দিনাজপুর সদর উপজেলার চেড়াডাঙ্গি এলাকার বাসিন্দা প্রসিদ্ধ ফল ব্যবসায়ী রশিদুল ইসলাম বললেন, ভাই আম লাগলে বলবেন-দাম যাই দিবেন তাই নিবো। যদি মনে করেন দাম দু’ মাস পরে দেবেন তাতেও সমস্যা নেই। হঠাৎ কি হলো যে এক প্রকার বিনা টাকাতেই আম দিতে চাচ্ছেন তিনি।
তিনি জানালেন, যা পাবো তাই লাভ কেননা গত ১৫ জুন থেকে দিনাজপুরে কঠোর লকডাউনের পর থেকে আম কেনার লোক নেই। যে যেভাবে পারছে আম বিক্রি করে টাকা উঠানোর চেষ্টা করছে। যা বিক্রি হচ্ছে তা দিয়ে গাছ থেকে আম নামানো, পরিবহনসহ দোকান ভাড়াই উঠছে না। সামনে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের খবরে অবস্থা আরো খারাপ। বলতে পারেন আমের বাজারে ধস নেমে গেছে। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি আমের দাম ৭০ শতাংশ কমে গেছে। দিনাজপুরের বিখ্যাত মিশ্রিভোগ, গোপালভোগ, ছাতাপড়া, বৃন্দাবনি জাতের অতি উন্নতমানের আম ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চার দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। অন্যান্য আম বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫-১০ টাকায়।
দিনাজপুরের মিশ্রিভোগ-গোপালভোগ, ল্যাংড়া ঠাকুরগাঁওয়ের বৃন্দাবনি আম ও বেদেনা লিচুর সুনাম গত কয়েক যুগের। হালে গত এক দশকে বেদেনার জায়গায় স্থান করে নিয়েছে চায়না-থ্রি লিচু। আম ও লিচুর কারণে দিনাজপুরে গড়ে উঠে আন্তর্জাতিক মানের জুস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণের কারখানা। মিষ্টি আর রসালো ফলের জন্য প্রতিবছরই কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়ে থাকে। দিনাজপুর অঞ্চলে সকল ফসলই লেট ভ্যারাইটি হিসাবে পরিচিত। ফলে সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বা রাজশাহীর অনেক পরেই দিনাজপুরে সকল ফসল দেরীতে বাজারে আসে।
গত বছর দেশে করোনা মহামারি ও রমজান মাসে লিচুতে পাক ধরায় ব্যবসায়ীরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও ধস নামেনি। এবার ফলন কম হওয়ার পরও করোনাকালীন সময়ে সরকারের বাজার ও পরিবহন ব্যবস্থাকে বিশেষ সুযোগ দেয়ায় লিচুর ভাল দাম পেয়েছিলো কৃষক ও ব্যবসায়ী। কিন্তু ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমিত হওয়ায় সীমান্তবর্তী দিনাজপুর জেলায় গত ১৫ জুন বিশেষ কঠোর লকডাউন ঘোষণা হয়। এতে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় সাধারণ দোকানপাট ও গণপরিবহন। আমের বাজারে এর প্রভাব পড়ে কমতে থাকে দাম। কিন্তু দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় একেবারে মাথায় হাত পড়েছে আম ব্যবসায়ীদের। এখনও দিনাজপুরের বাগানগুলোতে আছে বৃন্দাবনি, ছাতাপরা আম। এরপরে আসবে সুরমাই ফজলি ও কদুয়া ফজলি।
দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলার বাগানগুলোতে এখনো প্রচুর আম রয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিনে আমের বাজারে ধস নামায় ফড়িয়ারা বাগান মালিক ও পাহাড়াদারদের হাতে গাছের ফল ছেড়ে পালিয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাজারে আম নিয়ে আসছে। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় পানির দামে আম বিক্রি করে বাড়ি ফিরছে। ১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন শুরু হতে যাচ্ছে তাই জেলার বাহিরে আম যাচ্ছে না বললেই চলে। কোচ ও কুরিয়ার আগে ভাগেই সাবধানতা অবলম্বন করেছে। বুকিং নেয়া কমিয়ে দিয়েছে। কঠোর লকডাউনের এক দিন আগে থেকেই আম বুকিং নেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
ফল ব্যাবসায়ী রশিদুল জানান, তার ৩৬ টি বাগানের ফল রয়েছে। গাছ থেকে আম নামানোর সাহস পাচ্ছেন না তিনি। প্রয়োজনে আম ঝরে পড়ে নষ্ট হয়ে যাবে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে কিন্তু তারপরও কোন উপায় নেই। এ অবস্থায় সরকারি পদক্ষেপের দিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন