স্টাফ রিপোর্টার : চলমান সংকট উত্তরণে সহযোগিতা করতে সরকারের সাথে সংলাপ চায় বিএনপি। গতকাল দুপুরে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তাকে ‘সাধুবাদ’ জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এই প্রত্যাশার কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা প্রথমত সৈয়দ আশরাফকে ধন্যবাদ দেই। আমরা কখনোই জাতীয় অস্থিরতা পছন্দ করি না এবং অগ্রগতির জন্য অস্থিরতা আমরা সময়োপযোগী বলে মনে করি না। কিন্তু জাতীয় সংকটকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার সকল পথ সহজভাবে গ্রহণ করে বিরোধী দলের সঙ্গে অনতিবিলম্বে আলোচনায় বসার উদ্যোগ নেবেনÑ এটা আমরা প্রত্যাশা করি।
দুদু বলেন, আমরা গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যে সৈয়দ আশরাফকে এবং তার নেত্রীকে সহযোগিতা করতে চাই। আমাদের নেত্রী বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে দমনের জন্য দরকার জাতীয় ঐক্য। আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছি। আমাদের নেত্রী চেয়েছেন, সেই দিকটায় আমি সৈয়দ আশরাফের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট। উনি সবার সঙ্গে আলাপ করেই সেটা দেন। তিনি যে ইলেকশন কমিশন গঠন করবেন সেটাই হবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। আমরা যদি হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে অর্থাৎ সবকিছু নিয়েই বিতর্ক করি তাহলে আমরা যাব কোথায়? আমাদের মাথা ঠেকানোর জায়গা কোথায়? অহেতুক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে যদি বিতর্ক করি, তাহলে সভ্যতা থাকবে না, আইন থাকবে না। এই দেশে তাহলে গণতন্ত্র থাকবে?
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। পাঁচ সদস্যের নতুন কমিশন নিয়োগে আগের মত এবারও ‘সার্চ কমিটি’ করা হচ্ছে বলে ইতোমধ্যে আভাস দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
গত মঙ্গলবার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সার্চ কমিটি করেন, আর যাই করেন, জনমতের বাইরে গিয়ে কোনো কমিটি এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।
সাদেক হোসেন খোকার বাড়িসহ সম্পদ বাজেয়াপ্ত প্রসঙ্গে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার বাড়ি ও সম্পদ সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে বলে এই মর্মে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। দেশবাসীসহ আমরা লক্ষ্য করছি যে, বিচার বিভাগকে কিভাবে সরকার প্রভাবিত করছে? হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে সরকার এই মামলা করেছে এবং তার অনুপস্থিতিতে একতরফা রায় প্রদান করা হয়েছে। সাদেক হোসেন খোকার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের কালিমা লেপনের হীন উদ্দেশ্যেই এটি একটি রাজনৈতিক নগ্নতার বহিঃপ্রকাশ।
ভাইস-চেয়ারম্যান দুদু বলেন, সাবেক মেয়র, সাবেক মন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন পুরোধা সাদেক হোসেন খোকার যে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, মূলত এতো সম্পদের মালিক তিনি নন। এটি জনাব সাদেক হোসেন খোকাও একটি জাতীয় পত্রিকায় নিজে বলেছেন। তিনি একটি কোম্পানির ৭ জন শেয়ার হোল্ডারের একজন, তিনি একটি ক্ষুদ্র অংশের মালিক মাত্র।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় অভিযোগ গঠনের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে তড়িঘড়ি করে আমাদের দলের মহাসচিবের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, পহেলা ডিসেম্বর থেকে এই মামলার বিচার শুরু হবে। আমরা মনে করি, এহেন কর্মকা- উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক।
এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস-চেয়ারম্যানসহ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির কথাও তুলে ধরেন শামসুজ্জামান দুদু।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, আব্দুুস সালাম আজাদ, আব্দুুল আউয়াল খান, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান খান শিমুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন