বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

করোনাসহ বিভিন্ন মহামারি থেকে বাঁচতে রাসূল (সাঃ)-এর চিকিৎসা পদ্ধতি

মুফতি মাওলানা হাফেজ আহসান জামিল | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২১, ১২:১৪ এএম

মানব জাতির জীবন বিধান মহাগ্রন্থ আল কোরআনের সূরা রুম এর ১৪ নং বর্ণিত হয়েছে, জলে ও স্থলে বিশৃঙ্খলা ছেয়ে গেছে মানুষের কৃতকর্মের জন্যই। এর পরিণামে তিনি তাদের কোন কোন কর্মের শাস্তির স্বাদ, তাদের ভোগ করাবেন যাতে তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। আজ এই আয়াত এতটাই বাস্তব যে মানুষ রন্ধ্রে-রন্ধ্রে টের পাচ্ছে, তাদের অপরাধের মাত্রা কতটুকুন হয়েছে। আমাদের অন্যায় আর অপরাধের মাত্রা এতটাই ছাড়িয়েছে যে পুরো শরীর যেন পাপ-পঙ্কিলতায় আজ ভরপুর। আমাদের সামাজিক লেনদেন ওঠা বসা চলা ফেরা ব্যবসা-বাণিজ্য চাকুরি যা কিছু করছি না কেন, সব কিছুতেই যেন অন্যায় আর অসৎকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। এমনকি মুখে যা বলছি পরকালের মুক্তির আশায় আর আল্লাহর ভয়ে যে নামাজ আদায় করছি সেখানেও দুনিয়াবী চিন্তায় মগ্ন। কখন নামাজ শেষ করবো আর বাহিক্যতায় মগ্ন হবো। আর এজন্যই একের পর এক রোগ-ব্যাধি ও ঐশী আজাবের সম্মুখীন হচ্ছি। এর মূল কারণ আমাদের কৃতকর্মকেই দায়ী করতে হবে। সমাজ ও দেশের অধিকাংশ মানুষ যখন পাপ ব্যভিচার অন্যায় আর স্বীয় প্রভুকে ভুলতে বসে, তখন ঐ মহান রবের পক্ষ থেকে শাস্তি অবধারিত হয়ে যায়। আর মহাগ্রন্থ আল কুরআনে সেদিকেরই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তোমাদের কৃতকর্মের কারণেই তোমাদের উপর বিপদ নেমে আসে। অথচ তিনি অনেক কিছুই উপেক্ষা করে থাকেন। (সুরা শুরা আয়াত ৩০)।
বর্তমানে পুরো পৃথিবী বাসির জন্য মহাবিপদ ও আতঙ্কের কারণ হচ্ছে করোনা ভাইরাস। উদঘাটন করলে দেখা যাবে যে এটিও কোন না কোন ভাবে আমাদের হাতেরই কামাই। এটি একটি প্রাণঘাতী ভাইরাস। এই প্রাণঘাতী মহামারী কোভিডি-১৯ এ প্রায় পুরো পৃথিবী ছেয়ে গেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশই এই প্রাণঘাতি ভাইরাসে সংক্রমিত। মৃত্যুর সংখ্যাও আজ দাড়িছে লক্ষ লক্ষ । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত ১১ ই মার্চ ২০২০ এটিকে মহামারি ঘোষণা দিয়েছে। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে ইতিমধ্যে বাংলাদেশও আক্রান্ত হচ্ছে। মৃত্যুবরণ করছে অনেকেই। আর এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। তাই এই মহামারী ভাইরাস থেকে আত্মরক্ষা পেতে বেশী বেশী তওবা করা উচিৎ। মহান রবের কাছে আত্মসমর্পণ করা উচিৎ। তিনিই এ থেকে পরিত্রাণ দিতে পারেন এই বিশ্বকে। তিনি মহাশক্তির আঁধার। তার শক্তির বাইরে কেউ নেই। তাই তার কাছেই সাহায্য ভিক্ষা চাওয়া উচিৎ। যখন এই প্রাণঘাতী ভাইরাস, করুণার প্রতিকার ও প্রতিরোধে, বিশ্ব চিন্তিত ও ব্যাকুল আর মহা বিপদগ্রস্ত তখনও ইসলামে রয়েছে।
এর উত্তম চিকিৎসা যা সুরা নাহলে বর্ণিত হয়েছে, আপনার পালনকর্তা মৌমাছিকে আদেশ দিলেন। পাহাড়, গাছ ও উঁচু চালে আবাসস্থল তৈরি করো। এরপর সব ধরনের ফল থেকে খাও। আর আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথ সমূহে চলাচল কর। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানি নির্গত হয়। মানুষের জন্য রয়েছে তাতে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল স¤প্রদায়ের জন্যে রয়েছ নিদর্শন। এ ছাড়া বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে হাদিসের কিছু নির্দেশনা ও সতর্কবার্তা পাওয়া যায়। একটি বর্ণনায় দেখা গেছে সিরিয়ায় মহামারী দেখা দিলে ওমর রাদিয়াল্লাহু তার গুরুত্বপূর্ণ ক‚টনৈতিক সফর স্থগিত করেন। (বোখারী৫৭২৯)
আর তিরমিজির হাদীসে পাওয়া যায় । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম বলেন বেশিরভাগ মহামারিই সংক্রামক। তাই রাসূল (সাঃ) মহামারির সংক্রমণ রোধে, আক্রান্ত অঞ্চলে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছেন। মুমিন ঈমান ও ইসলামের সঙ্গে ধৈর্য্য ধারণ করবে। তাই মহামারি ব্যাপারে মহানবী (সাঃ) বলেন, কোথাও মহামারী দেখা দিলে, সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে, সেই জায়গা ছেড়ে চলে এসো না। আবার কোন এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করে থাকলে, সেই জায়গায় গমন করোনা। রোগ প্রতিরোধে বিশ্বনবী (সা:) এর আমল হলো মুআব্বিজাত। আর মুআব্বিজাত হল সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস। এসকল সূরা মানুষের রোগ প্রতিরোধ করে। তাই সুস্থ ও অসুস্থ সকলের উপর এর আমল করা। এ সূরা গুলো পড়ে শরীরে ফুক দেয়া। এছাড়াও হাদিসে মধু ও কালোজিরার কথা বলা হয়েছে। এক হাদীসে বলা হয়েছে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কালোজিরা ব্যবহার করো। কালোজিরায় রয়েছ সাম ছাড়া প্রত্যেক রোগের প্রতিষেধক। আর সাম হল মৃত্যু। (বুখারী)
করোনাসহ বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচার দোয়া। আবু দাউদ শরীফের হাদীসে এসেছে. আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনু-নি,ওয়াল জুজামি,ওয়া মিন সাইয়িইল আসকাম। অর্থ: হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে কুষ্ঠরোগ, মস্তিষ্কের বিকৃতি ও সব ধরনের দুরারোগ্য থেকে মুক্তি চাচ্ছি। আবু দাউদে আরেকটি হাদিস পাওয়া যায় রাসূল (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় ৩ বার বলবে সকাল হওয়া পর্যন্ত ওই ব্যক্তির ওপর আকস্মিক কোনো বিপদ আসবে না। আর যে ব্যক্তি সকালে ৩ বার এই দোয়া পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার উপর কোন বিপদ আসবে না। ‘বিসমিল্লাহিল্লাযি লাইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামায়ি ওয়াহুয়াস সামীউল আলীম।’ অর্থ : আল্লাহর নামে যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী। এই মহাবিপদে যার কোন মেডিসিন এখনো আবিষ্কার হয়নি। এই দুয়াগুলো আমরা পড়তে পারি। আর বেশি বেশি করে তওবা করতে পারি।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
জোবায়ের খাঁন ৪ জুন, ২০২১, ৩:০৩ এএম says : 0
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) চিকিৎসক ছিলেন না। কিন্তু নবীজী (সা.) ১৪০০ বছর আগে উম্মতের মানসিক ও দৈহিক রোগ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেসব মূল্যবান তথ্য প্রদান করে গেছেন, তা যুগে যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য একটা সুস্পষ্ট পথ পদর্শক।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ৪ জুন, ২০২১, ৩:০৪ এএম says : 0
নবী করিম (সা.) নামাজকে আরোগ্যদানকারী হিসেবে অভিহিত করেছেন। উনার কথাটির বিশ্লেষণে যাওয়া যাক­, সুস্থ দেহ ও মনের জন্য একান্ত জরুরি বিষয় হচ্ছে ব্যায়াম। যা নামাজের মাধ্যমেই উত্তমভাবে পালন করা যায়।
Total Reply(0)
কামরুল ইসলাম ৪ জুন, ২০২১, ৩:০৪ এএম says : 0
হাদিস শরিফে বিভিন্ন রোগ ও প্রতিষেধকেরও উল্লেখ আছে। যেমন­ নবীজী মেহেদিকে মাথাব্যথার প্রতিষেধক বলেছেন। তিনি এটাকে ফোঁড়া পাকায় এবং কাঁটা বিধলেও ব্যবহার করতেন। সূরা নাহলে মধুকে শেফাদানকারী ঘোষণা করা হয়েছে।
Total Reply(0)
নূরুজ্জামান নূর ৪ জুন, ২০২১, ৩:০৫ এএম says : 0
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আজ এটাই প্রমাণ করেছে, মধু অগণিত রোগের ওষুধ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন। তবে হ্যাঁ, মধু কোন রোগে কতটুকু ব্যবহার প্রয়োজন সে বিষয়ে গবেষণা করার দায়িত্ব চিকিৎসকদেরই।
Total Reply(0)
ক্ষণিকের মুসাফির ৪ জুন, ২০২১, ৩:০৫ এএম says : 0
হাদিসে কালোজিরা ও সিনাকে সর্বরোগের ওষুধ বলা হয়েছে। সিনা মস্তিষ্ক পরিষ্কার, বেদনানাশক, কৃমিনাশক, মাথাব্যথানাশক, গিঁটবাত ও নিউমোনিয়া রোগে উপকারী। অপর দিকে কালোজিরা বিভিন্ন ঠাণ্ডাজাতীয় ব্যাধির ওষুধ ছাড়াও যকৃৎ, পাকস্থলী, মূত্রাশয়ের শক্তিবর্ধক।
Total Reply(0)
রুকাইয়া খাতুন ৪ জুন, ২০২১, ৩:০৬ এএম says : 0
বীজী আমাদের ক্ষুধার সাথে সামঞ্জস্যশীল এবং পরিমিত আহারেরও পরামর্শ দিয়েছেন।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন