করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আমের জন্য বিখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলছে লকডাউন। এ অবস্থায় মধু মাসে আমের ব্যবসায় ধাক্কা লাগলেও জুনের শুরু থেকেই জমে উঠেছে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বগুড়ার ফলের বাজার।
বগুড়ার স্টেশন রোডের ফলের আড়ত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জমজমাট থাকে। টানা ১৮ ঘণ্টা চলে মধু মাসের রসালো ফল কেনাবেচা। শুধু বৃহত্তর রাজশাহী জেলা নয়, উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলায় উৎপাদিত সব ধরনের আম বগুড়ার মৌসুমী আড়তে কেনাবেচা হয়। এর সাথে আছে টসটসে রসালো লিচু ও কালো জাম। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় দিনাজপুরের বিখ্যাত লিচুর পাশাপাশি রাজশাহী, জয়পুরহাট ও ঈশ্বরদীর সুস্বাদু লিচুও। এসব রসাল ফল শুধু উত্তরাঞ্চলেই নয়, যমুনা পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ রাজধানী ঢাকা ও পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। পাকা আম-জামের রঙিন রসে শিশু-কিশোরের ঠোঁট রাঙায়। সাধ্য-সামর্থ্য থাকায় কারো জন্যই নয় আয়াস সাধ্য।
শুধুমাত্র মধু মাসের ফল ব্যবসার কারণে বগুড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আব্দুল গফুর। তিনি জানালেন, জুন মাসের প্রথমদিনই তিনি ৪ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন। আর গতকাল পর্যন্ত দু’দিনে বিক্রি বেড়ে সাড়ে ৯ লাখ টাকা হয়েছে।
এক হিসাবে দেখা গেছে মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে স্টেশন রোডের পাইকারি ফলের আড়তে জমজমাট কেনাবেচা চলছে। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ১৮ ঘণ্টায় এক কোটি ৯০ লাখ থেকে আড়াই কোটি টাকার আমসহ মধু মাসের অন্যান্য ফল কেনাবেচা হয়। যারা শুধু আম বিক্রির সাথে জড়িত তাদের কথায় এবার তিন মাসে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার আম কেনাবেচা হতে পারে।
লিচুর পাইকাররা জানালেন, মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বগুড়ায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার কেনাবেচা ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। সব মিলিয়ে গত বছর করোনা সঙ্কটের শুরুর পরও বগুড়ার ফলের আড়তে তিন মাসে ৫০০ কোটি টাকার বেনাবেচা হয়েছিল। এবার সেই অঙ্ক ৬৫০ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা করছেন ফল ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা।
বগুড়ার পাইকারি ফলের আড়তের প্রবীণ ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট আমদানিকারক আলহাজ মুকুল হোসেন ইনকিলাবকে জানান, ক্রেতা বিক্রেতা সবাই আড়তে মাস্ক পরে কেনাবেচা করেন। স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য আড়তে মনিটরিং করা হয়। আর ফল ব্যবসায়ী সমিতির অনুরোধে পুলিশও এসে তদারকি করে।
বগুড়ার এই আড়তে ভোর বেলা ট্রাক এসে ফল নামিয়ে দিয়ে যায়। সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যেই খুচরা ব্যবসায়ীরা দরদাম করে ফল নিয়ে যান। এরপর শুরু হয় পাইকারদের কালেকশান পর্ব। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। একদিনের ১৮ ঘণ্টাই চলে দেশী ফলের লোড আনলোড, বেচাকেনা ও কালেকশান। সব মিলিয়ে মধু মাসে টানা ৩ মাস চলে ফলচাষি, গাড়ির মালিক, খুচরা ও ফুটপাতের ব্যবসায়ী, কুলি মজুর, ভ্যানচালকসহ কয়েক হাজার মানুষের আয় রোজগার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন