শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তদন্ত কমিটির তলব এস কে সুর চৌধুরী ও মুনিরুজ্জামানকে

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক দুই ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও এস এম মুনিরুজ্জামানকে ডেকেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি ধরতে গঠিত তদন্ত কমিটি। আজ মঙ্গলবার তাঁদের এই কমিটির সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে। তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান, পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছে। আদালতের পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খানকে প্রধান করে কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই কমিটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা ছাড়াও সাবেক বিচারক ও আমলারাও রয়েছেন। আগামী মাসেই এই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন চ‚ড়ান্ত করে গভর্নরের কাছে জমা দেবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। মূলত বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) আর্থিক অনিয়মের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দায়দায়িত্ব নির্ধারণে তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই কমিটি বিআইএফসির পাশাপাশি অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের ঘটনাও খতিয়ে দেখছে। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য তদন্ত কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তার পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছে। জানা গেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিআইএফসির পরিচালনা পরিষদ অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে একটি বিদেশি অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের করা আবেদনে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর আদেশ দেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে আসে, ২০০২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

পর্যবেক্ষণে আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ঠগবাজ ব্যবসায়ী, প্রতারকেরা যাতে জনসাধারণের অর্থ আত্মসাৎ করতে না পারেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকবেন। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তাঁদের গোপন আঁতাত, পরিকল্পনা ভেঙে দিতে হবে। উচ্চ আদালত আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি-উন্নয়নের জন্য সরকারপ্রধান যেখানে ক্লান্তিহীন কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা, বিশেষ করে ডিজিএম, জিএম, নির্বাহী পরিচালক ও ডেপুটি গভর্নররা ঠগবাজ, প্রতারক ও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। ব্যক্তিস্বার্থে আর্থিক খাতের এ বিপর্যয়ের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।

আদালতের ওই পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যানুসন্ধান বা তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হক ২ ফেব্রুয়ারি আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম চাপা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে দিত রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক শাহ আলমকে প্রতি মাসে দেয়া হতো দুই লাখ টাকা করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি ‘ম্যানেজ’ করতেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। রাশেদুল হকের দেয়া ওই জবানবন্দি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেখভালের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের বিভাগ বদল করা হয়। প্রায় সাত বছর ধরে তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ গ্রহণ করার অভিযোগ আসার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নেয়।

দেশে বর্তমানে ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ১০টির অবস্থা নাজুক। এসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এর মধ্যে সাবেক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও সাবেক রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি পি কে হালদার একাই ধ্বংস করেছেন চারটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এর মধ্যে পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য অবসায়ক নিয়োগ করা হয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও বিআইএফসিতে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছেন আদালত। এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পি কে হালদার লোপাট করেন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে উঠে আসে। এসব অনিয়মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা সহযোগীর ভ‚মিকায় ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন