শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বর্ষণমুখর সারাদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে...’। আষাঢ়স্য পয়লা দিনে মুষলধারে না হলেও গতকাল কম-বেশি বর্ষণমুখর ছিল সারাদেশ। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি জানান দিয়েছে বর্ষা এসে গেছে। আষাঢ় থেকে শ্রাবণ পেরিয়ে অন্তত ভাদ্র মাস পর্যন্ত সিক্ত হবে রুক্ষ-শুষ্ক মাটি। দীর্ঘ ছয় মাসের টানা খরা-অনাবৃষ্টির পর এবার ভরপুর হবে পুকুর-দীঘি, খাল-বিল, নদ-নদী। ফল-ফসল আবাদ ও উৎপাদনের জন্য রহমতের বৃষ্টির বিকল্প নেই। তবে অতিবৃষ্টিতে ঢলে-বানে দুঃখ-দুর্ভোগের শঙ্কাও মনে দানা বেঁধে উঠেছে সমগ্র দেশের নদ-নদী, খালপাড়ের লাখো মানুষের মনে।
ইতোমধ্যে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, মেঘনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর ধারের জনবসতি, অবকাঠামোতে ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। গেল বছরে ৩৩ জেলায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার ক্ষত এখনও শুকায়নি। ভারতের উজানের ঢলেই মূলত বাংলাদেশ বন্যায় ভাসে। নিজেদের বন্যামুক্ত রাখতে ফারাক্কা, গজলডোবাসহ অনেকগুলো বাঁধ-ব্যারাজের গেইটগুলো দিয়ে ‘অকাতরে’ পানি ভাটির দিকে ছেড়ে দেয় ভারত। আর শুকনো মৌসুমে আটকে রাখে পানি।
এদিকে বর্ষার বাহক মৌসুমী বায়ু এখন বাংলাদেশের উপর সক্রিয় রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ভোলায় ৬৬ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকায় ৯, চট্টগ্রামে ১৩, ময়মনসিংহে ২৭, সিলেটে ১৪, রাজশাহীতে ৯, খুলনায় ৭, বরিশালে ২১ মি.মি.সহ সবক’টি বিভাগের বেশিরভাগ জেলায় হালকা থেকে মাঝারি, কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হয়েছে। আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল রয়েছে। ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। এরপরের ৫ দিনে আবহাওয়ায় কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভারী বর্ষণের সতর্কতায় জানা গেছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলার কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
সপ্তাহের পূর্বাভাস
চলতি সপ্তাহের (১৫ থেকে ২১ জুন) কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়া বিভাগের কৃষি আবহাওয়া মহাশাখার উপ-পরিচালক এস এম মাহমুদুল হক জানান, এ সপ্তাহে দৈনিক উজ্জ্বল সূর্য কিরণকাল ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মধ্যে থাকতে পারে। সপ্তাহের প্রথম দিকে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ স্থানে এবং খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অনেক স্থানে অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা (৪ থেকে ১০ মি.মি. প্রতিদিন) থেকে মাঝারি ধরনের (১১ থেকে ২২ মি.মি.) বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী (২৩ থেকে ৪৩ মি.মি.) থেকে ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মি.মি.) বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ সপ্তাহের শেষের দিকে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের অনেক স্থানে এবং খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু স্থানে অস্থায়ী দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। প্রথমদিকে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত এবং শেষের দিকে সামান্য বাড়তে পারে।
নদ-নদী পরিস্থিতি
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি স্থিতিশীল আছে। যমুনা নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি হ্রাস পাচ্ছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা ও এর সংলগ্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এরফলে এ সময়ে ওই অঞ্চলের নদীসমূহের পানি সময়বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। কোথাও কোথাও আকস্মিক বন্যা সংঘটিত হতে পারে।
দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৪১টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৫৬টিতে হ্রাস ও ৩টি স্থানে অপরিবর্তিত থাকে। সোমবার ৫৩টি স্থানে পানি বৃদ্ধি, ৪৩টিতে হ্রাস ও ৪টিতে অপরিবর্তিত ছিল। দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের অববাহিকায় উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতের অনেক স্থানে মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় উজানে দার্জিলিংয়ে ৭৯, চেরাপুঞ্জিতে ৪০, পাসিঘাটে ৩৭, দিব্রুগড়ে ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
দশ দিনের পূর্বাভাস
পাউবোর আগামী ১০ দিনের অন্তবর্তী সম্ভাব্য পূর্বাভাসে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদে পানির সমতল ক্রমান্বয়ে বাড়তে পারে। আপাতত ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা নেই। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল বাড়তে পারে। আপাতত গঙ্গার অববাহিকায় পানি বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা নেই। ঢাকার চারপাশের নদীসমূহের পানির সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর অববাহিকায় পানি বিপদসীমা অতিক্রমের শঙ্কা নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন