শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সহসা প্রকাশিত হচ্ছে না রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন

প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পুরো টাকা ফেরত পেতে ৪-৫ মাস লাগবে : অর্থমন্ত্রী
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : রিজার্ভ চুরি নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের তারিখ দিয়েও তা অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী। গত রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, সউদী আরব ও যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার আগেই বৃহস্পতিবার তিনি ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাবেন। কিন্তু গতকাল সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের ডেকে জানিয়ে দেন, সহসা ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, “এটা আমার ঘোষণা মত কালকে (আজ) প্রকাশ করা হবে না। বেশ দেরি হবে, বেশ দেরি হবে।” রিজার্ভের চুরি হওয়া অর্থের প্রায় পুরোটা (৮০ মিলিয়ন ডলার) চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলেও জানিয়েছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।
ফরাসউদ্দিন গত ৩০ মে ওই প্রতিবেদন দেয়ার পর অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন, রিপোর্টে যা আছে, তা অবশ্যই প্রকাশ করা হবে। কিন্তু এ পর্যন্ত কয়েক দফা সময় দিয়েও কথা রাখেননি মুহিত। এবার তিনি যুক্তি হিসেবে ফিলিপিন্সে টাকা উদ্ধারে মামলা চলার কথা বলেছেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে এ বিষয়ে ফিলিপিন্স ও আমাদের মধ্যে অনেক আলোচনা চলছে। আমরা সেখানে মামলা-মোকদ্দমাও করেছি ইত্যাদি নানান কিছু আছে। এগুলো একটু আপসেট হয়ে যাবে এ রিপোর্টটা বের হলে। এজন্য রিপোর্ট এখন বের করছি না। পরে বের করব, তারিখটা বলতে পারছি না। দেরি হলেও এটা প্রকাশ হবে।
পুরো টাকা ফেরত পাওয়া যাবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি তো আজকে শুনলাম আরও অনেক টাকা (চুরি হওয়া অর্থ) পাইপলাইনে আছে। বর্তমান আশা হচ্ছে, প্রায় শতভাগ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এই মুহূর্তে ৮০ মিলিয়ন ডলার উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এদিক দিয়ে ভালো যে, আমি প্রথম দিকে ভেবেছিলাম রিকভারি হবে না। সেখানে কৃতিত্ব দিতে হয় ফিলিপিন সরকারকে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বলেছেন, টাকা পরিশোধ ছাড়া তিনি বাংলাদেশে আসবেন না। আমাদের অ্যাম্বাসেডর তাকে (প্রেসিডেন্টকে) বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
বাকি টাকা ফেরত পেতে কত দিন লাগবে- এ প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, খুব বেশি দিন লাগবে না। চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগবে।
গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার।
শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ ওই অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শেষ পর্যন্ত আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাইবার চুরির এই ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে ঘটনার এক মাস পর, ফিলিপিন্সের একটি পত্রিকার খবরের মাধ্যমে। বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন ড. আতিউর রহমান; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল।
ওই সময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলা করা হয়। ১৫ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি, যার প্রধান করা হয় সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনকে।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেনÑ বুয়েটের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কীভাবে, কার বরাবরে ভুয়া পেমেন্ট ইন্সট্রাকশন পাঠানো হয়েছিল, অবৈধ পরিশোধ ঠেকাতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল কি না, রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রায় এক মাস গোপন রাখা যৌক্তিক ছিল কি না, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের অবহেলা ছিল কি-না এবং অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা, গৃহীত কার্যক্রমের পর্যাপ্ততা ও পুনরাবৃত্তি রোধে গৃহীত ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কমিটিকে।
বেধে দেয়া সময় অনুযায়ী গত ২০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর কাছে অন্তর্র্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দেয় ফরাসউদ্দিনের কমিটি। এরপর ৩০ মে দেয়া হয় পুরো প্রতিবেদন।
প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর তদন্ত কমিটির প্রধান ফরাসউদ্দিন বলেছিলেন, রিজার্ভ চুরিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কারও সম্পৃক্ততা নেই বলে আগে তারা ধারণা করলেও চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ওই অবস্থান থেকে ‘সামান্য’ সরে এসেছেন।
ভুয়া সুইফট মেসেজ পাঠিয়ে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সাইবার চুরির ওই ঘটনায় কারা কারা জড়িত, সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি কী কী সুপারিশ করেছেÑ সে তথ্য প্রকাশ করেননি তদন্ত কমিটির প্রধান বা অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কয়েক দফা সময় দেয়ার পরও ওই প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশিত না হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করা হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিষয়ক সংসদীয় কমিটিও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেখতে চায়।
রিজার্ভ চুরির বিষয়ে ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটির তদন্তের মধ্যে কিম অং নামের এক ক্যাসিনো ব্যবসায়ী দেড় কোটি ডলার ফিলিপিন্স সরকারের হাতে ফেরত দেন।
ওই টাকা দেশটির এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলে জমা হওয়ার পর বাংলাদেশকে তা ফেরত দিতে আদালতে প্রক্রিয়া শুরু করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার ওই অর্থ বাংলাদেশকে ফেরত দিতে বলা হয় দেশটির আদালতের এক আদেশে। উদ্ধার হওয়া দেড় কোটি ডলার ‘দুই-এক দিনের মধ্যে’ হাতে পাওয়া যাবে বলে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন