বিশেষ সংবাদদাতা : বিগত দুটি ঈদ মৌসুমে বরিশাল সেক্টরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রী ভাড়া হ্রাস-বৃদ্ধির প্রতিযোগিতার পরে এখন নতুন করে অতিরিক্ত মাসুল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি দ্বিগুণের বেশি দূরত্বের রুটের সমাহারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বরিশাল-ঢাকা সেক্টরে। উপরন্তু সরকারি ও দুটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স সপ্তাহে ৫ দিন বরিশাল সেক্টরে দৈনিক ২-৩টি করে ফ্লাইট পরিচালনা করলেও সোম ও বুধবার কোনো সংস্থারই ফ্লাইট না থাকায় বরিশাল সেক্টরে যাত্রী দুর্ভোগ বাড়ছে। জাতীয় পতাকাবাহী বিমান কর্তৃপক্ষ গত দেড় বছরেও বরিশাল মহানগরী থেকে বিমান বন্দরে তার যাত্রীদের পৌঁছে দেয়ার মতো ন্যূনতম সুবিধাটুকু প্রদান করতে পারেনি। অথচ এজন্য খোদ বিমান চলাচল মন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনাসহ আমজনতার কাছে ওয়াদাও রয়েছে। এসব কারণে জাতীয় পাতাকাবাহী বিমানে ভ্রমণে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের মধ্যে ইতোমধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
বরিশাল-ঢাকা অকাশপথে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি ১১টি উড়ান চলছে প্রতি সপ্তাহে। ১/১১ সরকারের জরুরি অবস্থার চোখ রাঙ্গানিতে ২০০৭-এর জানুয়ারিতে বরিশাল সেক্টর থেকে হাত গোটাবার দীর্ঘ ৮ বছর পরে গত বছর এপ্রিলে বরিশালের আকাশে পুনরায় ডানা মেলে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান। এরপরে ‘ইউএস বাংলা’ এবং ‘নভো এয়ার’ও বরিশাল সেক্টরে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। শুরুতে নভো এয়ার একটি টিকিটের সাথে আরেকটি বিনামূল্যে প্রদানের লোভনীয় অফার দিয়ে যাত্রী টানতে শুরু করে। ইউএস বাংলাও সরকারি-বেসরকারি দুটি এয়ারলাইন্স-এর সাথে প্রতিযোগিতামূলক দরে যাত্রী ভাড়াও নির্ধারণ করে। বিমান-এর ভাড়া কিছুটা যুক্তিযুক্ত হওয়ায় বেসরকারি দুটি এয়ারলান্সই যাত্রী ভাড়ার লাগাম টেনে ধরে গত দেড় বছরে।
অথচ ২০১৪ ও ২০১৫-এর রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বরিশালের আকাশ দাপিয়ে বেড়ানো একমাত্র উড়ান সংস্থা হিসেবে ইউনাইটে এয়ারওয়েজ ঢাকা রুটে সাড়ে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করত।
এবারের দুটি ঈদ মৌসুমের আগের ১২ দিন বরিশাল-ঢাকা রুটে ও পরের ৭ দিন ঢাকা-বরিশাল রুটে বিমান মাত্র ২ হাজার টাকায় যাত্রী পরিবহন করলেও ঐ একই সময়ে বিপরীত রুটে ভাড়া ছিল দ্বিগুণেরও বেশি। অনুরূপভাবে বেসরকারি দুটি এয়ারলাইন্সও ঈদের আগে-পরে চাহিদার নিরিখে ভাড়া আরো হ্রাস-বৃদ্ধি করে। এমনকি নভো এয়ার ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৩২শ’ টাকায় একটি টিকেট কিনলে সাথে ১টি ফ্রি টিকিটও প্রদান করেছে।
কিন্তু ঈদুল আজহার ভিড় হ্রাস পাবার সাথেই সরকারি-বেসরকারি সবগুলো এয়ারলাইন্সই যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। বিমান ঈদের আগে যেখানে বরিশাল-ঢাকা রুটে ২ হাজার টাকায় যাত্রী পরিবহন করেছে, এখন তা ২ হাজার ৯শ’ টাকা নির্ধারণ করেছে। এমনকি ঢাকা-বরিশাল ৬২ এরোনটিক্যাল মাইলের জন্য যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, ১৪৬ এরোনটিক্যাল মাইলের ঢাকা-সৈয়দপুর এবং ৮২ এরোনটিক্যাল মাইলের ঢাকা-যশোর রুটেও একই ভাড়া নির্ধারণ করেছে জাতীয় পতাকাবাহী এ আকাশ পরিবহন সংস্থাটি। তবে গতকাল বরিশালের বিক্রয় অফিসের ব্যবস্থাপকের সাথে আলাপ করা হলে আগামী সপ্তাহ থেকে আড়াই হাজার টাকায় বরিশাল-ঢাকা আকাশপথে যাত্রী পরিবহনের ঘোষণা আসছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
অপরদিকে বেসরকারি নভো এয়ার বরিশাল-ঢাকা আকাশপথে নতুন সর্বনি¤œ ভাড়া নির্ধারণ করেছে ৩ হাজার ২শ’ টাকা। তবে সিমিত কিছু আসনে ওই দরে টিকিট বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এর পরের স্তরেই ৩ হাজার ৬শ’ টাকা থেকে ৪ হাজার ২শ’ টাকা এবং সর্বশেষ নভো এয়ার সাড়ে ৬ হাজার টাকা ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ৭ হাজার টাকায় টিকিট বিক্রি করছে বরিশাল আকাশ পথে।
বেসরকারি দুটি আকাশ পরিবহন সংস্থাই সর্বনি¤œ ভাড়ায় অতি সীমিতসংখ্যক আসন নির্ধারিত রেখে ফ্লাইটের সময় যত ঘনিয়ে আসে ততই ভাড়াও বৃদ্ধি করে থাকে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। তবে এসব বিষয়ে দুটি উড়ান সংস্থার স্থানীয় প্রতিনিধিদের দাবি, ‘তারা কোনো ভাড়া নির্ধারণ করেন না। এটা সদর দফতর থেকেই করা হয়ে থাকে। আর তাদের টিকিট যে কেউ অন লাইনেও সংগ্রহ করতে পারেন। এর সাথে স্থানীয় অফিসের কোনো কিছু করণীয়ও নেই’।
অপরদিকে বিমান-এর স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে বরিশাল মহানগরী থেকে বিমান বন্দরে যাত্রীদের পৌঁছে দেয়ার লক্ষে গাড়ি সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। মানসম্মত যানবাহন পেলেই এটা সম্ভব হবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। অন্য রুটের তুলনায় বরিশাল সেক্টরে ভাড়া বেশি হবার বিষয়টিও বিমান-এর সদর দফতরের এখতিয়ার বলে জানিয়ে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান হয়েছে বলেও জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বিক্রয় অফিসের দায়িত্বশীল মহল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন