করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মোটরসাইকেলে চালক ছাড়া অন্য আরোহী বহন করা যাবে না মর্মে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তারপরও রাজধানীতে মোটরসাইকেল চালকরা বেপরোয়া চলাচল করছেন। নির্দশনা অমান্য করে রাজধানীর পল্টন এলাকায় এক পুলিশ সদস্যের গায়ে মোটরসাইকেল উঠিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ সময় পুলিশ সদস্য ও ওই মোটরসাইকেলের চালক আহত হয়েছেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে পল্টন জিরো পয়েন্ট মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, গতকাল সকালে পল্টন জিরো পয়েন্ট এলাকায় চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করছিলেন পুলিশ সদস্যরা। ওই সময় চেকপোস্টে সিগন্যাল অমান্য করে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার সময় দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্যের গায়ে মোটরসাইকেল উঠিয়ে দিয়েছেন ইউসুফ নামে এক চালক। পরে আহত ওই পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলের চালক ইউসুফকে নিজেও আহত হয়েছেন। পরে তাকে পুলিশি হেফাজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহত মোটরসাইকেল চালক ইউসুফ বলেন, যাত্রী নিয়ে নতুন বাজার থেকে মতিঝিল যাচ্ছিলাম। পল্টন জিরো পয়েন্ট এলাকায় এলে পুলিশ সিগন্যাল দেয়। জরিমানা থেকে বাঁচতে দ্রুত পালাতে গিয়ে এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে যাই। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার পর আমার সঙ্গে থাকা যাত্রী পালিয়ে যান। পরে পুলিশ আমাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার কাঁধের ডান জয়েন্ট ফেটে গেছে। ভয়ে পালাতে গিয়েই এমন ঘটনা ঘটেছে।
পল্টন থানার এসআই কাজী আশরাফুল বলেন, করোনার কারণে সরকারি বিধিনিষেধ চলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মোটরসাইকেলে দুজন যাতায়াত নিষিদ্ধ। ওই চালক মোটরসাইকেলে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন। পুলিশ সিগন্যাল দিলে তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশকে ধাক্কা দিলে চালক এবং পুলিশ দুইজনই আহত হন। তিনি আরও বলেন, ওই পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে নেয়া হয়। আর চালককে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
ঢামেক হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া বলেন, পল্টন জিরো পয়েন্ট এলাকায় সিগন্যাল অমান্য করে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল পুলিশের ওপর তুলে দেন ওই চালক। পল্টন থানা পুলিশ তাকে আটক করে ঢামেকে নিয়ে এসেছে। এখানে তার চিকিৎসা চলছে।
এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, লকডাউনের মধ্যে মোটরসাইকেলে চালকের সাথে পরিচিত ব্যক্তি রাইড শেয়ার করছে। অথবা কেউ কেউ পেশাগত কারণেও রাইড শেয়ার করছে। যার ফলে একই ব্যবহৃত হেলমেট বারবার বিভিন্ন মানুষজন ব্যবহার করছে। এতে করোনাভাইরাসের সংক্রমনের ঝুঁকি বাড়ছে। এমতাবস্থায় করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভের এই ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের সময়ে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় অতীব জরুরী প্রয়োজনে রাজধানীতে ঢাকা মহানগর পুলিশ চালক ব্যতীত অন্য আরোহী নিয়ে মোটরসাইকেলে চলাচলে নিরুৎসাহিত করছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে রিকশায় যাতায়াতের জন্য অনুরোধ করা হয়। তারপরও রাজধানীজুরে দাপটের সঙ্গে চলাচল করছে মোটরসাইকেল। আর গণপরিবহন না থাকায় মানুষ হেঁটে যাতায়াতের পাশাপাশি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে করে অফিসে যাতেও দেখা গেছে। সেক্ষেত্রে তাদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। আর কোথাও কোথায় মোটরসাইকেলে করে তিনজন চলাচল করছেন। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, মতিঝিল, পল্টন, মালিবাগ, শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ফার্মগেটের বাসিন্দা রহমত আলী জানান, তিনি মতিঝিল একটি বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন। সেই সুবাধে অন্য সময়ে তিনি গণপরিবহনে যাতায়াত করেন। তখন ভাড়া লাগে ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর মোটরসাইকেলে এলে সেটা ৭০ থেকে ৮০ টাকা খরচ হতো। কিন্তু গতকাল মোটরসাইকেলে দুইশত টাকা দিয়ে অফিসে গিয়েছেন।
এদিকে, গতকাল রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে সড়কে চলাচলকারী মোটরসাইকেলের ওপর ট্রাফিক পুলিশের কঠোর নজরদারি রাখতে দেখা যায়। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় পুলিশ চেকপোস্টে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ শরীফ বলেন, মোটরসাইকেলে সহকর্মীকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাকে দীর্ঘ দুই ঘণ্টা ধরে আটকে রাখা হয়। এরপর এখন আবার ১২শ টাকার মামলা দিয়েছে। আমি অফিসেও যেতে পারলাম না আর এখানেও মামলা খেতে হলো। সব কার্যক্রম খোলা রেখে লকডাউন দেয়ার কোনো মানে হয় না। এটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য কষ্ট ছাড়া আর কিছুই না।
তবে কাউকে হয়রানি নয় কেবল সরকারি নির্দেশনার যথার্থ বাস্তবায়নে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান ট্রাফিক পুলিশের ধানমন্ডি জোনের ডিসি জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির অবনতি রোধে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব নির্দেশনা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে আমরা সেটি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। প্রজ্ঞাপনে মোটরসাইকেলে চালক ছাড়া আরোহী বহনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও নির্দেশনা অমান্য করে যারা এমনটি করছে সেসব ক্ষেত্রে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এডিসি ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার সীমিত পরিসরে লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সারা দেশে পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ছাড়া সব গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক নিয়মিত টহলের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মোটরসাইকেলের চালক ছাড়া কোনো আরোহীকে নেয়া যাবে না। তবে যারা নির্দেশনা অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন