শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রতিষ্ঠার পর মুফতি জসিম উদ্দীন রহমানীসহ ৫০ সন্দেহভাজনকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছে সিটিটিসি

প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঢাকা মহানগরীতে কাজ শুরু করলেও দেশব্যাপী অভিযানের ক্ষমতা পেয়েছে এ ইউনিটটি
স্টাফ রিপোর্টার : জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধে কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট গঠনের পর মুফতি জসিম উদ্দীন রাহমানীসহ ৫০ সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে এ ইউনিট। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এ ইউনিটটি প্রথমে শুধু ঢাকা মহানগরীতে কাজ করলেও এখন একে দেশব্যাপী অভিযান চালানোর ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬১১ জনবল নিয়ে সিটিটিসির যাত্রা শুরু হয়। তাদের মধ্যে একজন ডিআইজি, একজন অতিরিক্ত ডিআইজি, চারজন ডিসি, ১০ জন এডিসি, ২০ জন এএসপি, ৪০ জন ইন্সপেক্টর আছেন। এ ইউনিটে ২০ থেকে ২২টি দল আছে।
সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাবাদে অর্থায়ন, সন্ত্রাসবাদে সহায়ক অপরাধগুলো প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা এ ইউনিটের মূল উদ্দেশ্য। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, অভিযান পরিচালনা, মামলা রুজু, তদন্ত এবং জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের পর্যবেক্ষণে রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি জঙ্গিরা যেভাবে মাথাচাড়া দেয়ার চেষ্টা করেছিল, এ কারণে ইউনিটের কাজের পরিধি বাড়ানো ও ধরন কিছুটা পাল্টানো হয়েছে। সিটিটিসির তৎপরতায় জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়েছে। এ কর্মকর্তা আরো জানান, এ ইউনিটকে আরো শক্তিশালী করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এতে জঙ্গি দমনে আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখা যাবে। সিটিটিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি জঙ্গিরা দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছে কিংবা আত্মগোপন করছে। গুলশান, শোলাকিয়া, কল্যাণপুর, আজিমপুরসহ আরো কয়েকটি স্থানে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। ফলে জেলায় জেলায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এক অফিস আদেশে কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে সারাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানোর ক্ষমতা দেয়া হয়। আইজিপির পূর্বানুমতিতে দেশের যেকোনো জায়গায় তিনটি শর্তসাপেক্ষে অভিযান চালাতে পারবে সিটিটিসি। এতে বলা হয়, ঢাকা মহানগর এলাকার বাইরে জঙ্গি ও উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি ও তল্লাশি অভিযান, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়করণ, জিম্মি উদ্ধারসহ বিশেষায়িত অভিযান ও আইনসঙ্গত কাজ করতে পারবে সিটিটিসি। ঢাকার বাইরে অভিযান পরিচালনার সময় সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) বা মেট্রোপলিটনের কমিশনারকে অভিযানের বিষয়ে জানাতে হবে এবং অভিযান পরিচালনাসহ সিটিটিসি ইউনিটের অন্যান্য কাজের সময় দেশের প্রচলিত আইন ও বিধিগুলো অনুসরণ করতে হবে। পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গোপনীয়) ঢাকা মহানগরের বাইরে সিটিটিসি মোতায়েনের বিষয়টি সমন্বিত করবেন এবং তিনিই আইজিপিকে এসব বিষয় জানাবেন।
চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় ইউনিটের সদস্যরা রাজধানীর বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও টঙ্গীতে একই রাতে একযোগে অভিযান চালায়। এর মধ্যে বাড্ডার সাঁতারকুল এলাকার জিএম বাড়ির একটি বাসায় একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালাতে গিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের এক পুলিশ পরিদর্শক গুলিবিদ্ধ হন। ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান সংলগ্ন নবোদয় হাউজিংয়ের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। গুলশান, কল্যাণপুর, আজিমপুরেও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন এ ইউনিটের সদস্যরা। এ ছাড়া জঙ্গিদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন সিটিটিসির সদস্যরা। এক জায়গায় তারা একাধিকবারও অভিযান চালিয়েছেন জঙ্গিদের ধরতে। সিটিটিসির চারটি বিভাগ আছেÑ কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ, সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ, ক্রাইমসিন ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ। চারটি বিভাগই এখন জঙ্গিদের নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ইউনিটটি গঠনের পর থেকে ২১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্লগার হত্যা এবং জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করার পর এসব মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর তদন্ত এখনো চলছে। গ্রেফতার করা হয়েছে সন্দেহভাজন ৫০ জঙ্গিকে। রাজধানীর গাবতলীর চেকপোস্টে পুলিশের এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা হত্যাকা-ের তদন্তের মধ্য দিয়ে এ ইউনিট মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, যেসব মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি, সেগুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সবগুলো জঙ্গি সংশ্লিষ্ট। এ কারণে অনেক বিষয় ভাবা হচ্ছে। অনেক মামলার আসামিদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। মূলত এসব কারণে বাকি মামলাগুলোর তদন্ত শেষ হয়নি। তবে শিগগিরই মামলাগুলোর তদন্ত শেষ করা যাবে বলে তিনি আশা করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন