বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ) প্রস্তাবিট বাজেট নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষিত বাজেট কর্মহীন মানুষ ও সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনীভূক্ত মানুষসহ সকল দরিদ্র জনগোষ্ঠির খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ সকল শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।
গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বিজিএপিএমইএ বলেছে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে বাংলাদেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ^ ব্যাংক ৫ দশমিক ১ শতাংশ, এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক ৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং আইএমএফ ৫ শতাংশ ধারণা করলেও অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছেন। আশা করছি, বিগত বছরের ন্যায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ধারনাকে ভুল প্রমানিত করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এ হার অর্জিত হবে।
তাই করোনা সংক্রমনজনিত ২য় ঢেউ এর বর্তমান জাতীয় ও বৈশি^ক অর্থনৈতিক সংকটকালীন সময়ে স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাস্তবধর্মী বাজেট উপস্থাপন করায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তথা সরকারকে এসোসিয়েশনের পক্ষ হতে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
বিজিএপিএমইএ’র মতে, সরকার করোনা মহামারিজনিত সঙ্কট হতে উত্তরণে ব্যবসাবান্ধব বাজেট ঘোষনা করলেও শতভাগ রফতনিমূখী ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকৃতির গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্পখাতটি বরাবরের ন্যায় কাঙ্খিত প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হয়েছে। এটি একটি শতভাগ রফতানিমুখীখাত। উৎপাদিত পণ্যের শতভাগই ব্যাক-টু-ব্যাক এল/সি এর মাধ্যমে দেশীয় অন্যান্য রফতানিকারী খাতের অনুকূলে সরবরাহ হয়ে থাকে। জাতীয় রফতানি নীতি, বস্ত্র নীতি ও শিল্প নীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ রফতানিকারকদের জন্য সমসুযোগের বিধান নির্ধারিত হলেও এ সেক্টরটি কোন সময়ই সমসুবিধা প্রাপ্ত হয়নি। বিজিএপিএমইএ বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স অন্যান্য রফতানিকারক খাতের ন্যায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করলেও ঘোষিত বাজেটে তা পূর্বের ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ হতে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিাতিতে আর্থিক সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে কর্পোরেট ট্যাক্স সবুজ কারখানার জন্য ১২ শতাংশ এবং অন্যান্য কারখানার জন্য ১৫ শতাংশ নির্ধারনের সংশোধিত প্রজ্ঞাপনের আবেদন জানিয়েছে।
এ সেক্টরের সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকৃতির। করোনাজনিত কারনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকৃতির শিল্প প্রতিষ্ঠানই সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বিধায় উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হতে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ এ ধার্য্য করে প্রজ্ঞাপনের আবেদন জানাচ্ছি।
এক্সেসরিজ শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের উৎপাদনে অনেক সময় অভ্যন্তরীণ বাজার হতে বৈদেশিক মূদ্রায় ব্যাক-টু-ব্যাক এল/সি এর মাধ্যমে কাঁচামাল ক্রয় করে রফতানি করা হয়ে থাকে। এ ধরনের ক্রয়েও সাধারণ ক্রয়ের ন্যায় আয়কর পূর্বের ন্যায় বলবৎ রাখা হয়েছে। এরূপ আয়করের কারনে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রতিষ্ঠান রফতানির সক্ষমতা হারায় বিধায় এই এসোসিয়েশন বাজেটে এরূপ আয়করের অব্যাহতি চাওয়া হলেও তা প্রদান করা হয়নি। এ কারনে সংসদে বাজেট অনুমোদিত হওয়ার পূর্বেই বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অর্থমন্ত্রীর নিকট আবেদন জানায়।
রফতানিকে অধিক প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য স্থাানীয়ভাবে সংগৃহীত কয়েকটি সেবা ও পণ্যে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হলেও কনসালটেন্সী, শ্রমিকের কল্যাণ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম যেমনÑ পিকনিক, চিকিৎসা সেবা, রফতানির কাজে নিয়োজিত গাড়ি ও জেনারেটরের জ্বালানি ইত্যাদি ক্রয়ে মূসক প্রযোজ্য রয়েছে। রফতানিকে উৎসাহিত করতে রফতানি শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে স্থানীয় বাজার থেকে সংগৃহীত পণ্যে ও সেবায় ভ্যাটমুক্ত এবং মূসক-১৯ দাখিল থেকে অব্যাহতি প্রদানের অনুরোধ করা হলেও তা করা হয়নি। এজন্য এ বিষয়টিও বিবেচনার আহবান জানিয়েছে।
বিজিএপিএমইএ’র মতে, রফতানিকে উৎসাহিত করতে ৩৫টিরও অধিক পণ্য আর্থিক প্রণোদনার আওতায় নেয়া হয়েছে বহু বছর পূর্বে। গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এবং প্যাকেজিং শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ শতভাগ রফতানিমূখী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প হওয়া স্বত্বেও এ সুযোগ পায়নি। তৈরী পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে দু’টি উপাদান কাজ করে থাকে, যার একটি হচ্ছে বস্ত্র এবং অপরটি এক্সেসরিজ। পোশাক শিল্পের গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্যের পুরো চাহিদাই স্থাানীয়ভাবে পূরণ হচ্ছে। পোশাক খাত নগদ সহায়তা/ডিউটি ড্র-ব্যাক এর সুবিধা প্রাপ্ত হলেও এ সেক্টর কখনও আর্থিক প্রনোদনা প্রাপ্ত হয়নি। রফতানি নীতি আদেশের ৪.১০.১ অনুচ্ছেদে সাবসিডি (নগদ সহায়তা) সম্প্রসারণের এবং জাতীয় শিল্প নীতির ৪.৮ অনুচ্ছেদে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত খাত (যেমন: গার্মেণ্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং) এর অনুকূলে নগদ প্রণোদনা (ক্যাশ ইনসেনটিভ) ব্যবস্থাাকে যুগোপযোগী করার উল্লেখ রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এবং রফতানির স্বার্থে এ শিল্প খাতের গুরুত্বপূর্ন অবদানের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার প্রদত্ত আর্থিক প্রণোদনা এ সেক্টরেও প্রদানের জন্য প্রস্তাব করা হলেও তা বিবেচনা করা হয়নি। বর্তমানে ১৮ শতাধিক গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে প্রচ্ছন্ন রফতানির বিপরীতে শেয়ার অনুপাতে/ন্যূনতম ১ শতাংশ রপ্তানি প্রণোদনা প্রদানের জন্য আবেদন জানায় বিজিএপিএমইএ।##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন