শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালিত

করোনাকে জয় করে স্বতঃস্ফূর্ততা বাড়ছে রোগীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করুন: ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

রক্তগ্রহীতার প্রয়োজনে সারাবছর নিয়মিত রক্তদান ছাড়াও দেশের জাতীয় দুর্যোগময় সময়েও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বারবার মানুষের পাশে মানবিক মমতা নিয়ে দাঁড়ান স্বেচ্ছা রক্তদাতারা। তবে গতবছর করোনার শুরু থেকে তুলনামূলক কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানের চিত্র বদলেছে। করোনা ভয়কে জয় করে এখন স্বতঃস্ফূর্ত হতে শুরু করেছেন রক্তদাতারা। গতকাল সোমবার বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে এমন চিত্রই দেখা গেছে কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম ল্যাবে।

শান্তিনগর কোয়ান্টাম ল্যাবে রক্ত দিতে এসেছিলেন স্বেচ্ছা রক্তদাতা মমিনুল ইসলাম রিংকু (৪৬)। তার রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ। তিনি কোয়ান্টামে গতকালসহ রক্ত দান করেছেন ৫১ বার। তিনি জানান, বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে রক্ত দিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আমি নিয়মিত রক্ত দান করি। করোনাকালেও আমি রক্তদান থেকে বিরত হইনি। আসলে মুমূর্ষু মানুষের জীবন বাঁচাতে রক্ত দানের তৃপ্তিই আলাদা।
কোয়ান্টাম ল্যাবের দায়িত্বশীল শামীমা নাসরিন মুন্নী জানান, করোনাকালে আমাদের ল্যাবে প্রতিমাসে গড় চাহিদা ছিল প্রায় ১০ হাজার ইউনিট রক্ত ও রক্ত উপাদান। আমরা সরবরাহ করতে পেরেছি প্রায় সাড়ে আট হাজার। অর্থাৎ চাহিদার পুরোটা মেটাতে হলে মানুষের মধ্যে আরো সচেতনতা বাড়াতে হবে। আরো স্বেচ্ছা রক্তদাতা তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে কোয়ান্টাম ল্যাবে এসে স্বেচ্ছা রক্তদাতারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রক্ত দান করেছেন। দিবসটি উপলক্ষে আমরা রক্তদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। ক্ষুদে বার্তা দিয়ে নিয়মিত রক্তদাতাদের অভিনন্দন জানিয়েছি। একই সাথে নতুনদের আহ্বান জানাই, যেহেতু রক্তের কোনো বিকল্প নেই। তাই আসুন দেশের রক্তের চাহিদা মেটাতে নিয়মিত রক্ত দিন। মানবিকতার পরশে মুমূর্ষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করুন।
গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তদান যে গ্রহীতাদের জীবনকেই শুধু বাঁচাচ্ছে তা-ই নয়, নিয়মিত রক্তদান একজন রক্তদাতাকেও দিতে পারে অসাধারণ সব শারীরিক উপকার। নিয়মিত রক্তদান ক্যান্সার, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। আমেরিকান জার্নাল অব এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়মিত রক্তদাতাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৩৩ ভাগ কম এবং তাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কম ৮৮ ভাগ। রক্তদান করলে দাতার শরীরে লৌহের পরিমাণ কমে যাওয়াকেই এর কারণ হিসেবে বলেন বিজ্ঞানীরা। এছাড়াও বাড়তি ওজন হ্রাস, নিয়মিত রক্তদানে সুস্থতা যাচাই এবং রক্তদানের মাধ্যমে প্রাণবন্ততা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত সুস্থ সবল যেকোনো মানুষ প্রতি চার মাস অন্তর রক্তদান করতে পারেন। আর কোয়ান্টামের অত্যাধুনিক ল্যাবে এক ব্যাগ রক্তকে নানা উপাদানে ভাগ করে চারজন মুমূর্ষুকে বাঁচাতে সহায়তা করতে পারে। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম প্রায় ১২ লাখ ৯৩ হাজার রক্ত ও রক্ত উপাদান সরবরাহ করে মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করতে পেরেছে।
বিএসএমএমইউতে নানা আয়োজন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর উদ্বোধনসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উদযাপিত হয়েছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লকে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে বিশ্ব রক্তদান দিবস উপলক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর শুভ উদ্বোধন করেন ভিসি প্রফেসর ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। এ সময় প্রো-ভিসি ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, ডা. মো. জাহিদ হোসেন, ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, রেজিস্ট্রার ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. আয়শা খাতুন, প্রফেসর ডা. আসাদুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান, সহকারী অধ্যাপক ডা. শেখ সাইফুল ইসলাম শাহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ আমরা কোনোদিন শোধ করতে পারবো না। তবে স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে আমাদের পক্ষে সদকায়ে জারিয়া অর্জন করা সম্ভব। রক্তদানের মাধ্যমে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না বরং শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি পায়। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন কেন্দ্রীয় রক্তপরিঞ্চালন বিভাগ (বর্তমানে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ) এর উদ্বোধন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, একজন ডাক্তার তৈরি করতে জনগণের অনেক টাকা খরচ হয়। বঙ্গবন্ধু চিকিৎসকদেরকে জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করায় আহবান জানিয়েছিলেন। এই দিনে আমি দেশের চিকিৎসক সমাজকে আরো বেশি করে রোগীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানাই এবং দেশের সকল সুস্থ মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন