শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

প্রাণঘাতী সুপারবাগ ও ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি

কোভিড রোগীদের জন্য বাড়তি ঝুঁকি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

গত মে মাসে কলকাতার এক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন মধ্য বয়সী এক ব্যক্তি। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ভেন্টিলেটারে দেয়া হয়। কোভিড-১৯-এ সঙ্কটাপন্ন রোগীর প্রাণ বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় স্টেরয়েড ওষুধ দিয়ে তার চিকিৎসা করা হয়, যেটার বিকল্প ছিল না।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন স্টেরয়েড অন্যদিকে শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যা তৈরি করতে পারে নতুন সমস্যা। কলকাতার ওই রোগী দীর্ঘদিন আইসিইউ-তে থেকে ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার পর যখন সুস্থ হয়ে বাড়ি যাবার পথে, তখন ডাক্তাররা দেখেন তার শরীরে ক্যানডিডা অরিস নামে একধরনের ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হয়েছে, যা প্রাণঘাতী এবং যা সারাতে ওষুধ কাজ করে না। ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে ওঠা এই ক্যানডিডা অরিস প্রথম আত্মপ্রকাশ করে এক দশকের বেশি আগে- ২০০৯ সালে এবং বিশ্বের সব দেশে হাসপাতালগুলোর জন্য এই সংক্রমণ হয়ে ওঠে বড় ধরনের শঙ্কার কারণ। পৃথিবীর যে কোন দেশেই মরণাপন্ন যেসব রোগীকে আইসিইউ-তে রাখা হয়, তারা কোনরকম সংক্রমণের শিকার হলে সেটা রক্তপ্রবাহে সঞ্চালিত হবার আশংকা থাকে সবচেয়ে বেশি এবং এধরনের ইনফেকশন থেকে মৃত্যুর হার প্রায় ৭০ শতাংশ।

ভারতে করোনাভাইরাসের বিপর্যয়কর দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর গুরুতর অসুস্থ যেসব রোগীকে আইসিইউ-তে ভর্তি করতে হচ্ছে, তাদের মধ্যে ডাক্তাররা বিপজ্জনক ছত্রাক সংক্রমণের উর্ধ্বগতি লক্ষ্য করছেন। এর মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকোরমাইকোসিস-এর প্রাদুর্ভাবের কথা ইতোমধ্যেই খবরে এসেছে। এই ফাঙ্গাস বিরল, কিন্তু বিপজ্জনক এবং নাক, চোখ এবং খুবই গুরুতর পর্যায়ে মস্তিষ্কে আক্রমণ করে। ভারতে ইতোমধ্যেই ১২ হাজার কেস শনাক্ত হয়েছে এবং ২০০জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন চিকিৎসকরা বলছেন কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে অন্যান্য ফাঙ্গাসের সংক্রমণও বাড়ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আইসিইউতে এক সপ্তাহ বা ১০ দিন থাকার পর এটা ঘটছে।

ক্যানডিডা প্রজাতির ছত্রাক দু ধরনের হয়- অরিস এবং অ্যালবিকান্স। এবং এই ক্যানডিডা ফাঙ্গাস থেকে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। তৃতীয় আরেক প্রজাতির ফাঙ্গাস আছে যার নাম অ্যাসপারগিলাস। এর থেকে র‌্যাশ বা ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং এটা প্রধানত ফুসফুসকে আক্রমণ করে। এর থেকেও মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। পঞ্চাশ লাখের বেশি প্রজাতির ছত্রাক বা ফাঙ্গাস আছে যেগুলোর মধ্যে মানুষের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক হল ক্যানডিডা এবং অ্যাসপারগিলাস। এই দুই প্রজাতির ছত্রাকের সংক্রমণ হলে মানুষ মারা যেতে পারে। ক্যানডিডা একটা জীবাণু যেটা অনেক জিনিসের ওপর লেগে থাকতে পারে, যেমন বাথরুমে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের পর্দায়, কম্প্যুটার স্ক্রিনে, ডাক্তারের স্টেথোস্কোপে এবং রেলের কামরার রেলিংয়ে। ডাক্তাররা বলছেন, ক্যানডিডা অরিস (সংক্ষেপে সি অরিস) ছত্রাকের সংক্রমণ রক্তপ্রবাহে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকসময় তা শ্বাসতন্ত্র, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং শরীরের ভেতরের অঙ্গগুলোকে সংক্রমিত করে। চামড়াতেও সংক্রমণ হয়। অ্যাসপারগিলাস ছত্রাকও পরিবেশের মধ্যে থাকে। সাধারণত ঘর গরম করার জন্য হিটিং সিস্টেম বা এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেমের মধ্যে এই জীবাণু বাস করে।
সাধারণ সময়ে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই ছত্রাকের বীজ আমাদের শ্বাসতন্ত্রে ঢোকা প্রতিহত করে। কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চামড়া, রক্ত নালীর দেয়াল এবং শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের দেয়াল কোভিড-১৯ ভাইরাসের আক্রমণে দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়ায় এই ফাঙ্গাস শ্বাসতন্ত্রে ঢুকে পড়তে পারে অনেক সহজে। কোভিডে গুরুতর আক্রান্ত যেসব রোগীকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয় তাদের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ এই ছত্রাক সংক্রমণের শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহারাষ্ট্র রাজ্যের ওয়ার্ধায় ১ হাজার শয্যা বিশিষ্ট কস্তুরবা হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডক্টর এসপি কালান্ত্রি।

এই ফাঙ্গাসের আক্রমণ শনাক্ত করা সহজ নয়। পরীক্ষার জন্য ফুসফুসের একেবারে ভেতর থেকে নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজন হয়। ওষুধও খুবই দামি। কিছু কিছু ফাঙ্গাস থেকে সংক্রমণের উপসর্গগুলোর সাথে কোভিড-১৯ রোগীর লক্ষণগুলোর মিল রয়েছে। যেমন জ্বর, কাশি এবং নিঃশ্বাস নিতে না পারা। ক্যানডিডা ফাঙ্গাসের বাড়তি উপসর্গের মধ্যে রয়েছে সাদা রং-এর র‌্যাশ বা ক্ষত - যার জন্য একে অনেক সময় বলা হয় ‘সাদা ফাঙ্গাস’। নাক, মুখ, ফুসফুস, পাকস্থলি বা নখের গোড়ায় এই ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা যেতে পারে, যে র‌্যাশ অনেক সময় সাদা ছানার মত দেখায়। এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শরীরে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে অর্থাৎ তা রক্তে চলে গেলে প্রায়ই রক্ত চাপ কমে যাওয়া, জ্বর, পেটে ব্যথা এবং মূত্রনালীর প্রদাহের মত উপসর্গ দেখা যায়। সূত্র : বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন