মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পানির নিচে আশুলিয়া

খাল-লেক ভরাট করায় বৃষ্টিতে ডুবেছে বাড়িঘর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে পানির নিচে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া। অথচ কয়েক বছর আগে দিনভর বৃষ্টিতেও শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। ভারি বৃষ্টি হলেও খাল, লেক দিয়ে পানি দ্রুত নেমে যেত। এখন সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যাচ্ছে বাড়িঘর। গতকাল সকালে মুষলধারে বৃষ্টির পর দিনভর বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু ভূমি দস্যুরা খাল-লেক ভরাট করায় বৃষ্টির পানি দ্রুত বের হওয়ার সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে দীর্ঘ সময়ে বৃষ্টির পানি বের হতে না পেরে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় পানিবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। বৃষ্টির পানিতে বসতবাড়ি, দোকানপাট, সিএনজি স্টেশন, শিল্প কারখানা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সাথে চরম জনদুর্ভোগে পড়েন এলাকাবাসী। সকালে শিল্প ও পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মস্থলে যেতে পড়েন সীমাহীন দুর্ভোগে।

গতকাল সকালে বৃষ্টির পর দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে রাজধানীতে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া ঘুরে দেখা গেছে, টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কসহ এ সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন শাখা সড়ক ও অধিকাংশ দোকান, বাজার এবং অলিগলি পানির নিচে। ডুবে গেছে আশুলিয়ার বাইপাইল, জামগড়া, পলাশবাড়ি, ভাদাইল, ইউনিক, ইপিজেড, ছয়তলা ও শিমুলতলা এলাকা। সড়কে পানির কারণে সকাল থেকেই টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড মহাসড়কের ইউনিক থেকে নরসিংহপুর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় গাড়িগুলোকে থেমে থেমে চলতে দেখা গেছে। এতে সড়কের উভয়পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বাইপাইল ত্রিমোড়, আশুলিয়ার ইউনিক, জামগড়া, শিমুলতলা, বুড়ির বাজারসহ বেশ কিছু এলাকায় এলাকা হাঁটু পানিতে ডুবে ছিল।

সকাল ১০টায় আশুলিয়ার টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক দিয়ে নরশিংহপুর থেকে বাইপাইল ত্রিমোড় যাওয়ার সময় ৬তলা থেকে বাইপাইল পর্যন্ত পানিতে ডুবে যাওয়ার চিত্র দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই এমন চিত্রের দেখা মেলে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে। আশপাশের মানুষজন জানান, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এখানে যত্রতত্র খাল ভরাট, লেক ভরাট করার অনুমতি দিচ্ছে না সরকার। যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপনের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদফতর। কিন্তু পর্দার আড়ালে সবই হচ্ছে। ভূমিদস্যু, জমি খেকো ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীরা খাল ও লেকের জমি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছে। কেউ কেউ জমি ভরাট করে ভোগদখল করছেন। ফলে পানি ড্রেন দিয়ে নিচে চলে যাবে বা তুরাগে পড়বে এমন অবস্থা নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেও পানি নিচে নামতেই পারছে না। ফলে আশপাশের বাড়িঘর, দোকান রাস্তা তলিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিন সড়কটিতে দেখা যায়, পোশাক শ্রমিকরা পানি ডিঙিয়েই কর্মস্থলে যাচ্ছেন। অনেকে প্রায় কোমর পর্যন্ত পানি পাড়ি দিচ্ছেন। গার্মেন্টসে কর্মরত নারী শ্রমিকরা অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে কর্মস্থলে যাচ্ছেন বেশি ভাড়া দিয়েই। রাস্তা পানিতে ডুবে যাওয়ায় গণপরিবহনগুলোর চাকা পানিতে ডুবে গেছে এবং খুব ধীর গতিতে চলছে। দিনভর ছিল প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তায় ব্যাপক যানজট। শুধু তাই নয় বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটে, অলিগলিতে পানি জমে গেছে।

ফটো সাংবাদিকরা সড়কটির পানিতে হেটে চলা শ্রমিকদের ছবি তুলতে গেলে ক্ষোভে তারা বলে উঠেন, রাস্তা না ঠিক করে শুধু ছবি তুলতে আসেন কেন? আমাদের এই কষ্ট কেউ দেখার নেই। আমাদের বাসায় পানি উঠেছে সেখানে গিয়ে ছবি তোলেন।

নারী পোশাক শ্রমিক মোছা. মেহেনাজ বেগম। তিনি জামগড়ার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। ভাড়া বাসায় থাকেন। প্রতিদিন সকালে কারখানায় যান ও সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেন। হাটু পানিতে চলতে চলতে নিজের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই এই রাস্তায় পানি উঠে। আর এই ময়লা পানির ভেতর দিয়েই আমাদের সকাল-সন্ধ্যায় যাতায়াত করতে হয়। অফিসে যাওয়ার সময় কাপড় ভিজে যায় আর এই ভেজা কাপড় নিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়। কোনো কোনো সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি। কয়েক বছর আগেও বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকার সড়ক পানিতে ডুবলেও আশুলিয়ার রাস্তা-বাসাবাড়িতে পানি উঠতো না।
জামগড়ায় রাস্তা পাশে টং দোকানে চা বিক্রি করেন মো. রহমত আলী। তার দোকানের নিচের অংশে পানি উঠে গেছে। নিজের দুর্দশার চিত্র তুলে দরে তিনি বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই দোকানের সামনে পর্যন্ত পানি চলে আসে। কখনো কখনো দোকানের ভেতরে পানি উঠে। অথচ কয়েক বছর আগে এমন হতো না। ভারি বৃষ্টি হলেও দ্রুত পানি চলে যেত।

জামগড়া সড়কে পানি নিষ্কাশনের জন্য ঈদের আগে থেকে কাজ করছে সড়ক ও জনপথের এসএস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. লায়ন ইমামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ তিনি পালিয়ে রয়েছেন। তারা বললেন, ঠিকাদারদের এখন পাবেন না। এরা পানি নিষ্কাশনের নামে, রাস্তা মেরামতের নামে নাটক করেন। আর বিল উঠিয়ে নেন। এই চক্রে রাঘববোয়ালরা জড়িত থাকায় ওদের কিছুই হয় না।

আশুলিয়া-ইপিজেড শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক কলোনির বাসিন্দা মোছা. আলেয়া বেগম জানান, ভোর থেকে টিনের চালা বেয়ে ঘরের ভেতর পানি পড়তে শুরু করে। একপর্যায়ে ঘরে পানি ঢুকে হাঁটু সমান ভর্তি হয়ে যায়। শিল্প এলাকায় ড্রেন না থাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই বর্ষা মৌসুমে পানিবদ্ধতায় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বদিউজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ঈদের আগে থেকে কাজ করছি। গতকাল রাত তিনটা থেকে শ্রমিকরা এখন পর্যন্ত কাজ করছেন। তিনি বলেন, এক একটি কারখানা ঘণ্টায় ১০০ লিটার পর্যন্ত পানি ছাড়ে। সেই পানি সরাসরি সড়কে এসে পড়ে। আমাদের সড়কের পানি নির্গমনের জন্য যে পথ বের করা হয়েছিল সেই পথ দিয়ে সড়কের পানি সুন্দর করে যেতে পারবে। কিন্তু যখন এলাকা ও কারখানার পানি সড়কের পানির সঙ্গে মিশে যায় তখন আর সেই পথ দিয়ে পানি যেতে দেরি হয় এবং সড়কে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তবুও আমরা চেষ্টা করছি যেন সড়ক থেকে পানি নামিয়ে ফেলা যায়।

বাইপাইল ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর খসরু পারভেজ বলেন, রাতে বৃষ্টির পর সকালে অনেক বৃষ্টি হয়েছে। এতে ব্যস্ততম এই সড়কটির কিছু জায়গা পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও কোমর সমান পানি জমেছে। এতে করে গাড়িগুলো একেবারেই ধীর গতিতে চলছে। রাস্তার দুই পাশে ড্রেন না থাকার কারণে মাঝে মধ্যেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ অনেক কষ্ট করছে। পানি জমার বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে সওজকে জানিয়েছি। আমাদের এখানে ড্রেনেজ সিস্টেম করার দরকার জানানো হলেও কোনো প্রতিকার হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোঃ+দুলাল+মিয়া ২ জুন, ২০২১, ১:১৭ এএম says : 0
এই পানতে মেয়র দের মাথা ঢুকাইয়া দেওয়া জরুরি ,
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন