উত্তর জনপদের তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা ছুুুুুুঁইছুুুুঁই করছে। তিস্তা পাড়ে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে যে কোন সময়ে। ইতোমধ্যে পানি বৃদ্ধিতে নদীর পাড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। উজানে ভারতে অতিবৃষ্টিতে গঙ্গা নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে ভারত ফারাক্কা বাঁধ খুলে দিতে পারে। এরফলে ভাটিতে পদ্মা নদীতে পানি বাড়তে পারে। পাউবোর পূর্বাভাসে জানা গেছে, গঙ্গায় আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তায় পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপদসীমার মাত্র ১০ সে.মি. নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তিস্তা নদীর উজানে ভারতের দেয়া গজলডোবা বাঁধ খুলে দেয়ার কারণে আকস্মিক এই বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। কেননা গত ২/৩ দিনে উত্তর জনপদ তথা রংপুর বিভাগে বিক্ষিপ্ত যৎসামান্য বৃষ্টিপাত ছাড়া তেমন উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি সেখানে হয়নি। এদিকে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল জানায়, তিস্তা নদীর পানির সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা স্বল্প সময়ের জন্য বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
পাউবো আরও জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদে পানি হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। পদ্মা নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুশিয়ারা ব্যতীত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি হ্রাস পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কক্সবাজারসহ অন্যান্য জেলা ও এর সংলগ্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ সময়ে ওই অঞ্চলের নদীসমূহের পানি সময়বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। কোথাও কোথাও আকস্মিক বন্যা হতে পারে।
নদ-নদীসমূহের ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৪৬টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৫৪টিতে হ্রাস পায়। বৃহস্পতিবার নদ-নদীসমূহের ৩২টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৬২টিতে হ্রাস পায়। ৬টিতে অপরিবর্তিত ছিল।
দেশের অভ্যন্তরে এবং প্রধান নদ-নদীসমূহের উজানে উত্তর-পূর্ব ভারত, বিহার এবং নেপালসহ এই অঞ্চলে সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ, কোথাও কোথাও অতিবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় উজানে গ্যাংটকে ৯৫, চেরাপুঞ্জিতে ৩৪ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে নারায়ণহাটে (ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম) একশ’ মি.মি., চট্টগ্রামে ৯০, চাঁদপুরে ৭৬, রাঙ্গামাটিতে ৬৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পাউবো।
অতিবৃষ্টিতে চট্টগ্রাম প্লাবিত
বর্ষার সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গতকাল চট্টগ্রামে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর চট্টগ্রামে ৯২ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। সকাল থেকে দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির চাপে নগরীর নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। অনেক স্থানে সড়ক, রাস্তাঘাট, অলিগলিতে ঢল বয়ে গেছে। ষোলশহর, নাসিরাবাদ, পাঁচলাইশ, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, শোলকবহর, বহদ্দারহাট, বাকলিয়া, চাক্তাই, রাজাখালী, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ, হালিশহর, পতেঙ্গা, কাট্টলীসহ অনেক এলাকা অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়।
বসতঘর, দোকানপাট, হাট-বাজার কাদা-পানি, ময়লা-আবর্জনায় সয়লাব হয়ে যায়। অবশ্য দুুপুরের পর বৃষ্টিপাত কমলে বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নেমে যায়। তবে অনেক এলাকা প্লাবিত থাকায় অবর্ণনীয় জনদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ অনেক জায়গায় মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকারই সম্ভাবনা রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন