শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় রাজকীয় বিয়ে হলো বাদশা-নোভার

প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বনের রাজা কে- সিংহ। তাহলে রানী? নিশ্চয়ই সিংহী। রাজা-রানী বলেই কথা! আর তাই বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন হলো রাজকীয়ভাবেই। ব্যতিক্রমী এ বিয়েতে ৪৭ কেজি গোশতের তৈরি কেক কাটাও বাদ পড়লো না! বিয়েতে আমন্ত্রিত মেহমানদের জন্য ছিল হালকা নাশতা। আলোচিত ও ব্যতিক্রমধর্মী এসব আয়োজনে গতকাল (বুধবার) অগণিত মানুষের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। এ উপলক্ষে মাত্র দুই ঘণ্টায় ৮শ’ টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে যায়। টিকিটের দর্শক ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের উৎসুক সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিক-মিডিয়া কর্মী সমাগম ঘটে ব্যাপক। বর্ণাঢ্য আয়োজনে মহা ধুমধামের মধ্য দিয়ে রংপুর থেকে আগত ‘বাদশা’ ও চট্টগ্রামের ‘নোভা’র ব্যতিক্রমী রাজকীয় বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বিয়ের আগে অবশ্য বাদশার নাম পাল্টে নোভার সঙ্গে মিলিয়ে ‘নভ’ রাখা হয়। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার আলোচিত এই ‘নভ’ অর নোভা হচ্ছে দুই সিংহ ও সিংহী। তারাই এখন জোড়া বেঁধেছে। গতকাল সকাল ১১টায় সিংহের খাঁচায় মাংস-কেক কেটে এবং বেলুন উড়িয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। চট্টগ্রাম থেকে তিনি বিদায়ের আগে আরেক চমক দেখালেন। বিয়েকে ঘিরে চিড়িয়াখানার ফটক, ওয়াকওয়ে শুধু নয়, চিড়িয়াখানা জগতের অন্য বাসিন্দাদের অর্থাৎ সব পশুপাখির খাঁচা রঙ-বেরঙের বেলুন, ফেস্টুন ও জরি দিয়ে সাজানো হয়। যার উদ্দেশ্য ছিল পুরোপুরি বিয়ের অনুষ্ঠানের আমেজ তৈরি!
নভ ও নোভার বিয়ে উপলক্ষে বিশেষভাবে সাজানো হয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। তাদের জন্য খাঁচায় রাখা হয় কাঁচা মাংসের কেক। কিছুদিন আগে বাদশাকে রংপুর থেকে চট্টগ্রামে আনা হয়। রাখা হয় নোভার পাশের কক্ষে। বাদশার বদলে নোভার বোন রংপুর চলে যাওয়ায় সে একা হয়ে পড়ে। বাদশাকে কাছে পেয়ে নোভার সেই নিঃসঙ্গতা কেটে যায়। দু’জনের মধ্যে বেশ ভাবও হয়।
বিয়ে উপলক্ষে চিড়িয়াখানার ভেতরে-বাইরে সাজানো হয়েছে নানা রঙের বেলুন ও ফেস্টুন দিয়ে। ফেস্টুনে প্রেম ও বিয়ে-সংক্রান্ত নানা ছড়া ও গানের লাইন। আবার একটি ফেস্টুনে লেখা, ‘ বোন বর্ষা চলে যাওয়ায় নোভার খুব মন খারাপ’। আরেকটি ফেস্টুনে লেখা ছিল ‘লীলাবালি’সহ বিয়ের বিভিন্ন গান। কাটা হয়েছে একটি কেকও। সিংহ ও সিংহীর পাশাপাশি খাঁচা দুটি সাজানো হয়েছে বিয়ের সাজে। একসময় সিংহটিকে ছোট খাঁচা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। বড় খাঁচায় এসে পাশের খাঁচায় থাকা নোভার দিকে ছুটে যায়। কিন্তু ভয়ে নোভা দূরে সরে যায়। এই সিংহ-সিংহীর বিয়ের খবর স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় গতকাল অন্য দিনের তুলনায় দর্শনার্থী ছিল বেশি। এসেছিলেন সাংবাদিক, জেলা প্রশাসনের লোকজন। বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য ছিল হালকা নাশতার প্যাকেট।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর মনজুর মোরশেদ বলেন, রংপুর থেকে আনার পরই সিংহটিকে সিংহীর পাশের খাঁচায় রাখা হয়েছে ভাব বিনিময়ের জন্য। কিউরেটর বলেন, এ মাসের প্রথম দিকে রংপুর থেকে পুরুষ সিংহটিকে এখানে আনা হয়। বিনিময়ে সিংহী বর্ষাকে সেখানে দেয়া হয়। ভবিষ্যতে বংশবৃদ্ধির আশায় দু’জনের বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার জন্য দরপত্রের মাধ্যমে বাঘ কেনার প্রক্রিয়ার কথাও জানান।
২ ঘণ্টায় ৮শ’ টিকিট বিক্রি
বনের রাজার বিয়েটা রাজকীয়। রঙ-বেরঙের বেলুন, ফেস্টুন, ব্যানার, জরিতে জঁমকালো সাজে সেজেছে বিয়ে বাড়ি। ভিআইপি অতিথির ভিড়। মুহুর্মুহু ক্যামেরার ‘ক্লিক’, ‘ক্লিক’ শব্দ। আলোর ঝলকানি। বিভিন্ন নিউজ চ্যানেল আর অনলাইন পোর্টালে ‘লাইভ’ সম্প্রচার। কিছুরই কমতি ছিল না চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার সিংহী নোভা আর রংপুর চিড়িয়াখানার সিংহ বাদশার (নভ) বিয়েতে। বিয়ে নিয়ে কৌতূহলী মানুষের ভিড় ছিল চিড়িয়াখানার ফটকে। সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৮শ’ টিকিট। এর বাইরে শতাধিক তিন বছরের কম বয়সী শিশু ছিল বিনা টিকিটের দর্শক। বিয়ের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক আর চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতরা ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের রীতি অনুযায়ী ঘাটা ধরে (বিয়ের গেট ধরে) ৩ হাজার ১ টাকা পেয়েছেন তিন নারী।
৪৭ কেজি গোশতের কেক
সিংহের খাঁচায় ভালোবাসার প্রতীকে সাজানো গোশত-কেকটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৪৭ কেজি গোশত। যার উপকরণের মধ্যে ছিল প্রচুর গরুর কলিজা, ফুসফুস, হৃদপি-, গোশত, দুটি আস্ত মুরগিসহ সিংহের প্রিয় সব পদ। বিশাল কেকটি কাটেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন ও তার মেয়ে মাশিয়াত মুবাশ্বিরা। এর আগে বিয়ের স্মারক হিসেবে ওড়ানো হয় বেলুন। এ সময় জেলা প্রশাসকের স্ত্রী ইশরাত জাহান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. অনুপম সাহা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মমিনুর রশিদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) হাবিবুর রহমান, জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল, কবি অভীক ওসমান ও সেলিনা শেলী, চিড়িয়াখানার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শাহজাহান চৌধুরী, পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমীন, ডেপুটি কিউরেটর চৌধুরী মো. মনজুর মোরশেদ, প্রাণী চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন শুভ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রামবাসীর জন্য এ চিড়িয়াখানা বিনোদনের প্রধানতম মাধ্যম। এখানকার দর্শকদের প্রত্যাশা বেশি। এত দিন সিংহী ছিল দুটি। একটি রংপুর চিড়িয়াখানার সঙ্গে বদল করে এখানে সিংহ নিয়ে এসেছি। যাতে তারা প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করতে পারে। একই সঙ্গে দর্শকদের জন্যে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হবে। বিয়ে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি হচ্ছে তাদের একসঙ্গে থাকার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। একই সঙ্গে দেশবাসীকে প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসার বার্তা পৌঁছে দেয়া। এখনো সজারু, অজগরসহ বন্যপ্রাণীদের পিটিয়ে মারা হয়।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘ নেই। ইতোমধ্যে আমরা টেন্ডার প্রসেস করেছি। দুটি বাঘ আনা হবে এ চিড়িয়াখানায়। একটি পুরুষ, একটি স্ত্রী। ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় হবে। তবে আমাদের তহবিল আছে। আশা করছি দু-এক মাসের মধ্যে বাঘ চলে আসবে। মৌলভীবাজার থেকে উল্লুকসহ দুর্লভ প্রজাতির কিছু প্রাণী আনা হবে। জেলা প্রশাসকের আড়াই বছর মেয়াদে চিড়িয়াখানায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়েছে জানিয়ে বলেন, ৪৪ লাখ টাকা দিয়ে সীমানাপ্রাচীর, সিঁড়ি নির্মাণসহ প্রচুর কাজ হয়েছে। পশু-পাখির খাঁচাগুলো মেরামত করা হয়েছে। নতুন ফটক নির্মিত হয়েছে। দীর্ঘদিনের আবর্জনা-পরিষ্কার করে পুরো এলাকাটি দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। এ ধারাবাহিতা অব্যাহত থাকবে। বিয়ের আগে নির্মিত চিড়িয়াখানার নতুন ফটক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।
নোভার একাকিত্ব জীবনের অবসান
২০০৫ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জন্ম নিয়েছিল সিংহ শাবক ‘বর্ষা’ ও ‘নোভা’। দুই বোনের জন্মের কিছুদিন পর তাদের মা ‘লক্ষ্মী’ এবং ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাবা ‘রাজ’ মারা যায়। এরপর আর কোনো নতুন সিংহ চিড়িয়াখানায় আনা হয়নি। একই সঙ্গে চিড়িয়াখানায় আর কোনো পুরুষ সিংহ না থাকায় ‘বর্ষা’ ও ‘নোভা’ কুমারী থেকে যায়। তাদের ঘর-সংসার করাও হয়ে ওঠেনি। এতদিন অনেক খোঁজ-খবর করেও উপযুক্ত পুরুষ সিংহ পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি সংবাদপত্রের মাধ্যমে রংপুর চিড়িয়াখানায় দুটি পুরুষ সিংহ থাকার খবর পায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এরপর বর্ষা ও নোভার মধ্য থেকে একটি রংপুর চিড়িয়াখানার সঙ্গে অদলবদল করার ব্যাপারে আলোচনার ভিত্তিতে সমঝোতায় উপনীত হলে বর্ষাকে গত ২৮ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে রংপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ‘রাজা’র সঙ্গী হবে বর্ষা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
AZAD ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১:০০ পিএম says : 1
Bangladesh bole kotha.............
Total Reply(0)
রুহান ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ৩:১৫ পিএম says : 0
ভালো তো ভালো না !
Total Reply(0)
অদুদ ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ৩:১৫ পিএম says : 0
আরো যে কত কিছু দেখবো
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন