শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কয়রায় অস্ত্র গুলিসহ দুই বনদস্যু গ্রেফতার

সুন্দরবনের দস্যু দমনে র‌্যাবের অভিযান চলছে

প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা, খুলনা  : দস্যু দমনে সুন্দরবনের গহিন অরণ্যে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব। বুধবার থেকে র‌্যাব-৮ বরিশাল ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে এ অভিযান শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিককালে ব্যাপকহারে জেলে অপহরণের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষ এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। অপরদিকে, খুলনার কয়রা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সুন্দরবনের কুখ্যাত বনদস্যু রোকন বাহিনীর দুই সদস্যকে আটক করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশী বন্দুক, একটি টুটু বোর রাইফেল ও ৪ রাউন্ড বন্দুকের গুলি উদ্ধার করা হয়।
র‌্যাব-৮ বরিশাল ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর আদনান কবির বলেন, বনদস্যুদের হাতে জিম্মি জেলেদের উদ্ধার করতে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এদিকে, সর্বশেষ মঙ্গলবার মুক্তিপণের দাবিতে সুন্দরবনের চান্দেশ্বর এলাকা থেকে ২০টি মাছ ধরা নৌকাসহ ১০  জেলেকে অপহরণ করেছে বনদস্যু জাহাঙ্গীর বাহিনী। এছাড়া মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ১৩৫ জেলেকে অপহরণ করেছে বেপরোয়া হয়ে ওঠা জাহাঙ্গীর, সাগর ও গফফার বাহিনী। অপহৃত জেলেদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এলেও বেশির ভাগই রয়েছে দস্যুদের জিম্মায়। বর্তমানে জিম্মিদশা চলছে জেলেদের মধ্যে।
সংশিষ্ট সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের চান্দেশ্বর এলাকায় ইলিশ শিকার করছিল জেলেরা। এ সময় সেখানকার জেলেবহরে হামলা চালায় সশস্ত্র বনদস্যু জাহাঙ্গীর বাহিনীর সদস্যরা। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য দস্যুরা ইলিশ মাছ বোঝাই ২০টি  নৌকা ও ১০ জেলেকে অপহরণ করে। মাছ বোঝাই  নৌকাগুলো বেছে বেছে নেয়া হয়েছে। আর মাছ কম থাকা  নৌকা থেকে ১ জন করে জেলে তুলে নেয়া হয়েছে বলে জানায় জেলে-মহাজনরা। অপহৃত জেলেদের কাছে মুক্তিপণ বাবদ জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে দাবি করেছে জাহাঙ্গীর বাহিনী।
জেলে-মহাজনরা অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি সুন্দরবনের কয়েকটি দস্যু বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও  কোনোভাবেই কমছে না সাগর-সুন্দরবনের দস্যুতা। বড় বাহিনীগুলো আত্মসমর্পণ করার পর থেকে সুন্দরবনে  বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সাগর ও জাহাঙ্গীর বাহিনী। এই বাহিনী প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকা হতে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য জেলে অপহরণ ও লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। জেলেরা জানান, গত দেড় মাস আগে তারা  কোকিলমনি এলাকায় পাস নিয়ে মাছ ধরতে যায়। পরের দিন ভোরে ফরেস্ট স্টেশনের মেইন খালের আগা থেকে সশস্ত্র বনদস্যুরা মারধর করে ৩২টি জেলে নৌকা থেকে টাকা-পয়সা ও মালামাল লুটে নেয়। ডাকাতরা ৩০  জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। বনদস্যুদের এই অত্যাচার নিত্যদিনের। ডাকাতরা বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করে, বললেন অন্য নৌকায় আসা কয়েকজন জেলে।
সূত্র জানায়, হারবাড়িয়া ফরেস্ট ক্যাম্পের দক্ষিণ দিক ধানসিদ্ধির চর এলাকা জাহাঙ্গীর ও গফফার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। জুলাই শেষে ও আগস্টের প্রথম দিকেও বন  থেকে তারা দুই দফায় ৩৮ জেলেকে অপহরণ করে। ওই মাসের শেষের দিকে দুই দফায় ২৪ জেলেকে অপহরণ করে বনদস্যু সাগর ও জাহাঙ্গীর বাহিনী। সর্বশেষ মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে গত বৃহস্পতিবার রাতে জাহাঙ্গীর বাহিনীর সদস্যরা সুন্দরবনের দুধমুখী ও ভাইজোড়া খাল  থেকে ১২ জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে। অপহৃত ওই জেলেদের কাছে জনপ্রতি দুই লাখ টাকা করে দাবি করেছে জাহাঙ্গীর বাহিনী। গত ৯ সেপ্টেম্বর একই এলাকা থেকে সাগর বাহিনীর হাতে অপহরণ হয় ১১  জেলে। ১৪ সেপ্টেম্বর পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসিদ্ধির চর এলাকা থেকে ২০ জেলেকে অপহরণ করা হয়।
পুলিশ ও কোস্টগার্ড সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বড় বড় কয়েকটি বাহিনী আত্মসমর্পণ করার পর থেকে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীর ও সাগর বাহিনী। তবে শত চেষ্টা করেও এ দুই বনদস্যু বাহিনীর নাগাল পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অপহৃত  জেলেদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এলেও বেশির ভাগই রয়েছে দস্যুদের জিম্মায়।
সূত্র জানায়, বনদস্যু দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বসে  নেই। তারাও নিত্যনতুন কৌশলে ডাকাতদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি অক্টোবর পর্যন্ত এক বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সুন্দরবনে প্রায় ২০টি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে। এ সময়ে বন্দুকযুদ্ধে বেশ কয়েকজন বনদস্যু নিহত হয়েছে।  গ্রেফতার হয়েছে ৪০ জন বনদস্যু। উদ্ধার করা হয়েছে  বেশ কয়েকশ’ আগ্নেয়াস্ত্র ও তাজা গুলিসহ নানা সরঞ্জাম।
একাধিক বনজীবী বলেন, আগে জেলে-বাওয়ালীদের মারধর করে টাকা, মাছ, চাল-ডাল লুটে নিত। আর এখন উল্টো বনে প্রবেশের আগেই গ্রামে থাকা তাদের লোকের কাছে ধার্য চাঁদা পরিশোধ করে স্লিপ নিয়ে বনে যেতে হচ্ছে বনজীবীদের। স্লিপ ছাড়া বনে গেলে নানা নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। স্লিপের ধরনও পাল্টেছে। এখন ডাকাতদের স্লিপ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে দুই ও পাঁচ টাকার  নোট। ওই নোটের নম্বরটিই চাঁদাপ্রাপ্তির সঙ্কেত। একই ধরনের কথা বলেছেন, মংলার সুন্দরবন, চিলা,  সোনাইলতলা ও শরণখোলা এলাকার একাধিক বনজীবী।
জেলেদের অভিযোগ, বনদস্যুরা আগে নৌকাপ্রতি এক  থেকে দুই হাজার টাকা চাঁদা নিত। র‌্যাব ও পুলিশের কড়াকড়ির পর বনদস্যুরা এই চাঁদার পরিমাণ বাড়িয়ে প্রতি  নৌকার জন্য তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা ধার্য করেছে। বনে প্রবেশের আগেই এই চাঁদার টাকা ডাকাতদের কাছে বিকাশ করে বা নগদ দিতে হচ্ছে। কোস্টগার্ড পশ্চিম  জোনের অপারেশন অফিসার লে. এম ফরিদুজ্জামান বলেন, জিম্মি জেলেদের উদ্ধারে সংশিষ্ট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে কোস্টগার্ড।
র‌্যাব-৬ খুলনার পরিচালক (সিও) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, বনদস্যুরা আগের তুলনায় এখন অনেকটা কোণঠাসা। অনেকগুলো প্রভাবশালী বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। কোনো কোনো বাহিনী দস্যুতা ছেড়েও দিয়েছে। তবে সুন্দরবন বনদস্যুদের উর্বর ক্ষেত্র। নতুন নতুন বনদস্যু দল তৈরি হচ্ছে। এসব দস্যুর বিরুদ্ধে র‌্যাবের তৎপরতাও আছে। এসব বিষয়ে র‌্যাব সজাগ রয়েছে।
কয়রায় অস্ত্র গুলিসহ দুই বনদস্যু গ্রেফতার
পুলিশ জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কয়রা থানা অফিসার ইনচার্জ শেখ শমসের আলীর নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ৬ নম্বর কয়রা লঞ্চঘাট সংলগ্ন শাকবাড়িয়া নদীর পূর্ব পাশে সুন্দরবনের ভেতর থেকে দুইজন বনদস্যুকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ খুলনার খানজহান আলী থানার জাবিরপুর গ্রামের দিদারুল খানের  ছেলে বাদশা খান (২২) ও কয়রা উপজেলার ৬ নম্বর কয়রা গ্রামের মাদার চন্দ্র ম-লের ছেলে ভবসিন্ধু ম-ল (৫০)। কয়রা থানা অফিসার ইনচার্জ শেখ শমসের আলী জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।




 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন