শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পাকিস্তানে ভারতের সামরিক অভিযানের চাপ

প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : পাকিস্তানকে একটা সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য ভারতের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ভারত সরকারের ওপর চাপ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন মহল থেকেও দাবি উঠছে এবার পাকিস্তানকে সমুচিত শিক্ষা দেবার জন্য পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালাতে হবে। এই মহলটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ভারতবিরোধী নাগা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে বলছে, স্পেশাল ফোর্স দিয়ে এ হামলা চালাতে হবে। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা পরিণতি কথা বিবেচনা করেই তবে কোনো কিছু করার পরামর্শ দিয়েছেন। ভারতশাসিত কাশ্মীরের উরির একটি সেনাঘাঁটিতে রোববার ভোররাতে একদল বন্দুকধারীর হামলায় ১৭ জন সৈন্য নিহত হবার পর ভারত কীভাবে এর জবাব দেবে তা ঠিক করার জন্য দিল্লিতে সিনিয়র মন্ত্রীদের সাথে এক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারত তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, পাকিস্তানভিত্তিক জয়েশ-এ-মুহম্মাদ নামে একটি জঙ্গি গ্রুপ এই হামলা চালিয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং তার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানকেও একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বলে আখ্যায়িত করেন, যদিও পাকিস্তান এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে। ভারত এখন ধরেই নিচ্ছে উরিতে রোববারের হামলার পেছনে পাকিস্তানের পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। পাকিস্তানকে একটা সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য ভারতের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও ভারত সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সবচেয়ে কড়া মন্তব্যটি ছিল এরকমÑভারতীয়দের আমি আশ্বস্ত করছি, এই ঘৃণ্য হামলার জন্য দায়ীদের শাস্তি পেতে হবে। রোববারের হামলার সম্ভাব্য জবাব কী হতে পারে, তা নিয়ে মি. মোদি গতকাল তার মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, সেনাপ্রধান এবং তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করেছেন।
বিবিসির নিরাপত্তা বিশ্লেষক রাহুল বেদি লিখছেন, ভারতের নিরাপত্তা নীতির সাথে জড়িতদের একটি অংশ বিশ্বাস করেন, পাকিস্তানকে একটি শিক্ষা দেয়া, বার্তা দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তারা মনে করেন, পাকিস্তানের হাতে পারমাণবিক বোমা থাকলেও স্বল্প মাত্রার ঝটিকা একটি সামরিক অভিযান সম্ভব।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা লে জে বিজয় কাপুর বলেছেন, ‘পাকিস্তানকে এখনই দেখাতে হবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্ষমতা কতোটা।’ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও এই মতবাদের পক্ষে। কিন্তু রাহুল বেদি বলছেন, সেরকম অভিযানের পেছনে ঝুঁকি কতো মারাত্মক হতে পারে, তা নিয়ে হয়তো এই তত্ত্বের সমর্থকরা অতোটা ভাবেন না।
তাছাড়া রোববারের হামলার পর ২৪ ঘণ্টারও বেশি পার হয়ে গেছে। ফলে সে ধরনের ঝটিকা সামরিক অভিযানের সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে গেছে। আমেরিকা এবং অন্যান্য বিশ্বশক্তি ই তোমধ্যেই এ বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেছে।
বিশ্লেষক রাহুল বেদি বলছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর বর্তমান কমান্ডের একাংশ মনে করেন, সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে পাকিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর আস্তানায় স্পেশাল ফোর্স দিয়ে হামলা করা সম্ভব। সম্প্রতি মিয়ানমারের ভেতরে নাগা বিদ্রোহীদের দুটো আস্তানায় সেরকম অভিযান চালানো হয়েছে। পাকিস্তানকে রোববারের হামলার জন্য দোষারোপ করে তাদের শিক্ষা দেয়ার উপায় নিয়ে যখন ভারতীয়রা যখন ব্যতিব্যস্ত, পাকিস্তান তখন ক্রমাগত বলছে রোববারের হামলার সাথে তাদের কোনো সম্পর্কই নেই। পাকিস্তানের একজন সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, কিছু হলেই প্রথা মাফিক দোষারোপ না করে ভারতের উচিৎ হামলার তদন্ত করা।
জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী কাশ্মীর বিরোধ নিষ্পত্তির আহ্বান নওয়াজ শরিফের
রক্তের হোলিখেলা বন্ধ করে কাশ্মীরবিষয়ক জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অবিলম্বে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মিয়া নওয়াজ শরিফ। গতকাল জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্যদের কাছে লেখা পত্রে তিনি এ আহ্বান জানান। কাশ্মীরে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’-এর কথা উল্লেখ করে মিয়া নওয়াজ শরিফ বলেন, কাশ্মীর বিরোধ এ অঞ্চলে উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতার একটি উৎস এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের স্থায়ী ৫টি সদস্য দেশের প্রতি আহ্বান জানান যাতে তারা কাশ্মীর জনগণের প্রতি তাদের অঙ্গিকার ও মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টির প্রতি সম্মান জানায়। ডন জানায়, চিঠিতে কাশ্মীর বিরোধ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী নিষ্পত্তির ব্যাপারে পাকিস্তানের অঙ্গিকারের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।
জাতিসংঘ সাধরণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য নিউইয়র্কে অবস্থানরত মিয়া নওয়াজ শরিফ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম প্রাচীনতম অমীমাংসিত কাশ্মীর বিরোধ নিষ্পত্তিতে পি-৫ দেশগুলোর দায়িত্ব পালনেরও আহ্বান জানান। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিয়া নওয়াজ শরিফের বক্তব্যের শীর্ষে থাকবে কাশ্মীর বিরোধ ইস্যু। কাশ্মীরে গত ৮ জুলাই থেকে শুধু লাগাতার অস্থিরতার গতকাল ৭৪তম দিন পর্যন্ত সেখানে ৮৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। ছররা গুলিতে দৃষ্টিশক্তি হারানোসহ আহত হয়েছে এক হাজারেরও বেশি কাশ্মীরের বেসামরিক মুসলিমরা।
প্রশ্নবিদ্ধ ভারতের গোয়েন্দা ব্যবস্থার কার্যকারিতা
প্রায় তিন মাস ধরে অশান্ত হয়ে ওঠা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে উরি সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন জওয়ান নিহতের ঘটনায় দেশটির গোয়েন্দা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। বলা হচ্ছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভেতরে বিদেশি গোয়েন্দাদের ধরপাকড়ের ব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সেনা কর্মকর্তাদের মতে, উরির সেনা ঘাঁটির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা এর ভৌগোলিক অবস্থান। ওই এলাকার চেহারা অনেকটা গামলার মতো। যে গামলার একেবারে নীচের অংশে রয়েছে উরির সেনাঘাঁটি। নিয়ন্ত্রণরেখার উল্টো দিকে পাকিস্তানের এলাকা হল উঁচুতে। ফলে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপার থেকে যথেষ্ট সময় নিয়েই পাকিস্তানি সেনা ও আইএসআই নজরদারি চালিয়েছে।
এছাড়া উরি সেনাঘাঁটির অভ্যন্তরের অনেক খবর ও তথ্য আগে থেকেই জানত হামলাকারীরা। এমনকি ঘাঁটিতে যে দায়িত্ব বদল ঘটছে তাও জানা ছিল হামলাকারীদের। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, পাকিস্তানের দিক থেকে হামলার বিস্তারিত পরিকল্পনা হলেও ভারতীয় গোয়েন্দারা তার কিছুই টের পেলেন না কেন? বিশেষ করে যখন কাশ্মীরে টানা বিক্ষোভের ফলে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
শঙ্কর রায় চৌধুরী বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনা ও জঙ্গি সংগঠনের মধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দাদের চর এখন আর আদৌ আছে কি না সেটাই সন্দেহের বিষয়। আবার ভারতীয় সেনার মধ্যে শত্রুর চর আছে কি না তাও ঠিক মতো ধরা যাচ্ছে না।’ তিনি মনে মনে করেন, এর ফলেই বারবার হামলার সুযোগ পাচ্ছে পাকিস্তানি জঙ্গিরা।
অবশ্য ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা দাবি করছেন, হামলার বিষয়ে আগেই কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছেন তারা। তাদের দাবি, উরি সেক্টরে জঙ্গি অনুপ্রবেশের বিষয়ে ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বরই সতর্ক করা হয়েছিল। এর পর ১৫ সেপ্টেম্বরও আত্মঘাতী হামলার বিষয়ে সতর্ক করা হয়। ফিদায়েন জঙ্গিদের হামলার পাশাপাশি পাকিস্তানের ব্যাট-এর (বর্ডার অ্যাকশন টিম) একটি দল উরিতে অনুপ্রবেশ করে হামলা চালাতে পারে বলেও গোয়েন্দা বার্তায় জানানো হয়েছিল।
বিপরীতে সেনা কর্মকর্তাদের দাবি, নির্দিষ্টভাবে কোথায়, কখন হামলা হবে, তা গোয়েন্দাদের সতর্ক বার্তায় উল্লেখ ছিল না।
উল্লেখ্য, গত রোববার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত একদল লোক কাশ্মীরের উরিতে লাইন অব কন্ট্রোলের নিকটে সামরিক বাহিনীর একটি প্রশাসনিক স্থাপনায় হামলায় চালায়। ওই হামলায় ১৭ সেনা সদস্য ও ৪ হামলাকারী নিহত হন। পরে হাসপাতালে একজন সেনা সদস্য নিহত হলে সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮। এখন পর্যন্ত কোনও সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই হামলার দায় স্বীকার করা হয়নি। তবে হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মোহাম্মদকেই সন্দেহ করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে চলতি বছরের প্রথমদিকে পাঞ্জাবের পাঠানপকোটে ভারতের বিমানঘাঁটিতে হামলার জন্যও ওই সশস্ত্র সংগঠনটিকে দায়ী করেছিল ভারত। জঙ্গি এ সংগঠন পাকিস্তানের সৃষ্টি এবং পাকিস্তানে থেকেই কর্মকা- পরিচালনা করে বলে ভারত দাবি করে আসছে। তবে পাকিস্তান বরাবরের মতো এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, ভারতের অভ্যন্তরে কোন কিছু ঘটলেই পাকিস্তানকে দায়ী করা হয়। আবার কাশ্মীরি জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবি থেকে বিশ্বের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর জন্যই ভারত এ ধরনের অভিযোগ করে বলেও পাকিস্তানের দাবি।
‘কাশ্মীরি শিশুদের বাঁচান’ শীর্ষক বৈশ্বিক প্রচারণা শুরু ব্রাসেলসে
এদিকে ভারতীয় বাহিনীর হাতে কাশ্মীরি শিশুদের হত্যাকা- ও অন্ধত্বের বিরুদ্ধে ‘কাশ্মীরি শিশুদের বাঁচান’ শিরোনামের এক বৈশ্বিক প্রচারণা গতকাল ব্রাসেলসের ইউরোপীয় প্রেসক্লাবে শুরু হয়েছে। সূত্র : বিবিসি, ডন, এএফপি ও আনন্দবাজার পত্রিকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
syed ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ৫:১৪ পিএম says : 0
A war in between these two countries may be devastating for us too.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন