সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ক্যান্টিনে গরুর গোশত রান্না করার প্রতিবাদ নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুকে অনেকেই মন্তব্য করেছন, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতেই এই ধরনের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
গত রোববার (৩০ মে) সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ক্যান্টিনে গরুর গোশত রান্না করার ওই প্রতিবাদ জানায় আইনজীবী ঐক্য পরিষদ সুপ্রিমকোর্ট শাখা এবং বিজয়া পূর্ণমিলনী ও বাণী অর্চনা পরিষদ। তারা একটি আবেদন সমিতিতে জমা দিয়েছেন। সেখানে গরুর মাংস ‘রান্না ও পরিবেশন’ বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ( বার এসোসিয়েশন) বর্তমান কমিটিকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সমালোচকরা বলছেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষের জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ বিরাজ করছে। এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে এসব করা হচ্ছে। সুপ্রিমকোর্ট নির্দিষ্ট কোনো সম্প্রদায়ের জন্য নয়, সব ধর্মের মানুষের জন্য আদালত এলাকা উন্মুক্ত। সেখানে কেন এ ধরনের সংস্কৃতি থাকবে।
গরুর মাংস রান্না বন্ধের আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন- আইনজীবী ঐক্য পরিষদ সুপ্রিমকোর্ট শাখার সভাপতি বিভাস চন্দ্র বিশ্বাস, সম্পাদক অনুপ কুমার সাহা, আইনজীবী সমিতির বিজয়া পুনমির্লনী ও বাণী অর্চনা পরিষদের আহ্বায়ক জয়া ভট্টাচার্য ও সদস্য সচিব মিন্টু চন্দ্র দাস।
গরুর গোশত রান্নার প্রতিবাদের সমালোচনা করে জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, ‘‘যে সমস্ত আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের ক্যান্টিনে গরুর গোশত রান্নার বিরোধিতা করছেন তারা কি শেরাটন সোনারগাঁও, ওয়েস্টিন, রেডিসন, রিজেন্সি হোটেলে খাবার গ্রহণ করেন না? ইসলামে মদ পান হারাম। ঢাকার বিভিন্ন হোটেল ও ক্লাবে মদ্যপানের ব্যবস্থা রয়েছে। মুসলমানরা সেসব হোটেলে যাচ্ছেন, যারা মদ পান করেন না তারাও যাচ্ছেন। তারা অন্যান্য হালাল খাবার খাচ্ছেন। এখন মুসলমানরা যদি দাবি তোলে, ইসলামে মদ হারাম। তাই দেশের কোন হোটেলে, রেস্টুরেন্টে ও ক্লাবে মদ সরবরাহ করা যাবে না। বিষয়টা কেমন হবে?’’
মোহাম্মাদ আলমগীর লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশ এমন একটি দেশ,যেখানে শতকরা৯০% মানুষ মুসলিম।কিন্তু এরপরও এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক সহনশীলতাপূর্ণ একটি দেশ। পার্শ্ববর্তী দেশে আপনদেশেও হিন্দু সম্প্রদায় এতো নিরাপদ ও সুযোগ সুবিধা পায়না,যতটা এখানকার হিন্দুরা পায়।কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক কথা হলো এদেশের হিন্দুরা ৯০%মুসলমানকে এমনভাবে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছে,এবং এতোটাই স্পর্ধা প্রদর্শন করে আসছে যা কোনো হিন্দুপ্রধান দেশেও তারা কখনও করার কল্পনাও করতে পারবেনা। গরুকে তারা দেবতা মেনে পূজা করে,এটা তাদের ব্যাপার।কিন্তু তাই বলে মুসলিম দেশে তারা তাদের মত চাপিয়ে দিবে এটাতো মানা যায়না!এটাতো এমন হলো যে,মুসলমানকে জোর করে হিন্দু হতে বাধ্য করার মতো!গরুর মাংস সুপ্রিম কোর্টের ক্যান্টিনে রান্না হোক অথবা অন্য কোথাও! এটা তাদের বিষয় নয়!তারা খায়না বলে তাদেরকে কেউ খেতেও বলবেনা।তারা খাবেনা।কিন্তু এতোটা স্পর্ধার সাথে সুপ্রিমকোর্টে রিট দায়ের করাটা চরম অপরাধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী।...এর তীব্র_নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জামাল ফেসবুকে গরুর গোশত বন্ধের আবেদনের কপি পোস্ট করে লিখেছেন, “সুপ্রিম কোর্টে সব ধর্মের লোকই আছে। বার ক্যান্টিনে সব ধর্মের লোকই সকালে নাস্তা ও দুপুরে লাঞ্চ করে। ক্যান্টিনে বিভিন্ন আইটেম রান্না হবে এটাই স্বাভাবিক। যার যে আইটেম পছন্দ হবে সেটাই খাবে। সুপ্রিম কোর্ট বার ক্যান্টিনে গরুর মাংস রান্নার প্রতিবাদ দেখে অবাক হলাম!!”
জুনাইদ আলী সাকি লিখেছেন, “শুকর, সাপ, ব্যাঙ, কচ্ছপ, বাদুড়, আরও যা যা সারা বিশ্বের মানুষ খায় সবই রান্না করুক। এভাবে বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারে সুপ্রিম কোর্টের ক্যান্টিন। সারা পৃথিবী থেকে মানুষ আসবে, রান্না করা বিভিন্ন প্রাণীর মজাদার মাংস খেতে! পৃথিবীর বুকে উদার ধর্ম নিরপেক্ষতা প্রমাণ হবে।তয়, কাস্টমারদের পছন্দের খাবার গরু মাংস বন্ধ করতে হবে কেন? গরু মাংসের চাহিদা আছে বলেই তো রান্না করেছে। শুকর, কচ্ছপ, সাপ, ব্যাঙ, বাদুড়ের মাংসের বিক্রি করে লাভ করতে পারলে, সেটা শুরু করুক।”
এফ এম বায়েজিদ লিখেছেন, “পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া বাঁধিয়ে, সাম্প্রদায়িক ইস্যু দাঁড় করাতে চাচ্ছে। লক্ষণ শুভ নয়।”
ওই আবেদনে বলা হয়, ‘আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পারলাম যে, গত ২৯ ও ৩০ মে রাতে সুপ্রিমকোর্ট বার ক্যান্টিনে গো মাংস রান্না করা হয়, রাতে তা খাবারের জন্য পরিবেশন করা হয়। ’
তারা বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ঐতিহ্যগতভাবেই এর সৃষ্টিলগ্ন হতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে কখনই গো মাংস রান্না ও পরিবেশন করা হয় নাই। হঠাৎ করে এই ধরনের তৎপরতায় আমরা বিস্মিত ও হতবাক। আমরা সংশ্লিষ্টদের এহেন তৎপরতার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন