রাজধানীর মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গতকাল রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত ছয়জন নিহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়া আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট এবং আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মগবাজার ওয়্যারলেস গেট এলাকার আড়ংয়ের শো-রুমের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্সসহ ১৪টি ইউনিট কাজ করে।
রমনা ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার ফয়সালুর রহমান বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে বিস্ফোরণের কথা প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হলেও ঠিক কোথায় থেকে বিস্ফোরণ ঘটলো তা তাৎক্ষণিভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বিস্ফোরণ ভবনটির নিচতলার ভেতরেই ঘটেছে। ওই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে মোট ছয়জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ও নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। আহতদের মধ্যে ঢামেক হাসপাতালে ৩২ জনকে এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০ জনকে ভর্তি করা হয়।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন এস এম আইয়ুব হোসেন বলেন, মগবাজারের ঘটনায় বার্ন ইউনিটে ১০ জন ভর্তি হয়েছেন। জরুরি বিভাগে আরও অনেক রোগী আসছেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্সসহ ১৪টি ইউনিট কাজ করছে।
তিনি আরো জানান, বিস্ফোরণে পথচারী, গাড়িতে থাকা অনেকেই আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের শব্দে সড়কে থাকা গাড়ির গøাস ভেঙে গেছে। ভবনটিতে একটি মিষ্টির দোকানসহ কয়েকটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি রমনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। এছাড়াও পথচারীরা আহতদের হাসপাতালে নিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী পথচারী জান্নাত আরা বলেন, ঘটনাস্থলের অদূরে একটি ভবনে নীচে তিন দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় বিকট তিনি শব্দ শুনতে পান। তিনি যে ভবনের নিচে ছিলেন, সেটির কিছু পলেস্তারা ধসে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের ওপর পড়ে। এরপর ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। সেই আগুন উড়ালসড়কের ওপরে ও নিচে যাত্রীবাহী বাসে ছড়িয়ে পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মগবাজার ওয়ারলেসের উল্টো দিকে একটি তিন তলা ভবনের নিচ তলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভবরটির নিচে এসি এবং গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল।
রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে এক শিশু, এক নারী ও এক পুরুষ রয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ৩২ জন। আসলে কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, আড়ং সেন্টার ভবনের নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত ওয়ালের যত গ¬াস আছে তার সবই ভেঙে পড়েছে। আড়ংয়ের নিরাপত্তা কর্মী মাহবুব বলেন, আমাদের ভবনে কোনো বিস্ফোরণ ঘটেনি। সড়কের দক্ষিণ দিকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আর সেই শব্দে আশেপাশের ভবনের গ¬াস ভেঙে পড়ে।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, ৭৯ আউটার সার্কুলার রোডের বিশাল সেন্টারের নিচতলায় বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আশেপাশের ভবনগুলোর গ¬াস ভেঙে যায়। বিস্ফোরণের সময় বিশাল সেন্টারের সামনে দিয়ে যেসব গাড়ি চলাচল করছিল সেইসব গাড়ির জানালার কাচ ভেঙে রাস্তায় পড়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, যাত্রীবাহী ওইসব বাসের যাত্রীদের অনেকেই আহত হয়ে থাকতে পারেন।
হাসপাতালে শুধু কান্না আর ছুটোছুটি: মগবাজারে বিস্ফোরণে আহতদের স্বজনদের ছুটোছুটিতে আর কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। কিছুক্ষণ পর পর সাইরেন বাজিয়ে মগবাজার থেকে অ্যাম্বুলেন্স আসছে আহতদের নিয়ে। গতকাল রাত ১০টার দিকে এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্য চোখে পড়ে হাসপাতালটিতে। আহতদের হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স এলেই স্বজনদের কান্না আর ছুটোছুটি শুরু হচ্ছে। তাদের আহাজারি ও কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে আছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে হাকিম জানিয়েছেন, হাসপাতালটিতে জরুরি বিভাগে ৩৯ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। বার্ন ইউনিটে অন্তত ১০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন