ইনকিলাব ডেস্ক : ইরাক এ বছরের শেষে মসুল পুনর্দখলের অঙ্গীকার করেছে। ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা আগামী মাসে একটি অভিযান শুরু হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন। কিন্তু যখনি শুরু হোক, জিহাদিদের শক্ত ঘাঁটি মসুল পুনর্দখলের অভিযান মারাত্মক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) যোদ্ধারা ২০১৪ সালের জুন মাসে মসুল দখল করে। খবর এএফপি।
ইরাকের দ্বিতীয় বৃহৎ এ নগরীতে প্রবেশ ও পুনর্দখল করার আগে একগুচ্ছ জটিল সামরিক, রাজনৈতিক ও মানবিক চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। তার অর্থ, মসুল পুনর্দখল অভিযান যদি আগামী মাসে শুরু হয়ও তা শেষ হতে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে।
ইরাকি নিরাপত্তা বিশ্লেষক জসিম হানুন বলেন, মসুলের যুদ্ধে সকল পর্যায়ে মারাত্মক চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে। তার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সামরিক ইউনিটগুলোর মধ্যে সমন্বয়। মসুল অভিযানে থাকবে ইরাকি সৈন্য ও পুলিশ, সরকারপন্থী মিলিশিয়ারা ও যোদ্ধারা যারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগে একসাথে কাজ করেনি এবং তাদের ঐক্যবদ্ধ কমান্ড কাঠামোও নেই।
মসুল পুনর্দখলের চূড়ান্ত অভিযান কখন শুরু হবে সে বিষয়ে সাম্প্রতিক জল্পনা-কল্পনাকে ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা উৎসাহিত করলেও প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল এবাদি বলেছেন, তিনি বিস্ময় বজায় রাখতে চান।
মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল জো ডানফোর্ড বলেন, অক্টোবরের প্রথম নাগাদ ইরাকিবাহিনী আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হবে। অন্যদিকে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল জো ভোটেল বলেন, বছরের শেষ নাগাদ মসুল পুনর্দখল করা হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে এখনো মারাত্মক মানবিক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে যা মোকাবেলা করতে হবে। যেমনঃ জাতিসংঘ বলছে, মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলো সামরিক অভিযানের ফলে সৃষ্ট হতে যাওয়া প্রভাব মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিতে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে দৌঁড়াচ্ছে। মসুল অভিযান শুরু হলে আইএসের প্রতি বিদ্বিষ্ট ও কখনো কখনো প্রতিদ্বন্দ্বী ইরাকিবাহিনীকে আইএসের প্রতিরক্ষার ভিতর দিয়ে অগ্রসর হতে হবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের মসুলে পৌঁছতে ডজন ডজন কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে হবে। তখন, মসুলের ক্ষেত্রে যদি ইরাকের পূর্ববর্তী অভিযানগুলোর মত একই কৌশল অনুসরণ করা হয়, তাহলে তারা হামলার আগে মসুল ঘেরাও ও নগরীকে অবরুদ্ধ করতে চাইবে।
মঙ্গলবার মসুলের দক্ষিণে মার্কিন বাহিনীর উপর সম্ভাব্য মাস্টার্ড গ্যাস হামলা ও অতীতে কুর্দিদের উপর নিশ্চিত রাসায়নিক অস্ত্র হামলা হওয়ায় উদ্বেগ রয়েছে যে মসুলের প্রতিরক্ষার শেষ পন্থা হিসেবে এ কৌশল গ্রহণ করতে পারে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের জঙ্গি বিমানগুলো গত সপ্তাহে আইএসের ব্যবহৃত রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির একটি সন্দেহজনক কারখানা ধ্বংস করে দিয়েছে।
তবে রাসায়নিক অস্ত্র হামলায় এ পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি সীমিত। বরং আইএসের বোমা ও বুলেট তার চেয়ে অনেক বেশী প্রাণঘাতী।
ডানফোর্ড বলেন, মসুল অভিযানের সময় নির্ধারণ এখন শুধু প্রধানমন্ত্রী এবাদির রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়, তবে বান্তবে পরিস্থিতি অনেক বেশী জটিল। এ অভিযানে কুর্দি যোদ্ধারা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে অথচ তারাএবাদির কমান্ডের অধীন নয়। তার অর্থ এক্ষেত্রে কুর্দি আঞ্চলিক সরকারের সিদ্ধান্ত দরকার হবে। আর সে জন্য মসুল বিজয় পরবর্তী এলাকা ভাগাভাগি বিষয়ে বাগদাদ ও কুর্দিদের মধ্যে একটি চুক্তি, কমপক্ষে প্রাথমিক বোঝাপড়া হতে হবে। কুর্দিরা এমন কিছু এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায় যা বাগদাদ নিজেদের বলে দাবি করে।
এ অভিযানে ইরান সমর্থিত হাশেদ আল শাবি নামে পরিচিত আধা সামরিকবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কেও অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ সব বাহিনী নামে মাত্র এবাদির অধীন, কার্যত সর্বাধিক ক্ষমতাশালী গ্রুপগুলো তেহরানের স্বায়ত্ত শাসন ও সমর্থনে পরিচালিত হয়।
সুন্নী অধ্যুষিত মসুলে তাদের প্রবেশের বিরোধী সুন্নী রাজনীতিকরা।
মসুল অভিযান নিয়ে সম্প্রতি আবার আলোচনা শুরু হলেও এর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে কয়েক মাস আগেই। ইরাক মার্চে ঘোষণা করে যে তারা মসুল পুনর্দখল অভিযান শুরু করেছে। অন্যদিকে জোটের শীর্ষ মার্কিন দূত ব্রেট ম্যাকগার্ক কয়েকবার বলেছেন যে মসুল অভিযান শুরুর পথে।
মসুল যদি পুনর্দখল হয়ও, আইএস বিরোধী লড়াই শেষ হওয়া অনেক দূরে। তারা ইরাকে তাদের রাষ্ট্র হারানোর পর সশস্ত্র হামলার কৌশল গ্রহণ করতে পারে যেমন বেসামরিক লোকদের উপর বোমা-হামলা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আকস্মিক হামলা ও পলায়ন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন