আবু হেনা মুক্তি : খুলছে খুলনাঞ্চলের বাণিজ্য দুয়ার। মংলা বন্দর ফুলে ফলে সুশোভিত হবে এমন প্রয়াস চলছে। নেপাল ও ভুটান মংলা বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে রেলযোগে পণ্য আমদানী ও রপ্তানী করতে পারবে।
সে লক্ষ্যে আগামী দু’মাসের মধ্যে ভারত বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগে খুলনা-মংলা রেল লাইন নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে। শিগগিরই ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলে প্রকল্পের জমি ন্যস্ত হবে রেলওয়ের কাছে। অন্যদিকে দ্রুত গতিতে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। খুলনার বটিয়াঘাটা ও তেরখাদার দু’টি এলাকাকে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। সে লক্ষ্যে কাজও চলছে দ্রুত। সব মিলিয়ে মংলাকে গতিশীল করার মানসে সরকার বাস্তবমুখী প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ত্বরান্বিত করছে।
সূত্রমতে, মংলা বন্দরের মালামাল যাতে চট্টগ্রামের মত সহজে এবং দ্রুততার সাথে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যায়। সে লক্ষ্যে খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ কাজ চলতি বছরেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। খুলনা মংলা রেল লাইন প্রকল্পের কাজ যাতে যথাসময়ে সমাপ্ত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রকল্পকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি কাজ করতে গিয়ে অন্যটির যাতে কোন ক্ষতি না হয় কিম্বা অযথা সময় ক্ষেপণ না হয় সে দিকটি মাথায় রেখেছে প্রকৌশলীরা। রেল সেতু, রেল লাইন এবং টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং এই তিন ভাগে বিভক্ত করে প্রায় ৭৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। শুধুমাত্র খুলনা থেকেই ৪০১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৭৩ একর এবং বাগেরহাট জেলা থেকে ২৭৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে খুলনা মহানগরীর যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। পাশাপাশি যখন পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়ন হবে, তখন এই রেললাইনকে ঘিরে এ অঞ্চল হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ ইকনোমিক জোন। এখন যে পরিমাণ রাজস্ব মংলা বন্দর থেকে পাওয়া যাচ্ছে ভবিষ্যতে তার পরিমাণ অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া যশোর পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের মাধ্যমে খুলনার সাথে সরাসরি রেল যোগাযোগ সংযুক্ত হবে। পদ্মা সেতু আর খুলনা-মংলা রেল লাইন হবে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক স্বর্ণ দুয়ার রচনার ক্ষেত্রে এক বিশেষ মাইল ফলক। ফুলতলা থেকে মংলা পর্যন্ত ৬৪.৭৫ কি.মি. লম্বা রেল লাইনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮শ’ ১ কোটি ৬১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রকল্পের বিপরীতে ভারত থেকে ঋণ পাওয়া যাবে ২ হাজার ৩শ’ ৭১ কোটি ৩৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আর বাংলাদেশ সরকার এ প্রকল্পে ব্যয় করবে ১ হাজার ৪শ’ ৩০ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
এদিকে, এক সময়কার শিল্প ও বন্দর নগরী বলে খ্যাত খুলনার জৌলুস ফিরিয়ে আনতে খুলনায় দু’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দু’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত করতে পারলে তা আঞ্চলিক ও জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বেজা এ লক্ষ্যে খুলনার বটিয়াঘাটার তেতুলতলা এবং তেরখাদার কোলাকে বেছে নিয়েছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং নতুন বিনিয়োগ ছাড়াও এই অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আর এর সাথে যুক্ত হবে আশীর্বাদ হিসেবে পদ্মা সেতু।
অপরদিকে, বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের মানুষ তাদের পড়তি ব্যবসা পুনরুদ্ধারে চেয়ে আছে পদ্মা সেতু, খুলনা-মংলা রেল লাইন চালু ও খুলনার দু’টি অর্থনৈতিক জোনের সফল বাস্তবায়নের দিকে। ইতোমধ্যে ভারতের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল লি:-এর সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এই প্রকল্পে ৮টি ষ্টেশন থাকবে। এছাড়া রেললাইনের পাশাপাশি ২১ কি.মি. লুপ লাইন নির্মাণ করা হবে। কাজ শুরু ৪২ মাসের মধ্যে নির্মাণ শেষ হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে খুলনাঞ্চলের ৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের হারানো যৌবন ফিরে পাবে। গতিশীল হবে এ অঞ্চলের সরকারী বেসরকারী পাটকল ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে চাঙ্গা হবে এ অঞ্চলের ভঙ্গুর অর্থনীতি।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সমন্বয় সংগ্রাম কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান ইনকিলাবকে বলেন, অবহেলিত খুলনাঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে সরকারের এই প্রয়াস আমাদেরই আন্দোলনের ফসল। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। মংলা বন্দরকে গতিশীল করার দায়িত্ব এ অঞ্চলের আমজনতার। প্রকল্পগুলো যাতে যথাসময়ে বাস্তবায়িত হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন