মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : বগুড়ার নিভৃত পল্লী শিবগঞ্জের দেউলি ইউনিয়নের সরকার পাড়ার শ্বেত পাথরে নির্মিত রাজ প্রাসাদের আদলে গড়া যে বাড়িকে ঘিরে ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট ও ভার্চুয়াল মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। ইনকিলাবের অনুসন্ধানে ওই বাড়ি ও মালিক সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে ।
তার নিশ্চিত হওয়া গেছে, বাড়িটির মালিক সাখাওয়াৎ হোসেন টুটুল নিতান্তই শখের বসে নয় বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিলের সুষ্পষ্ট লক্ষ্য নিয়েই বাড়িটি নির্মাণ করেছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জিত না হলেও ব্যাংক ও অর্থনৈতিক লগ্নি প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকার ঋণ হাতিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য পূর্ণ ভাবে অর্জনে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, গাজীপুরের কিছু ব্যবসা প্রকল্প, নিজ এলাকায় একটি কোল্ড স্টোরেজ, ইট ভাটা এবং প্রাসাদোপম এই বাড়ি শো’ করে তিনি রূপালী ব্যাংক থেকে দেড়শ’ কোটি, যমুনা ব্যাংক থেকে ২০ কোটি এবং অর্থলগ্নি সংস্থা ইউনিয়ন ক্যাপিটাল থেকে আরো কয়েক কোটি টাকা মিলিয়ে অন্তত ২ শতাধিক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার নামে তিনি কোটি কোটি টাকার ঋণ হাতিয়ে নিয়েছেন, গত প্রায় তিন বছর ধরে সেগুলো বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে যে জামানত তিনি ঋণের বিপরীতে গচ্ছিত রেখেছেন তার বর্তমান বাজার মুল্যে ১০ শতাংশও হবে না। তার নিজ গ্রামের লোকেরা জানিয়েছেন, গত ১০ বছরে তিনি এলাকার আ’লীগ, বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের পিছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করেছেন।
রাজনৈতিক ভাবে তিনি জাসদ ঘরাণার হলেও নিজ জেলা বগুড়ার দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে তেমন কোন সখ্যতা নেই। কলেজ জীবন থেকে টুটুলকে ঘনিষ্ট ভাবে চেনেন, এমন একজন জাসদ নেতা জানিয়েছেন, তিনি বগুড়ার সুপরিচিত জাসদ নেতা আমিনুল ইসলাম মিঠুর (বর্তমানে মৃত) বাড়িতে থেকে আজিজুল হক কলেজে লেখাপড়া করেন। এরপর মাহমুদুর রহমান মান্না যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি তখন তাঁর হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টুটুল ভর্তি হন। মিছিল মিটিং বা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জোরালো ভাবে অংশ না নিয়েও তিনি সিনিয়র জাসদ নেতাদের আস্থাভাজনে পরিণত হন। বিশেষ করে জাসদের তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান দাদা’র সাথে গভীর ঘনিষ্টতা তৈরীতে সক্ষম হন তিনি। বর্তমানেও এই গভীর ঘনিষ্টতা বিদ্যমান বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই তিনি সহপাঠি এক পাকিস্তানী ছাত্রীর সাথে ঘনিষ্ট হয়ে তাকে জীবন সঙ্গিনী করে নেন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে তিনি সিরাজুল আলম খানের সহযোগিতা সমর্থন ও পরামর্শে রাজধানীতে ‘‘অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’’ নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এই প্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে স্ত্রীর পরিবারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পান বলে জনশ্রুতি রয়েছে। স্কুলটির সাফল্য তার জীবনে আর্থিক স্বচ্ছলতা এনে দিলে তিনি ক্রমশ উচ্চাভিলাসী হয়ে উঠেন। ১/১১ এর দু’বছরে তিনি বেশ কিছু ছোট বড় তদ্বিরে সফল হয়েছেন মর্মে তথ্য রয়েছে।
ধানের শীষ ছাড়া বগুড়ায় এমপি হওয়া যাবে না এমন বোধ বিশ্বাস থেকে তিনি তারেক রহমানের ঘনিষ্টদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি রাজনৈতিক বিপর্যয়ে পড়ায় বিষয়টি আর বেশিদূর গড়ায়নি।
উল্লেখ্য গত বুধবার দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় ‘যে বাড়িটিকে ঘিরে বগুড়ায় ব্যাপক কৌতুহল’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হলে সর্বমহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মিডিয়া কর্মীসহ পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর লোকজন বাড়িটি দেখতে ছুটে যায় ও এ সম্পর্কে আনুপুর্বিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে। বাড়ির কেয়ার টেকার ও অন্যান্য কর্মকর্তার কাছ থেকে ফোন নম্বর সংগ্রহ করে বার বার সাখাওয়াত হোসেন টুটুলের ফোন নম্বরে রিং দিলেও ইনকিলাবসহ কারো ফোনই রিসিভ করেননি তিনি। তার ঘনিষ্টদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে জানা যায়, তিনি এরকমই নিজের প্রয়োজন ছাড়া কারো ফোন ধরেন না, কারো সাথে কথা বার্তা বলেন না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন