শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ধর্মবিদ্বেষ ছড়ালে ধ্বংস হয়ে যাবে সমাজকাঠামো

ভাষ্যকার | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০২১, ১২:০৫ এএম

রাজধানীসহ সারাদেশে অনেক বয়স্ক শ্রমিক ও রিকশাচালক দেখা যায়। অনেক বৃদ্ধ শ্রমজীবী মানুষ সবসময় বিশেষ করে এই করোনাকালে বাংলাদেশে চোখে পড়ে। এরা নৈতিকভাবে অনেক দৃঢ়। উচ্চাভিলাষ, লোভ ও শর্টকাট বিত্তবান হওয়ার লালসা তাদের নেই। জীবনধারণ ও প্রয়োজন পূরণের পরিমাণ জীবিকাতেই তারা সন্তুষ্ট।

অনেক সময় মূল পারিশ্রমিকের বাইরে তাদের বাড়তি টাকা দিলেও তারা নিতে চান না। বলেন, আমরা ভিক্ষুক নই। সাহায্য চাই না। অন্যের টাকা তো অন্যায়ভাবে নেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। শ্রমিক শ্রেণীর মাঝেই এমন শত শত ঘটনা দেখা যায় যে, অনেক টাকা পয়সা গয়নাগাটি ও মূল্যবান সামগ্রী পেয়েও তারা মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেন, থানায় জমা করেন।

অনেক শিক্ষিত বিত্তবানের মধ্যে দেখা যায় এর উল্টো চিত্র। মানুষের নৈতিকতা জন্মায় তার ধর্ম ও নৈতিকবোধ থেকে। বাংলাদেশে লাখো কিশোরী-তরুণী এমন রয়েছে, যারা নিজের পবিত্রতাকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মহিলা মাদরাসার লাখো ছাত্রী নৈতিকতা ও সম্মান নিয়ে পড়াশোনা করছে। অনেক নারী কায়ক্লেশে জীবন কাটালেও নিজের সম্মান ও নৈতিক অবস্থান থেকে এক চুল নড়তে নারাজ।
অপরদিকে উচ্চাভিলাষ ও লোভ অনেক মেয়েকে বিপথে নিয়ে যায়। এক্ষেত্রে বাবা-মা অভিভাবকের উদাসীনতা চরমভাবে দায়ী। অনলাইনে পরিচয়, বিলাসবহুল পার্টি, অবাধে ছেলেমেয়েদের অজানা ভ্রমণ, মাদক, শেষ পর্যন্ত বিদেশে পাচার, নির্যাতন এদেশে দেখা যাচ্ছে। এর পেছনে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করলেও এই মেয়েদের পারিবারিক শিক্ষার চরম অভাব ও অভিভাবকদের ক্ষমাহীন উদাসীনতা অধিক দায়ী।

লকডাউনে মানুষ যখন অর্থ সঙ্কটে, গত ১৫ মাসে আড়াই কোটি মানুষ গরীব হয়ে গেছে। তখন সমাজের যে শ্রেণীর বাবা-মা টিনএজার ছেলেমেয়েদের পার্টি করার জন্য হাজার হাজার টাকা দেন, তাদের মানবিক বোধের অভাব স্পষ্ট।

এমন অবস্থায় সমাজের শৃঙ্খলা ও হাজার বছরের নৈতিক কাঠামো ধরে রাখার দায়িত্ব সকলের। সরকার, প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ এ উদ্দেশ্যে কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। পাশাপাশি এজন্য সামাজিক আন্দোলনও প্রয়োজন। বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে গণমাধ্যমকে।

বাংলাদেশে সমাজ কাঠামো ও নৈতিক শৃঙ্খলা বিনির্মাণ এবং রক্ষায় ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। একটি শিশু মুসলিম পরিবার থেকে যখন উঠে আসে, তখন তার প্রথম নৈতিক উন্মেষ ঘটে মসজিদ থেকে। কোরআন পাঠ থেকে। ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধ পারিবারিকভাবে তাকে মুসলমান বানায়। এক্ষেত্রে আলেম-উলামা, ইমাম, উস্তাদ, মুরব্বী, দাদা-দাদী, নানা-নানী প্রমুখের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

ধর্মীয় শ্রেণীর মর্যাদা ধরে রাখা রাষ্ট্র ও সমাজের মৌলিক দায়িত্ব। ধর্মীয় বিধান প্রতিক ও নিদর্শনের সম্মান ঊর্ধ্বে তুলে রাখাও সমাজেরই কর্তব্য। এ না হলে সামাজিক শৃঙ্খলা তছনছ হয়ে যায়। নৈতিক মূল্যবোধ স্রোতের টানে ভেসে যায়। এজন্য রাষ্ট্র ও বিচারালয়ের অবমাননা যেমন এরচেয়ে বড় ও ক্ষতিকর হচ্ছে ধর্মের অবমাননা। কারণ, ধর্ম প্রতিটি নাগরিকের দৈনন্দিন জীবনকে পরিবেষ্টন করে আছে।

শিক্ষক একজন মানুষ। মানুষ হিসাবে একজন শিক্ষকের ভুলত্রুটি বা অপরাধ হতেই পারে। কিন্তু এতে করে গোটা শিক্ষক সমাজকে আঘাত করা ন্যায়বিচার নয়। একজন আলেম ও ধর্মীয় ব্যক্তির অবস্থান এরচেয়েও নাজুক। ব্যক্তি হিসাবে সকলেই আইনের দৃষ্টিতে সমান। কিন্তু এক দু’জনের মানবীয় ভুলের কারণে গোটা সম্প্রদায়কে বিচার করা মোটেও সঠিক কাজ নয়। যিনি অপরাধী তার শাস্তি হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে, খেলাচ্ছলে অসত্য প্রচার বা অমূলক প্রপাগাণ্ডা জাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

সমাজ পরিচালনা ও একে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সঠিক পরিকল্পনা, উদ্যোগ ও উপযুক্ত লোকেদের লালন করা অপরিহার্য। যুগ যুগ ধরে এদেশের সমাজকে ধর্ম ও নৈতিকতার, সততা ও নিষ্ঠার, কল্যাণ ও মানবতার শিক্ষা যারা দিয়ে এসেছেন, যাদের ঈমান আমল আখলাক শিক্ষা বয়ান খুতবা ওয়াজ নসিহত থেকে দেশ ও জাতি চরিত্র, নৈতিকতা, সততা, নিষ্ঠা, মানবিকতা ও মূল্যবোধের আলো পেয়েছে, সুযোগে তাদের সম্মানহানি কোনো বিবেকবান করতে পারে না।

কারণ, যদি এই পথপ্রদর্শক শক্তিটি আস্থা হারায়, তার ঐতিহ্যের মিনার ভেঙে পড়ে, তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। সমাজ এখন যেখানে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে প্রচণ্ড গতিতে সেটি পেছন দিকে ছুটে গিয়ে গহীন খাদে নিপতিত হবে।

কেননা, বাংলাদেশের সমাজের মানসিক গঠন ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কোনো সাময়িক পরিস্থিতিতে মিডিয়া অসাবধানতার সাথে মজার মজার গল্প তৈরি করলে, অস্পষ্ট সূত্র কিংবা কল্পনাপ্রসূত মূলের ভিত্তিতে মুখরোচক কাহিনী বানালে পরিণতিতে জাতিকে দুঃখজনক খেসারত দিতে হবে। নিজের প্রতিটি চিন্তা ও কথার জন্য আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কাছে প্রতিটি মানুষকে হিসাব দিতে হবে।

যদি ধর্মীয় বিষয় ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান প্রতীক শিক্ষা ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে কাজ করা হয়, তাহলে সমাজে মাদক, নিষ্ঠুরতা, অন্যায়, দুর্নীতি, পাপাচার ইত্যাদির যে অপ্রতিরোধ্য সয়লাব দেখা যাচ্ছে তা বাঁধভাঙা সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ভয়াবহ বিপর্যয় হয়ে আমাদের সমাজকাঠামোকে ভেঙে শেষ করে দেবে। দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রত্যেকের উচিত মূল্যবোধের লালন করা এবং ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিকতার সযত্নে হেফাজত করা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (14)
মাওলানা মামূনুর রশীদ ১০ জুন, ২০২১, ১২:২৩ এএম says : 0
অভিভূত। সত্যি আমি অভিভূত। এমন লেখার জন্য ই ইনকিলাব পড়ি। লেখককে ধন্যবাদ। আপনারাই সত্যকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করছেন।
Total Reply(0)
Bongo... ১০ জুন, ২০২১, ১২:২৮ এএম says : 0
This is what secular liberal wants for society in the globe. To them this is good for mankind. They believe love makes a nation weak, dependent, hungry, poor whereas divorce makes a nation strong, independent, rich, superpower. So they like divorce over love, they like separation over bond, they like a lonely life is the ideal life. ...
Total Reply(0)
নূরুজ্জামান নূর ১০ জুন, ২০২১, ১:৫৫ এএম says : 0
লেখক অত্যন্ত বাস্তবসম্মত কথা বলেছেন। মানুষের নৈতিকতা জন্মায় তার ধর্ম ও নৈতিকবোধ থেকে। তাই ধর্ম ও নৈতিকতা চর্চা করতে হবে সবসময়।
Total Reply(0)
কুদ্দুস তালুকদার ১০ জুন, ২০২১, ১:৫৬ এএম says : 0
লেখাটির সারমর্ম অত্যন্ত গভীর। আল্লাহ আমাদের সবাই তা বুঝার তৌফিক দিন। ইসলামের ওপর অবিচল রাখুন।
Total Reply(0)
নাজনীন জাহান ১০ জুন, ২০২১, ১:৫৭ এএম says : 0
বাংলাদেশের সমাজকাঠামো যতটুকু টিকে আছে ধর্মীয় মূল্যাবোধের কারণে। ধর্মবিদ্বেষ ছড়ালে সমাজ দ্রুতই ধ্বংষ হয়ে যাবে।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ১০ জুন, ২০২১, ১:৫৮ এএম says : 0
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়া আলেম সমাজ আজ খুবই কষ্টে আছে। তাদের এভাবে কষ্ট দিলে সমাজকাঠামো এমনিতেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
Total Reply(0)
মামুনুৱ ৱশীদ ১০ জুন, ২০২১, ৬:০৪ এএম says : 0
প্রতিটি পত্রিকা যদি এমন করে লেখতো...!
Total Reply(0)
Azizur Rahman ১০ জুন, ২০২১, ৬:২৮ এএম says : 0
অভিভূত। সত্যি আমি অভিভূত। এমন লেখার জন্য ই ইনকিলাব পড়ি। লেখককে ধন্যবাদ। আপনারাই সত্যকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করছেন
Total Reply(0)
Himel Ahmed ১০ জুন, ২০২১, ৭:০৫ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে এসব বিষয় বুঝে সে অনুযায়ী চলার তৌফিক দান করুক।
Total Reply(0)
গোলাম মোস্তফা ১০ জুন, ২০২১, ৭:০৬ এএম says : 0
ধর্মের মধ্যেই আমাদের জীবনের কল্যাণ নিহিত আছে। এই বিষয়টি আমাদেরকে সব সময় মাথায় রাখতে হবে।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ১০ জুন, ২০২১, ৭:০৭ এএম says : 0
ধর্মবিদ্বেষ সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বড় হুমকি
Total Reply(0)
কাওসার আহমেদ ১০ জুন, ২০২১, ৭:০৮ এএম says : 0
সমাজকাঠামো ঠিক রাখার জন্য সমাজে যাতে ধর্মবিদ্বেষ না ছড়ায় সে দিকে সকলের নজর দিতে হবে।
Total Reply(0)
Mahfuz ১০ জুন, ২০২১, ৭:৫৭ এএম says : 0
খুব বিবেক নাড়া লেখা। জাযাকুমুল্লাহ্।
Total Reply(0)
Dadhack ১০ জুন, ২০২১, ৬:২১ পিএম says : 0
প্রায় বিশ বছর আগে এক ইংলিশ যুবক মুসলিম হয়েছে সেই লিখেছে যে যাদের কমনসেন্স আছে তারাই মুসলিম .মানুষ গাড়ি তৈরি করে, সে গাড়ি কিন্তু নিজে তার ম্যানুয়াল লিখতে পারে না. মানুষ গাড়ির ম্যানুয়াল লেখে. মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করছে এবং স্রষ্টা তার জন্য একটা ম্যানুয়াল দিয়েছে. সেই ম্যানুয়াল এর নাম হচ্ছে কোরআন. এই কোরান দিয়ে মানুষ নিজেই জীবন যাপন করবে যদি না করে সে সমাজ সংসার ধ্বংস হয়ে যাবে আজকে আমাদের সরকার সন্ত্রাসী... আলেমদেরকে ধরে ধরে জেলে ভরছে. এবং আমরা সরকারের কাছে বন্দি হয়ে আছি আমরা ইন্ডিয়ার কাছে আজকে পরাধীন হয়ে আছি আমাদের দেশ আমাদের জাতি আমরা আজকে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন