেন। প্রার্থিতা দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এনে আমাকে বিব্রত করেন না। কোনো পত্রিকায় যখন নিউজ হয়, আমি বিব্রত হই। গত দুই দিন আমি ঢাকায়, পার্টি অফিসে যাচ্ছি না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। আমি যেভাবে আছি, নেত্রী আমাকে যদি সেভাবে রাখেন, তাতেই আমি খুশি। আমার কোন উচ্চাকাক্সক্ষা নেই।
বর্তমান সিস্টেমেই নির্বাচনে আসবে বিএনপি
দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিকে মধ্যবর্তী ‘তামাশা ও রশিকতা’ দাবি করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রচলিত (এক্সিটিং সিস্টেমে) ব্যবস্থায়ই অংশ নেবে। তিনি বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে কোনো যুক্তিসংগত বা বাস্তবসম্মত তাগিদ বা চাপ সরকার অনুভব করছে না। পার্লামেন্টে সরকার মেজরিটি নিয়ে আছে অন্যদের বাদ দিয়েই। তাছাড়া দেশের ভেতর যারা মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা বলছেন, কোনো চাপ জনগণের পক্ষ থেকে এসেছে? কোন মহল থেকে এসেছে? আন্তর্জাতিক মহল থেকেও বৈধতার প্রশ্ন নেই। এখানে কেউ নির্বাচনে না এলে তাকে জোর করে নির্বাচনে আনতে পারি না।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণের বিষয়ে আমরা দায়ী নই। তারা (বিএনপি) নির্বাচনে আসেনি, আরেকটা নির্বাচন দেয়ার মতো পরিস্থিতিও তো দেশে তারা সৃষ্টি করতে পারেনি। নির্বাচনে না এসে করলেন একটা ভুল। আবার আন্দোলন পরিচালনা করতে জনগণকে নিয়ে নব্বইয়ের মতো আন্দোলনের পরিবেশও তারা সৃষ্টি করতে পারেননি। তাহলে কেন আমরা গায়ে পড়ে একটা মধ্যবর্তী তামাশার নাটক সাজাতে যাব। মধ্যবর্তী রশিকতা করতে যাব।
বিএনপির কমিটির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধু কনভেনশন সেন্টার লাগবে তাদের (বিএনপি) ওয়ার্কি কমিটির মিটিং করার জন্য। অবশ্য সম্মেলন করার পর দলটির ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং হওয়ার খুব একটা নজিরও নেই। কমিটির সংখ্যা তারা বাড়াচ্ছেই। গণতন্ত্র যদি দলে না থাকে দেশে কীভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব? গণতন্ত্র যদি দেশে চান আপনাদের দলে আগে গণতন্ত্র লাগবে।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আপনাদের নিজেদের মধ্যে একে অন্যের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস, সন্দেহ, দ্বন্দ্ব, শত্রুতাÑএগুলো নিয়ে আপনারা কিভাবে জাতীয় ঐক্য করবেন?
বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা করতে গিয়ে কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ অন্যান্য দলের চেয়ে অনেক বেশি গণতান্ত্রিক। আমাদের সম্মেলন একটা নিয়মের মধ্যে হয়। কমিটি হওয়ার পর শেখ হাসিনা ইচ্ছা করলে কমিটির সংখ্যা বাড়াতে পারেন না, কমাতেও পারেন না। অথচ বিএনপি যাকে ইচ্ছে নিচ্ছে, আবার ইচ্ছে হলে বাদও দিচ্ছে। এই ছোট করছে। আবার জাম্বো জেট সাইজের কমিটি করছে।
ভিআইপিরা উল্টো পথে চলে যানজটের সৃষ্টি করেনÑতার এ বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে ‘আলোচনায় থাকতে অনেকে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকেন’ স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর এ মন্তব্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে সেতুমন্ত্রী বলেন, আমি যা বলি তা জনস্বার্থে বলি। মন্ত্রী থাকলেও বলব, মন্ত্রী না থাকলেও বলব। কে কি বলল, সে বিষয়ে আমি নো কমেন্ট।
মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ। এ সময় ডিআরইউ’র কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন